ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ এশীয় স্পীকার সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নের অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

দক্ষিণ এশীয় স্পীকার সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নের অঙ্গীকার

সংসদ রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর স্পীকারদের সম্মেলন। সংস্কৃতি, ভৌগোলিক এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থানে প্রায় একই অবস্থানে থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বিভিন্ন ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন দেশগুলোর স্পীকাররা। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো-ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় শনিবার ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী দক্ষিণ এশীয় স্পীকারদের সম্মেলন হোটেল সোনারগাঁওয়ে শুরু হয়। আইপিইউয়ের প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আফগানিস্তানের হাউস অব দি পিপলের স্পীকার আব্দুল রাউফ ইবরাহিমি, ভুটানের ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলির স্পীকার জিগমে জংপো, ভারতের লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন এবং মালদ্বীপের মজলিসের স্পীকার আবদুল্লাহ মাসিহ মোহাম্মেদ বক্তৃতা করেন। শ্রীলঙ্কার ডেপুটি স্পীকার পথে থাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। আর পাকিস্তান ও নেপালের স্পীকাররা আমন্ত্রিত হলেও তারা সম্মেলনে অংশ নেননি। বক্তারা সম্মেলনকে এসডিজি অর্জনের সেতুবন্ধন ফোরাম উল্লেখ করে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। তাই এই ইস্যুতে সারা বিশ্বকে তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান, অভিজ্ঞতা বিনিময়, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং প্রত্যেক দেশের উত্তম চর্চাগুলো বিনিময়ের মাধ্যমে এসডিজি অর্জনে কাজ করতে হবে। সম্মেলনের আলোচনায় পাঁচটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ এশিয়ায় এসডিজির গুরুত্ব, এসডিজি বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনায় পার্লামেন্টগুলোর ভূমিকা, এসডিজির স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি সংক্রান্ত লক্ষ্য-৩ এর অধীন সুযোগ, তামাক মহামারীর বর্তমান অবস্থা ও নিয়ন্ত্রণে কৌশল নির্ধারণ, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় নীতিকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সচিব, মিশন প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্বাগত বক্তৃতায় বলেন, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের অভিজ্ঞতার আলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই এসডিজি অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, স্ব স্ব দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহযোগিতা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে তিনি এসডিজি অর্জন নিশ্চিত করতে নিজ নিজ দেশের সংসদ সদস্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যু ও লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান। সম্মেলনে ভারতের স্পীকার সুমিত্রা মহাজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। এখন তার সুফল ভোগ করছেন তারা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তার নেতৃত্বেই এই দেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। আইপিইউ ও সিপিএর মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচিত হওয়ায় তিনি অভিবাদন জানান। তিনি সিপিএর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ‘ছোটবোন’ আখ্যায়িত করে অভিবাদন জানান। একইভাবে আইপিইউয়ের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীকে ‘ভাই’ সম্বোধন করেন। তিনি এ সাফল্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, এটি সত্যিই গর্বের বিষয়। বাংলাদেশ যে উন্নয়ন করছে এটি তার প্রমাণ। ভারতের স্পীকার বলেন, একবিংশ শতাব্দী হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একে অপরের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব হবে। এ দেশগুলো খুবই জনবহুল। এ কারণে এসডিজি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো শুধু ইতিহাস শেয়ার করে। আমাদের সংস্কৃতি, ভৌগোলিক এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থান প্রায় একই। এজন্য এ দেশগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন মালদ্বীপের স্পীকার আবদুল্লাহ মাসিহ মোহাম্মেদ। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এমডিজির অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। সম্মেলনের ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, এসডিজির সফলতা সারা বিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আইপিইউর সদস্য দেশগুলো এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ। আইপিইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করতে পারে। ধারণাপত্রে আরও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কার ৩৮৪ মিলিয়ন লোক ধূমপান করে। যা বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্বে টোবাকো ব্যবহারকারী রয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন। শুধু বাংলাদেশ এবং ভারতেই প্রতিবছর ১ দশমিক ১ মিলিয়ন লোক ধূমপানের কারণে মারা যায়। এজন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের শেষ দিন রবিবার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
×