ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রবেশ পথের সিংহভাগ অবৈধ দখলে দু’শ’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে

খুলনা বড়বাজারের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

খুলনা বড়বাজারের বেহাল দশা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনার ঐতিহ্যবাহী বড়বাজারের বেহাল অবস্থা। বাজারের প্রবেশ পথগুলোর সিংহভাগ অবৈধ দখলে। সংকুচিত রাস্তায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কিংবা এম্বুলেন্সসহ বড় কোন গাড়ি ঢোকার পথ নেই। চারপাশে ঘিঞ্জি পরিবেশ। বাজার সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন রাস্তা দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকে ট্রাকের দখলে। স্বচ্ছন্দে বাজারে যেতে পারে না ক্রেতারা। এতে বাজারে ক্রেতা হ্রাস পাচ্ছে। কেনাবেচা ভাল না হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে বাজারের কোলঘেঁষে প্রবাহিত ভৈরব নদের পাড়ে মাচার ওপরে নির্মিত দুই শতাধিক ঘরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। জানা গেছে, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে স্থাপিত হয় খুলনা বড়বাজার। তখন বাজারটির নাম ছিল ‘চার্লিগঞ্জ’ বা ‘সাহেবের হাট’। নীল কুঠিয়াল চার্লস এ বাজারটি প্রতিষ্ঠা করায় তার নামেই এর নামকরণ হয়। খুলনা মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদের পাড়ঘেঁষে ওয়েস্ট মেকড রোড, ভৈরব স্ট্র্যান্ড রোড, হেলাতলা রোড, কালীবাড়ি রোড, ক্লে রোড, কেডি ঘোষ রোড, স্যার ইকবাল রোডের একাংশ ও স্টেশন রোড নিয়ে বড় বাজারের অবস্থান। সময়ের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় খুলনা বড় বাজারের ব্যাপক প্রসার ঘটে। পাইকারি বেচাকেনার পাশাপাশি খুচরা বিক্রির জন্যও ছোট-বড় অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ বাজারে। এদিকে, ভৈরব নদের অব্যাহত ভাঙনে খুলনা বড়বাজারের বহু দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। জুতোপট্টির মোড় থেকে বটতলা পর্যন্ত ভৈরবের কোলঘেঁষা রাস্তাটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এ এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের অস্তিত্বও বিলীন হতে চলেছে। ভৈরবের পাড়ে বাঁশের মাচার ওপর ঘর বেঁধে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী মানরাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তুলাপট্টি, হেলাতলা মোড় ও সংলগ্ন ক্লেরোডে বে-আইনীভাবে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসানো হয়েছে। ওয়েস্ট মেকড রোডের দুই পাশ ও মহেন্দ্র দাসের মোড়সহ বাজারের গলিপথগুলো অবৈধ দখলে। বড়বাজারে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দুই পাশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসায় রাস্তাটি একেবারেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। অবৈধ দখলদারদের কারণে রাস্তার পার্শ্ববর্তী স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আড়ালে পড়ে যাওয়ায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ক্ষতি হচ্ছে। কদমতলা মোড়, জব্বার সরণী, কেডি ঘোষ রোড, স্যার ইকবাল রোডের কালীবাড়ি ও খুলনা থানার মোড় এলাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে থাকে বড় বড় ট্রাক। অথচ রাত ৮টার আগে শহরে ট্রাক প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। খুলনা বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়েস্ট মেকড রোড, হেলাতলা রোড, ভৈরব স্ট্র্যান্ড রোডসহ বিভিন্ন সড়ক তৈরি করা হয়। এসব রাস্তা যেমন প্রশস্ত করে তৈরি করা হয় তেমনি মোড়গুলোতেও পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা হয়। এতে মালামাল খালাস কিংবা বোঝাই কার্যক্রম সহজ হতো। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের হীন স্বার্থ রক্ষার কারণে বাজারের প্রধান সড়কগুলো অবৈধ দখলে চলে গেছে। এসব সড়ক যতটা চওড়া ছিল তার এক-তৃতীয়াংশও এখন ফাঁকা নেই। প্রবেশ পথ অত্যন্ত সংকুচিত হয়েছে। তা ছাড়া বাজার এলাকার একাধিক ড্রেনের ওপর প্রভাবশালীরা ঘর তুলে গুদাম বানিয়েছেন। এতে পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারের রাস্তাঘাট নোংরা পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর রাস্তায় ময়লা আবর্জনা পচা কাদার স্তূপ জমে। যা শুধু ক্রেতাদেরই নয়, বাজারের ব্যবসায়ীদেরও সমস্যার সৃষ্টি করে। বাজারের এ দুরবস্থা লাঘব ও পরিবেশ উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন-নিবেদন করেও কোন ফল হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
×