ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিনামূল্যে নেট সেবা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

বিনামূল্যে নেট সেবা

ইন্টারনেট হচ্ছে একালের মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক উদ্ভাবন ও উন্নয়নের কারিগর। বিশ্বে গ্রাম-শহর, ধনী-গরিবের বৈষম্য দ্রুত কমিয়ে দিচ্ছে এই বৈপ্লবিক প্রযুক্তি। ইন্টারনেট হচ্ছে অর্থনীতির ক্রমোন্নতির চালক এবং পেশা ও কর্মক্ষেত্র তৈরির নিয়ামক। ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে বিশাল অর্থনীতি। যারা বৈশ্বিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার সুবিধা পাচ্ছে, তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে দিন বদল করছে। আর যারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদের ভাগ্যে বৈপ্লবিক কোন পরিবর্তন আসছে না। তবে বাস্তবতা এই যে, ইন্টারনেট ব্যবহারে উন্নয়নশীল অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার যে রূপকল্প নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে তৃণমূলে নিখরচায় দূরে থাক, সাশ্রয়ী মূল্যেও ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করছে না। বাংলাদেশের নেট ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার নেপথ্যে দারিদ্র্য প্রধান সমস্যা নেট ব্যবহারের সক্ষমতায় একান্নটি উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তেত্রিশ। এই তথ্যটি ডিজিটাল বাংলাদেশের সেøাগানধারী দেশ হিসেবে সুখকর নয় অথচ এই সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ২৫ ও ভারতের ৩০। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ও ইন্টারনেট ব্যবহারের যে খরচ, এই দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাব থাকার কারণেই নেটের ব্যবহার যে গতিতে বাড়ার কথা, সে গতিতে বাড়ছে না। দেশের ৭৬ শতাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতা দৈনিক দুই ডলার বা ১৫৬ টাকা। ব্রডব্যান্ড নেটের ন্যূনতম একটি সংযোগ নিতে জনপ্রতি খরচ পড়ে ওই টাকার সাত থেকে চৌদ্দ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ টাকার বেশি। এমনিতেই নেট ব্যবহার উপযোগী সেলফোন ও অন্যান্য যন্ত্রের মূল্য এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোন স্তরেই এখন নেটের ব্যবহার ছাড়া ভাবা যায় না। উন্নয়ন ও নেট ব্যবহার এখন পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমডিজির পর জাতিসংঘ যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি ঘোষণা করেছে, সেখানেও নেটসেবা সম্প্রসারণের বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। শিক্ষা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, অর্থনীতি, রাজনীতি ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে নেট ব্যবহার ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বে নেটনির্ভর বিশাল অর্থনীতি গড়ে উঠেছে, যাকে ‘ডিজিটাল ইকোনমি’ বলা হয়। আগামী প্রজন্ম যাতে ডিজিটাল অর্থনীতিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়, তার জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা প্রয়োগ ও ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন এখনই। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে নেট পাওয়ার সুযোগ করে দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন নেটসেবা নিশ্চিত করা। দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নেটসেবার সম্প্রসারণ ও ব্যবহার বাড়ানো খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। এরই মাঝে সবচেয়ে যে সুসংবাদটি আশাবাদী করে তুলছে ব্যবহারকারীদের, তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়ন (আইটিইউ) আগামী এক দশকে সবার জন্য নেট বিনা মূল্যে উন্মুক্ত করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইটিইউ সদস্যভুক্ত ১৯০টি দেশ এতে সম্মতি জানিয়েছে। খুব শীঘ্রই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এই সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হবে। তবে নেটসেবা স্থানীয়করণ করা হলে নেটের বৈশ্বিক উন্নয়নে বিঘœ ঘটবে। তখন আর সেবাটি বিশ্বব্যাপী থাকবে না। নিয়ন্ত্রণ হবে ইন্টারনেট। বিশ্বের কয়েকটি দেশের সরকার নেটসেবা স্থানীয়করণের বিষয়ে যে আগ্রহ দেখিয়েছে, তাতে মানুষের স্বাধীনতা হরণ হবে। যেখানে বিশ্বের ১৯০টি দেশ নেট বিনা মূল্যে প্রদানে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেখানে কয়েকটি সেবা স্থানীয়করণ করলে তা আইটি মুডের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী হবে। যা কারও কাম্য নয়।
×