ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবদুল মালেক

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৬ ॥ সবার দৃষ্টি আইওয়াতেই

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৬ ॥ সবার দৃষ্টি আইওয়াতেই

অবশেষে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু এখন আইওয়াতেই স্থির হয়ে আছে। কারণ ককাস কর্তৃক ভোটাভুটির মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী বাছাই শুরু হয় সর্বপ্রথম আইওয়াতেই। ককাসকে এক কথায় বলা যায় আমেরিকান প্রেসিডেন্টসিয়াল ক্যান্ডিডেট নমিনেটিং কনভেনশন। তবে একমাত্র ককাসই নয়, এই উদ্দেশ্যে নির্বাচনপূর্ব একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমেরিকার অঙ্গরাজ্যগুলোতে কোথাও ককাস, কোথাও প্রাইমারী, কোথাওবা যুগপৎভাবে ককাস কিংবা প্রাইমারী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যদিও আমেরিকার একটি ক্ষুদ্র অঙ্গরাজ্য আইওয়া তথাপি সেখানে হারজিতের ফল নিঃসন্দেহে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কারণ হিসেবে বলা যায় ‘মর্নিং শোজ দ্যা ডে’ এবং দ্বিতীয়টি আছে বাংলা প্রবাদে ‘শাদির পয়লা রাতে মারিবে বিড়াল’! বিগত ২০০৮ সালে আইওয়া ককাসে পয়লা রাতে বিড়াল মারতে না পারার এক অবিস্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল। রাজনীতিতে স্বল্প পরিচিত একজন কালো যুবক, শিকাগোর নবীন সিনেটর বারাক ওবামার সেই বিজয়ের কথা আজ ইতিহাস। সে বছর আইওয়া ককাসে নিজ তুলনায় নামগোত্রহীন একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে হেরে যাবেন সে কথা হয়ত স্বপ্নেও ছিল না দেশে-বিদেশে খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব ও প্রবল প্রতাপান্বিত প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের। ডেমোক্র্যাট দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিলারি বাছাইয়ের এই প্রথম কনভেনশনে হেরে পরবর্তীতে অর্জন করেছিলেন শুধুই পরাজয়। এবারের আইওয়া ককাস দেখতে দেখতে এসে পড়েছে পয়লা ফেব্রুয়ারি -একেবারে নাকের ডগায়। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থী বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একই মাসের নয় তারিখে নিউ হ্যাম্শায়ারে। একই কায়দায় ধারাবাহিকভাবে অন্য অঙ্গ রাজ্যগুলোতেও ককাস/প্রাইমারী/ককাস+প্রাইমারীর সিরিজ কনভেনশন ও ভোট হতে থাকবে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এক সময় আমেরিকার রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দেশের মতো নিজেরাই দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিত। কিন্তু ১৯৩৬ সালে রিপাবলিকান দলীয় প্লাটফর্মে বেশ ক’জন মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক হলেন। যাদের মধ্যে দু’জন ছিলেন একেবারেই নাছোড়বান্দা- একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও ক্যানসাস স্টেটের গভর্নর আলফ্রেড ল্যানডন, অন্যজন সিনেটর উইলিয়াম বরাহ। মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তখন তারা স্টেটে স্টেটে ঘুরে নিজেদের পক্ষে নেতাকর্মীদের সমর্থন চেয়ে প্রচারণা চালালেন। এই উপায়ে গভর্নর আলফ্রেড ল্যানডন রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন লাভে সমর্থ হলেও ক্ষমতাসীন ডেমোক্রাট দলীয় প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেলটের কাছে তিনি পরাজিত হন। এরই পথ বেয়ে পরবর্তীতে শুরু হয় প্রাইমারী এবং যে সব স্টেট প্রাইমারী মানে না সেসব স্টেটে রয়েছে ককাস। ফেব্রুয়ারিতে সূচনা হওয়া আমেরিকার এসব বাছাই নির্বাচনের সিরিজসমূহের পরিসমাপ্তি ঘটবে জুন মাসে। এরই ভিত্তিতে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন ২৫ জুলাই ঘোষণা করবে পার্টির মনোনীত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নাম- স্থান ফিলাডেলফিয়ার পেনসিলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টার। একই কায়দায় মনোনীত রিপাবলিকান দলীয় দুই প্রার্থীর নাম ঘোষিত হবে ওই মাসটির ১৮ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত ওয়াহাইও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে অনুষ্ঠিত কনভেনশনের মাধমে। আইওয়া রাজ্যে ককাসের দিনক্ষণ সন্নিকটে বলে নির্বাচনী যুদ্ধে উত্তেজনার পারদ উর্ধ থেকে উর্ধগামী। প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করতে সকল প্রার্থী নিক্ষেপ করছেন উত্তপ্ত বাক্যবাণ। কিন্তু