ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আমি নেতাদের হাতিয়ারই ছিলাম মাত্র, দাবি নাৎসি যুদ্ধাপরাধীর

ইসরাইলে আইখম্যানের প্রাণভিক্ষার চিঠি প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

ইসরাইলে আইখম্যানের প্রাণভিক্ষার চিঠি প্রকাশ

এডলফ আইখম্যান জার্মানিতে লাখ লাখ ইহুদী নিধনে তার ভূমিকার জন্য ইসাইলের বিচারে দোষী সাব্যস্ত ও মৃত্যুদ-ে দ-িত হওয়ার পর প্রাণ ভিক্ষা করেছিলেন। আইখম্যান ১৯৬২ সালের ২৯ মে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে এক চিঠিতে লেখেন, ঘটনার জন্য দায়ী নেতাদের এবং আমার মতো লোকেরা সেদিন নেতাদের হাতের যন্ত্র মাত্র ছিলাম এবং দায়িত্ব পালনে বাধ্য হয়েছি। তাদের মধ্যে পার্থক্য টানার প্রয়োজন রয়েছে। তার এই ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন ইসরাইলের সুপ্রীমকোর্ট প্রত্যাখ্যান করে ওই দিনই। এ নাৎসি যুদ্ধাপরাধী ইহুদী নিধনযজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। আইখম্যান ক্ষমার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ইসরাইলী প্রেসিডেন্ট আইজাক বেনজবির উদ্দেশে বলেছিলেন, আমি দায়বদ্ধ হওয়ার মতো কোন নেতা ছিলাম না। তাই নিজেকে আমি দোষী মনে করি না। ইন্টারন্যাশনাল হলোকাস্ট রিমেমব্র্যান্স ডে বা আন্তর্জাতিক হত্যাযজ্ঞ স্মরণ দিবসের এক অনুষ্ঠানে বুধবার প্রথমবারের মতো এ চিঠি ও অন্য দলিলপত্র জনসমক্ষে তুলে ধরেন ইসরাইলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিউবেন রিভলিন। চিঠিটি জার্মান ভাষায় আইখম্যানের স্বহস্তে লেখা। গবেষকরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্টের আর্কাইভের ফাইলগুলো ডিজিটাইজ করার সময় এ চিঠি ও দলিলগুলো আবিষ্কার করেন। আর্কাইভের ফুটেজে দেখা যায়, জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের জন্য ১৯৬১ সালে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছেন আইখম্যান। এর পরের বছর তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে। আইখম্যান তার চিঠিতে লিখেছেন, তিনি নির্দেশমতো দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এ দায়িত্ব পালন করেছেন নিচের পর্যায়ে। তাই তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অপরাধের জন্য তাকে দায়ী করা উচিত নয়। তিনি লিখেছেন, যুদ্ধচলাকালীন বছরগুলোতে আমি যে সময় ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম তা বুঝতে সক্ষম হননি আমার বিচারকরা। ১৯৬১ সালে এ বিচার চলে চার মাস ধরে। তিনি বলেছেন, এটাও সঠিক নয় যে, আমি কখনও মানবিক আবেগে প্রভাবিত হইনি। মানুষের এ হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে আমি তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কাজে বদলি হওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনে তিনি লিখেছেন, তিনি কেবল নির্দেশ পালন করেছেন। আইখম্যান লাইনটানা কাগজের চিঠিতে স্বাক্ষরের আগে লিখেছেন, মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আমি আদালতের রুলিং ঠিক বুঝতে সক্ষম হচ্ছি না। আমাকে ক্ষমা করার এবং মৃত্যুদ- রদ করার জন্য আপনার অধিকার প্রয়োগের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আইখম্যানের স্ত্রী বেরা ও তার পাঁচ ভাই তার জন্য ক্ষমার আবেদন জানিয়েছিলেন। এ দলিলও বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। টাইপ করা এ চিঠিটি লেখা হয়েছে ১৯৬২ সালের ৩১ মে। মিসেস আইখম্যান জার্মান ভাষায় এক টেলিগ্রামে লিখেছেন, স্ত্রী হিসেবে এবং চার সন্তানের মা হিসেবে তিনি তার স্বামীর জীবন রক্ষার আবেদন জানাচ্ছেন। আইখম্যান ক্ষমা প্রার্থনা করার ঠিক কয়েকদিন পর ১৯৬২ সালের ১ জুন মাঝরাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×