যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্র শিবিরের দুঃসাহস দিন দিন বেড়েই চলেছে। ধর্মকে পুঁজি করে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়ার নতুন করে নীলনক্সার বিষয়টি সম্প্রতি উদঘাটিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে শিবিরের এই নীলনক্সার কথা জানা যায়। সাতকানিয়া ও লোহাগড়ার ১৯ মসজিদে ঢুকে শিবিরকর্মীরা পবিত্র কোরান শরীফের পাতা ছিঁড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। শেষ পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্র নস্যাত করা গেছে। গ্রেফতার হয়েছে ৪ জন।
ফেসবুকে অপপ্রচার সংক্রান্ত দুটি বিষয় স্মরণ করা যায়। এক, মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রতি নিরীহ মানুষের সহানুভূতি জাগানোর অপচেষ্টায় কম্পিউটার কারসাজির মাধ্যমে ফেসবুকে তারা অপপ্রচার চালিয়েছিল যে, সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা চালিয়ে ১৯টি মন্দির ধ্বংস করা হয়। মন্দিরের আশপাশের অনেক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি যুক্ত করে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে এ হামলা চালানো হয়। পবিত্র কোরান শরীফের পাতা ছিঁড়ে ফেসবুকে প্রচার করা অতিসাম্প্রতিক পরিকল্পনার বিষয়টি শিবিরকর্মীরা স্বীকার করে নেয়ায় এখন অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, রামুর ধ্বংসাত্মক ঘটনার সঙ্গেও শিবির কর্মীরাই জড়িত ছিল। কিছুদিন আগে মহান বিজয় দিবসে শিবির ধৃষ্টতা দেখিয়েছে চট্টগ্রাম কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর তারা সশস্ত্র হামলা চালায়। এত সাহস তারা পায় কোথায়?
শিবির সংগঠনটির নামের আগে ‘ইসলামী’ শব্দটি রয়েছে। অথচ তারাই বিভিন্ন মসজিদে ঢুকে কোরান শরীফের পাতা ছিঁড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের পাতা ছিঁড়ার মতো ধর্ম অবমাননার কাজটি যারা করে তাদের মুখে ইসলামের কথা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু কি হতে পারে? দেশের প্রগতিশীল মহল বহুদিন আগে থেকেই ফেসবুকে উগ্র সাম্প্রদায়িক ‘বাঁশের কেল্লা’ পেজের অপসারণ চাইছিলেন। আটককৃত শিবির কর্মীদের স্বীকারোক্তি থেকে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে ফেসবুকের ওই পেজটি তারা ব্যবহার করছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অভিপ্রায় থেকে।
ইন্টারনেট মানুষের সামনে খুলে দিয়েছে ভার্চুয়াল দুনিয়া। কিন্তু এর মাধ্যমেই সাইবার জগতে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানা অপরাধ। এই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অপরাধ সংঘটনের প্রবণতাও বেড়ে চলেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর ক্ষেত্রে উগ্রপন্থী জঙ্গীদের প্রযুক্তি ব্যবহারে পারঙ্গমতা। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের নিত্যনতুন কৌশলের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও হিমশিম খাচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে ভুয়া এ্যাকাউন্টের বদৌলতে পাল্টে যাচ্ছে অপরাধের ধরনও। সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে সাইবার ক্রাইম রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। আশার কথা হলোÑ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের আলোচনায় যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। আমাদের প্রত্যাশা অচিরেই ফেসবুকের অপব্যবহার রোধ করা হবে এবং সারাদেশে শিবির কর্মীদের তৎপরতার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হবে।
শীর্ষ সংবাদ: