ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য ভেঙ্গে পড়েছে বরিশাল মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য ভেঙ্গে পড়েছে বরিশাল মহানগরীর  পরিবহন ব্যবস্থা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ অবৈধ যানবাহনের চাপে ভেঙ্গে পড়েছে বরিশাল মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থা। এ জন্য নগরবাসীর ক্ষোভ নগর ভবনের দিকে। কয়েক বছর ধরে এ নগরীতে বৈধ যানবাহনের চেয়ে অবৈধ যানবাহনের আধিক্যই বেশি। সিটি কর্পোরেশন বিষয়টি নিয়ে নমনীয় মনোভাব পোষণ করায় নগর ভবনের কিছু কর্মী নানা অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করছেন। আর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের কিছু কর্মীও এ সুযোগে নগরীতে অবৈধ যানবাহন চলাচলে তাদের নিজস্ব ব্যবসা চালু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রমতে, নগরীতে বৈধ রিক্সার লাইসেন্স রয়েছে ১২ হাজার। কিন্তু এর সঙ্গে বেশ কিছু অবৈধ রিক্সাও চলাচল করছে। তবে তা খুব বেশি না হলেও ইজিবাইক এ নগরীর পরিবহন ব্যবস্থায় এক সময় যে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছিল, তা ইতোমধ্যে বিড়ম্বনায় পরিণত হয়েছে। বিগত নগর পরিষদ বরিশাল মহানগরীতে ১ হাজার ২৫০টি ইজিবাইক চলাচলের অনুমোদন দিয়ে লাইসেন্স প্রদান করেছিল। বর্তমান নগর পরিষদ আরও প্রায় ১ হাজার ৪০০ ইজিবাইক চলাচলের অনুমোদন দিয়ে লাইসেন্স প্রদান করেছে। এসব লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন অযাচিত ব্যক্তি ইজিবাইক লাইসেন্স প্রদানের নামে অনেক অনিয়মের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠলেও সে বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ নগর ভবনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। সূত্রে আরও জানা গেছে, লাইসেন্সধারী ২ হাজার ৬৫০টি ইজিবাইকের সঙ্গে এ নগরীতে আরও কমপক্ষে তিন হাজার অনুরূপ যানবাহন চলছে বিনা লাইসেন্সে। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক বিভাগের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এসব অবৈধ ইজিবাইক চলাচলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। মাসে মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচের বিনিময়ে ট্রাফিক পুলিশ এসব ইজিবাইক চলাচলের পথ সুগম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরীতে চলাচলরত একাধিক ইজিবাইক চালক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নগরীর রাস্তায় চোখ রাখলেই বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায় সবার কাছে। এ নগরীতে চলাচলরত অর্ধেক ইজিবাইকের কোন লাইসেন্স নেই। অথচ এসব অবৈধ যানবাহন মাসের পর মাস ধরে নগরীর রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের টোকেনবিহীন এসব অবৈধ যানবাহন রাস্তায় বের হলে তা আটকের কথা ট্রাফিক পুলিশের। কিন্তু আইন রক্ষায় নিয়োজিত এ বাহিনীর কতিপয় কর্মীর যোগসাজশেই এসব অবৈধ যানবাহন নগরীর রাস্তায় চলাচল করছে। সঙ্গে রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের উদাসীনতার সঙ্গে কিছু কর্মীর অবহেলা এবং অনিয়মের বিষয়টিও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নগরীতে অর্ধেকেরও বেশি ইজিবাইকের কোন লাইসেন্স না থাকার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমরা সব সময়ই অবৈধ যানবাহন আটক করে থাকি। প্রতি মাসে মহানগর পুলিশ অবৈধ যানবাহন থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা জরিমানা আদায় করছে। অবৈধ যানবাহনের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ট্রাফিক বিভাগের কোন কর্মী এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আহসান হাবিব কামাল বলেন, খুব শীঘ্রই নগরী থেকে সিটি কর্পোরেশনের এখতিয়ারাধীন সব অযান্ত্রিক অবৈধ যানবাহন বিতাড়ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে নগরীতে সব ব্যাটারিচালিত রিক্সা যেমন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তেমনি সব অবৈধ যানবাহন মুক্ত করা হবে।
×