ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি বছরও দেশটির বাজেটে বড় ঘাটতির আশঙ্কা

রাজনৈতিক-আর্থিক ঝুঁকি সত্ত্বেও পূর্ণ তেল উৎপাদন সৌদির

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

রাজনৈতিক-আর্থিক ঝুঁকি সত্ত্বেও পূর্ণ তেল উৎপাদন সৌদির

একে সৌদি কৌশলই বলা যায়। ১৪ মাস আগে যখন বিশ্বে তেলের দাম পড়তে শুরু করে তখন সৌদি আরবের পীড়াপীড়িতে ওপেক বিশ্ব পেট্রোলিয়াম শিল্পকে জানিয়ে দেয় যে, সদস্য দেশগুলো যেন তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কমিয়ে না দেয়। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ২০১৪ সালের নবেম্বরে অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস (ওপেক)-এর বৈঠকে সংস্থাটির মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল-বাদরি বলেছিলেন, আমরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা দেখতে চাই, বাজার কেমন আচরণ করে। তখন থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রফতানিকারক সৌদি আরবসহ গুটিকয়েক দেশ বাজারের আচরণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পেরেছিল। অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক সরবরাহের ফলে তেলের দামে ধস নামে এবং এখনও সৌদি আরব কার্যত পূর্ণ তেল উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। উৎপাদন কমাতে ওপেকের অন্য বড় সদস্যদের চাপ সত্ত্বেও সৌদি আরবের পারস্য উপসাগরীয় ওপেক মিত্রদেশ কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারকে একই কাজ করতে রাজি করিয়েছে রিয়াদ। এটি সৌদি আরবের একটি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। যার ফলে ইতোমধ্যে সৌদির অর্থনীতিতে টান পড়েছে এবং বাসস্থান ভর্তুকি ও সস্তা জ্বালানির মতো সামাজিক কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে দেশটির সামর্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। নিউইয়র্কের রুবিনি গ্লোবাল ইকোনমিক্সের বিশ্লেষক র‌্যাচেল জিমবা বলেছেন, সৌদি সরকারের রাজস্বের ৭০ শতাংশের বেশি আসে তেল থেকে। সৌদি আরবের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬৩ হাজার কোটি ডলার সত্ত্বেও তারা এক প্রতিমাসে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি ডলার হারে খরচ করছে। কিন্তু সৌদি আরবকে তেলের মূল্য নিয়ে লড়াইয়ে জয়ী হতে শুধুমাত্র ইরান, ইরাক ও ভেনিজুয়েলার মতো ওপেক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর বিরুদ্ধে নয়, রাশিয়ার মতো ওপেক সদস্য নয় এমন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শেল-ওয়েল উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও জয়ী হতে হবে। মার্কিন এই কোম্পানিগুলো বিশ্বব্যাপী তেলের অতিরিক্ত সরবরাহে ভূমিকা রেখেছে। সৌদি আরবের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছর ১০ হাজার ডলার কমে গেছে এবং ২০১৭ সালে তা আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তেলের মূল্য আরও কমে গেলে বাজট ঘাটতি পূরণে চেষ্টা করবে দেশটি। চলতি বছরও দেশটির বাজেটে বড় ধরনের ঘাটতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেক্সিকো ও কানাডা উপকূলে সমুদ্রের গভীর থেকে তেল উত্তোলনের নতুন প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একই সময়ে ইরাকও আরও বেশি করে তেল উৎপাদন শুরু করেছে। আর পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরমাণু চুক্তি কার্যকর হওয়ায় ইরান অন্যতম প্রধান তেল রফতানিকারক হয়ে উঠবে। তেলের এমন ছড়াছড়িতে সৌদি আশঙ্কা করছে যে, তেলের উৎপাদন কমিয়ে কোন কাজ হবে না। বরং মার্কেটে তাদের শেয়ারের ক্ষতি হবে। বিশ্বে উৎপাদিত নয় ব্যারেল তেলের মধ্যে এক ব্যারেল সৌদি আরবের উৎপাদিত। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস।
×