ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ জামালকে খেলোয়াড় দেবে চট্টগ্রাম আবাহনী!

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

শেখ জামালকে খেলোয়াড় দেবে চট্টগ্রাম আবাহনী!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেখ জামাল ধানম-ি লিমিটেড ক্লাব চাইলে আসন্ন এএফসি কাপের জন্য ফুটবলার ধার দেবে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। আর ফুটবলের উন্নয়নের জন্যই চট্টগ্রাম আবাহনীর এই উত্থান এমনটাই মত চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজার শাকিল মাহমুদ চৌধুরীর। পাশাপাশি দেশের ফুটবলের স্বার্থেই চট্টগ্রাম আবাহনী ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এক হয়ে কাজ করবে জানিয়েছেন তিনি। আর দৃঢ় কণ্ঠে শোনান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হবার জন্যই লড়বে চট্টগ্রাম আবাহনী। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ জামাল সভাপতি মনজুর কাদের জানান, তার ক্লাবকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে অন্য ক্লাবের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বাফুফের কিছু কর্তা। চট্টগ্রাম আবাহনী ম্যানেজার যেন তারই জবাব দিলেন খানিকটা ভিন্ন সুরে, ‘হ্যাঁ, ওনার (মনজুর কাদের) কথা মানছি। আমাদের সঙ্গে বাফুফের একটা আঁতাত আছে। তবে সেই আঁতাত দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেয়ার আঁতাত। কোন ক্লাবের স্বার্থে এই আঁতাত নয়।’ গত বছর হয়ে যাওয়া শেখ কামাল আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ থেকে শেখ জামালের সঙ্গে চট্টগ্রাম আবাহনীর দ্বন্দ্বের শুরু। সেবার চট্টগ্রাম আবাহনী ধারে ফুটবলার চেয়েছিল শেখ জামালের কাছে। একজন ফুটবলার চট্টগ্রাম পৌঁছে অনুশীলনও করেছিলেন, এমনকি অগ্রিম টাকাও নিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে খেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে চট্টগ্রাম আবাহনীর অবনমন এড়াতেই নাভিশ্বাস ওঠে, তারাই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল! জাতীয় দলের মামুনুল, রায়হান, জাহিদ, নাসির, ইয়ামিন মুন্নার মতো বড় নামগুলো এবারে মাঠ কাঁপাবে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে। তাই লীগ চ্যাম্পিয়ন হবার কথাটা খোলামেলাই বললেন এই ক্লাব কর্মকর্তা। সেই সঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, ‘শেখ জামাল আমাদের খেলোয়াড় দিয়ে সাহায্য করেনি বলে আমরাও যে তাদের সঙ্গে একই আচরণ করবো এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। আসন্ন এএফসি কাপের জন্য আমাদের কাছ থেকে যদি তারা কোন খেলোয়াড় চায়, তাহলে অবশ্যই আমরা তাদের সাহায্য করবো।’ এদিকে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড শেখ জামালের যে ক’জন খেলোয়াড় ‘ছিনিয়ে’ নিয়ে নিজেদের ডেরায় ভিড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে দু’জনকে একেবারে ‘মুক্ত’ করে দিয়েছে। শোনা গেছে, আবাহনী-জামালের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান এবং গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলকে। এখন ইচ্ছে করলে জামালে খেলতে পারবেন তারা। সেটা ধারে নয়, দলবদলের চুক্তি মোতাবেকই। গত ২৭ জানুয়ারি শেখ জামালের সভাপতি মনজুর কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেনÑ শেখ কামাল টুর্নামেন্টে তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়নি, দলটি এএফসি কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এশিয়ার অন্যতম সেরা ক্লাব হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। ফলে ঈর্ষাপরায়ণ হয়েই কয়েকটি ক্লাব গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। তাদের ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে বাফুফের কিছু কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ উপলক্ষে বাফুফের নিয়ম অনুযায়ী শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ঢাকা আবাহনী ও চট্টগ্রাম আবাহনীসহ অন্য ক্লাবগুলোর কাছে তাদের খেলোয়াড় বুঝে নিয়ে ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল। কথা ছিল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শেষ হলে বা আসর শুরুর আগে বাংলাদেশ দল বিদায় নিলে বাফুফে সব ক্লাবের কাছে তাদের খেলোয়াড়দের বুঝিয়ে দেবে। সেটা বাফুফে করে ঠিকই, কিন্তু তাদের ১১ ফুটবলারকে ফেরত দেয়া হয়নি। বরং তাদের বেশিরভাগ খেলোয়াড়কে দলবদলের জন্য তুলে নিয়ে যায় অন্য তিনটি ক্লাবের কর্মকর্তারা। আগামী মার্চে এএফসি কাপের মূলপর্বে খেলবে শেখ জামাল। বাংলাদেশের কোন ক্লাব এবারই প্রথম এমন কৃতিত্ব দেখালো। এ আসরে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই জামালের হয়ে খেলতে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। এ কারণেই জাতীয় দল থেকে নিজেদের খেলোয়াড়দের ক্লাবে ফেরত নিতে চেয়েছিল শেখ জামাল। কিন্তু তাদের কোন খেলোয়াড় দেয়া হয়নি নানা অজুহাতে। সব মিলিয়ে এ জন্য বাফুফের ওপর স্বভাবতই ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ জামাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এর ফলে শেখ জামাল এবং বাফুফের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। বুধবার নিজেদের ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবটি হার্ডলাইনে যাবার হুমকি দেয়। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মামুনুল ইসলামসহ জাতীয় দলের নয় ফুটবলারকে ক্লাবে ফিরিয়ে না দিলে আসন্ন এএফসি কাপের চূড়ান্ত পর্বে না খেলার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপাধারী শেখ জামাল। তাছাড়া যেসব খেলোয়াড় ক্লাবের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়ার পর ‘বাফুফের ষড়যন্ত্রে’ অন্য ক্লাবে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাও নেয়ার ঘোষণা দেয় শেখ জামাল। উল্লেখ্য, ক্লাবের দাবি অনুসারে আগের চুক্তিবদ্ধ ৯ ফুটবলার হলেন: মামুনুল ইসলাম, রায়হান হাসান, শহীদুল আলম সোহেল, সোহেল রানা, শেখ আলমগীর কবির রানা, ইয়াসিন খান, ইয়ামিন মুন্না, জামাল ভুঁইয়া ও নাসির উদ্দিন চৌধুরী। এখন দেখার বিষয়, চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে খেলোয়াড় ধার করতে রাজি হয় কি না শেখ জামাল।
×