এরই মধ্যে ফের যেন গাড্ডায় পড়ে গেলেন হিলারি। সেই শুরুতেই তো ই-মেইল ও লিবিয়ার বেনগাজী নিয়ে নাকানি-চুবানি খেতে হয়েছিল তাকে। আইওয়াতে সি এন এনের সর্বশেষ নির্বাচনী সমীক্ষায় এগিয়ে গেলেন সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। বার্নির এই এগিয়ে থাকা তথা এমনতর উত্থানটি পোড় খাওয়া হিলারিকে যে অতিশয় উদ্বিগ্ন করে তুলবে তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। সিএনএন সমীক্ষায় বার্নির ঝুলিতে জমা হলো ৫১% ভোট এবং হিলারির প্রাপ্ত ভোট হলো ৪৩%। ফলে প্রথম থেকেই স্বামী ও কন্যাকে নিয়ে হিলারী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে। কিন্তু পরবর্তী প্রাইমারী নিউ হ্যাম্শায়ারের একটি পোলেও বার্নি তার চাইতে এগিয়ে রয়েছেন বড় ব্যবধানে। ফক্স নিউজে প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারির পোলে বার্নি ৫৬% ও হিলারি পেয়েছেন ৩৪%। যদিও এবিসি নিউজ/ওয়াশিংটন পোস্ট কর্তৃক ২৬ জানুয়ারির ন্যাশনাল পোলে হিলারি বড় ব্যবধানে স্যান্ডার্সের থেকে এগিয়ে। সেখানে হিলারির প্রাপ্তি ৫১% এবং বার্নির ৩৭%। ভারমন্টের ৭৩ বছর বয়স্ক স্বল্প পরিচিত সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সনের এই জনপ্রিয়তার কারণ হলো ওয়াল স্ট্রিট, কর্পোরেট আমেরিকা ও সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের সমুদয় ধনসম্পদের মালিকদের, যাদের সংখ্যা ১% মাত্র, তিনি তুলো ধুনো করে ছাড়ছেন। প্রচার অভিযানের এই বক্তব্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন হতাশাগ্রস্ত ওয়ার্কিং গ্রুপে ও মধ্যবিত্ত লোকজন। এবার তাকাই বিপরীত শিবির রিপাবলিকান দলের প্রার্থীদের দিকে। নির্বাচনী প্রচার করতে নেমেই বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে মাঠ সরগরম করতে শুরু করেছিলেন বিলিয়নিয়ার ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকাবাসী অনেকবারই নির্বাচন শুরুর দিকে যদিও তাকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দেখেছে; কিন্তু সেটা যেন ছিল শখের বসে কোন বালকের রাজা সাজার খেলা। তারপর বরাবর যা হতো সেটা খেল খতম পয়সা হজমের মতো। তিনি মাঠ ছেড়ে কখন যে বিদায় নিতেন কেউবা খোঁজ রাখত! কিন্তু ’১৬ সালের জন্য রিপাবলিকান দলের টিকেট প্রত্যাশী ট্রাম্প মাঠে দাঁড়িয়ে পড়েই এবারে এমন ল-ভ- করে ছাড়বেন চারদিক সেটা ছিল ভাবনার অতীত। রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়নের নিশ্চিত মুকুটটি বুশ বংশের আর এক সন্তান ফ্লোরিডা রাজ্যের সাবেক গভর্নর জেব বুশ পরবেন সেটা অনেকের ধারণায় ছিল। নিউজার্সির করিতকর্মা গভর্নর ক্রিস কৃষ্টিকেও ঠেলে ফেলা যায়নি। কিন্তু শুরু থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প জারক রসে ডোবান নব নব বিতর্কের জন্ম দিয়ে মন হরণ করে চলেছেন বহু মানুষের। প্রেসিডেন্টসিয়াল প্রার্থীর তীক্ষè বাক্যবাণ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীরা রেহাই পাবেন না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রাম্পের কাছ থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ক’জন সাংবাদিকও পেয়েছেন অতি অপমানজনক আচরণ। শুধু তাই নয়, কখনও কখনও হুঙ্কার দিয়ে কোন বিশেষ জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মকে পর্যন্ত ছিন্নভিন্ন করে ছেড়েছেন তিনি। অবশ্য এবংবিধ আচরণে বা কথায় চারদিকের অনেক রক্ষণশীল মানুষকে মাতোয়ারা বানিয়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। ভোটের হিসাবের অঙ্কে প্রতিটি প্রার্থীকে টেক্কা দিয়ে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত রয়েছেন শীর্ষে। সর্বশেষ ন্যাশনাল পোলে পেয়েছেন ৩৯% ভোট, যা অন্যান্য প্রার্থী থেকে ২০% বেশি। এছাড়া আলোচিত আইওয়ায় ট্রাম্প পেলেন ৩১% ও সিনেটর ট্রেড ক্রুজ যাকে ট্রাম্প ক্যানাডিয়ান বর্ণ বলে হেনস্থা করছেন তিনি পেয়েছেন ২৬%। নিউ হ্যাম্শায়ারে ট্রাম্প ৩২% ও ক্রুজ ১৩%। অবশেষে নির্বাচনী পাদপ্রদীপের আলোয় বিতর্কিত মন্তব্যে আর এক খ্যাতির অধিকারী আলাস্কার সাবেক গবর্নর সারা পলিন আইওয়াতে তরী ঠেকালেন ট্রাম্প মহোদয়কে এন্ডোর্স করতে। সারার আলাস্কার বাড়ির ব্যাক ইয়ার্ড থেকে রাশিয়া দেখা যায়- এরকম মন্তব্য নিয়ে হুলস্থুল হাসি-ঠাট্টা হয়েছিল। এবার তিনি যেদিন দেখা দিলেন সেদিন তার পুত্ররতœকে গ্রেফতার করা হয়েছে গার্লফ্রেন্ড নির্যাতনের অভিযোগে। লেখক : আমেরিকা প্রবাসী [email protected]
×