ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা, নোটিসেই দায় শেষ

দখলে বিপন্ন রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

দখলে বিপন্ন রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ একের পর এক অবৈধ দখলদারদের আগ্রাসনে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ। রাজশাহী নগরীর দক্ষিণে পদ্মা নদীর বাঁধের ওপর পর্যায়ক্রমে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে রক্ষা বাঁধকে। বার বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (পানি উন্নয়ন বোর্ড) এ নিয়ে দখলদারদের নোটিস করলেও সেগুলো অপসারণের কোন পদক্ষেপ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষও নোটিস দিয়ে দায় শেষ করছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মাঠে নামছে না। ফলে দিনের পর দিন অবৈধ স্থাপনা বেড়েই চলেছে শহর রক্ষা বাঁধের ওপর। কেউ কেউ বসতিও গড়ে তুলেছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীর পদ্মা নদীর বাঁধের ওপর (রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ) দুই পাশ দিয়ে কেউ নির্মাণ করেছেন দোকান, কেউ তুলেছেন প্রাচীর, কেউবা বসিয়েছেন গ্যারেজ আবার কেউ গড়েছেন বসতি। এসব দখলদারদের একের পর এক নোটিস দিয়েও কোন কাজ হয়নি। অপসারণ হয়নি কোন স্থাপনা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজশাহী সূত্র জানায়, শহর রক্ষা বাঁধের দুই পাশের স্থাপনা সরানোর জন্য অনেক আগে থেকেই মৌখিকভাবে দখলদারদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কোন অগ্রগতি না হওয়ায় গত ২৭ ডিসেম্বর দখলদারদের ১৫ দিনের সময় দিয়ে নোটিস দেয়া হয়। সেই সময়সীমাও শেষ হয়ে গেছে। তবে কোন স্থাপনা অপসারণ হয়নি। বরং নতুন করে স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে বাঁধের ওপর ও আশপাশের এলাকায়। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার স্বাক্ষরিত সম্প্রতি দেয়া সর্বশেষ নোটিসে বলা হয়, এসব স্থাপনা বাংলাদেশ পাউবোর সম্পত্তির সীমানার মধ্যে পড়েছে। এজন্য এগুলো অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো ১৫ দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নোটিসে বেঁধে দেয়া সময়সীমা গত ১০ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। অথচ অপসারণ হয়নি একটিও স্থাপনা। পাউবো বেঁধে দেয়া সময়সীমার অতিক্রম হয়ে আরও প্রায় ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও অপসারণে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নগরীর শাহ মখদুম কলেজ থেকে তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকা ও বড়কুঠি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ ঘুরে দেখা যায়, বাঁধের উত্তর পাশে তেমন কোন স্থাপনা নেই। তবে দক্ষিণ পাশে নদীর পাদদেশে গড়ে উঠেছে নানা স্থাপনা। কোথাও বাঁধের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়ি। কোথাও দোকানপাট। পাউবো যেসব স্থাপনা অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেগুলোর একটিও অপসারণ করা হয়নি। একই অবস্থা বাঁধের অন্য অংশগুলোতেও। নগরীর কেদুর মোড় এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের জায়গায় দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন আবদুল গাফফার নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। তার দোকান অপসারণের নোটিস পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ পাইছি। উঠে যাচ্ছেন না কেন, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। উঠে যাব কোথায়? পেট তো চালাতে হবে। যদি ঘর ভেঙ্গে দেয় তবে এখানে খোলা আকাশের নিচেই ব্যবসা করব। কোথাও যাব না। নোটিসের পরও বাঁধের ওপর দখলদাররা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নিজ দায়িত্বে কেউ কোন স্থাপনা সরিয়ে নেননি। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, নগরীর মধ্যে ১৭ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ পড়েছে। এই ১৭ কিলোমিটার বাঁধের ওপর তিন শতাধিক অবৈধ দখলদার রয়েছে। তারা নিজেরা স্থাপনাগুলো অপসারণ না করলে পাউবোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। তবে অর্থ ও জনবল সঙ্কটের কারণে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানান, পাউবো কর্মকর্তারা। পাউবো সূত্র জানায়, তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান চালাবেন। অভিযানের খরচের জন্য পাউবোর কাছে তহবিল চেয়েছেন। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ম্যাজিস্ট্রেটও নিতে হবে। এগুলোর সমন্বয় হলেই তাঁরা অভিযানে নামবেন।
×