ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অসহনীয় ভোগান্তি এজি অফিসে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

অসহনীয় ভোগান্তি এজি অফিসে

সরকার প্রজাতন্ত্রের সব শ্রেণীর কর্মচারীর জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর বেতন নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লষ্ট কর্মচারীর চাকরি বইয়ের তৃতীয় পৃষ্ঠার তথ্যের সঙ্গে আইডি কার্ডের নম্বরের নাম ও জন্ম তারিখের মিল থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর ট্রাকিং নম্বর দিয়ে বেতন নির্ধারণী ফরম ও চাকরি বহি ঢাকাস্থ সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিস (এ/জি) থেকে বেতন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের-দূর-দূরান্ত জেলার সরকারী অফিসসমূহ থেকে বেতন নির্ধারণের জন্য ঢাকায় এ/জি অফিসে পৌঁছা মাত্র পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের উৎকোচ। বিশেষ করে যার আইডি কার্ড ও চাকরি বহি তথ্যের সঙ্গে যার বেতন নির্ধারণী যৌক্তিক ও সাদৃশ্যপূর্ণ নয় তাকে পড়তে হয় হাজারো সমস্যায়। মোটা অঙ্কের উৎকোচের জন্য তন্নতন্ন করে দোষ খোঁজার নিরন্তর অপচেষ্টা। কোন ভুল ত্রুটি না পেলে চেয়ে বসে চাকরিতে ঢোকার সময়ে সিভিল সার্জনের প্রদত্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট, পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট, বয়স প্রমাণের জন্য এসএসসি সনদ, চাকরির প্রথম নিয়োগপত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। বেতন নির্ধারণের এসব রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার ক্ষমতা অডিটরদের দিল -কে? কর্তৃপক্ষ উক্ত সেকশনে যাদের বসিয়েছে, তাদের কি কোন নির্দেশনা দেননি? কেননা, ৩৫/৪০ বছর দীর্ঘ চাকরি জীবনে অন্তত ৫/৭টি জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন নির্ধারণ করানো একজন কর্মচারী বর্তমানে পিআরএল ছুটিতে, কেউ বা শীঘ্রই পিআরএল ছুটিতে যাবেনÑ এমন সব কর্মচারীর বৃদ্ধ বয়সে অতি পুরনো ৩৫/৪০ বছরের নিয়োগপত্র হারানো, ছিঁড়ে যাওয়া, নষ্ট হওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া তখনকার দিনে বর্তমানের মতো কম্পিউটার ছিল না। তাই এসব বিভিন্ন অজুহাতে এ/জি অফিসে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়ে আর/এজি অফিসের অর্থের যোগান দিতে হাজারো নিরীহ কর্মচারী প্রায় সর্বস্বান্ত। বিশেষ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সিজিএ ভবন, ৫ম তলা, সেগুনবাগিচা, ঢাকার কথা বলা যায়। এক একটি বহির বেতন নির্ধারণে তাদের রেট-৩০০০-১০,০০০/- টাকা পর্যন্ত। ওরা নাকি লাখ টাকা খরচ করে চলমান বেতন নির্ধারণী মৌসুমে উক্ত শাখায় পোস্টিং নিয়েছে। তাই নিয়ম রীতি বা মানবিকতা ওদের কাছে অজ্ঞাত। বিভিন্ন বন বিভাগ থেকে ঢাকায় এসে কমপক্ষ ৪/৫ দিন ওদের কাছে ধরনা দিয়ে হোটেল কিংবা অন্য কোথাও থাকতে হয় তাদের জন্য। তাই বিপুলসংখ্যক নিরীহ কর্মচারীর পক্ষে প্রতিকার চাই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে। খলিলুর রহমান খিলগাঁও, ঢাকা হে সূর্য, শীতের সূর্য দিন যায় দিন আসে। মানুষের দৈনন্দিন জীবন বদলায়। প্রতিদিন কারো একরকম যায় না। এটাই কি তবে নিয়তি? ঠিক এমন করে আবহাওয়া-জলবায়ুরও ঘটে পরিবর্তন। বাংলার ষড়ঋতু এমন করেই আসে আমাদের জীবনে। যদিও বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক ঢেউ এদেশের ঋতুবৈচিত্র্যেও দোলা দিয়েছে। শীতের প্রকোপ এখন বেশ দেরিতেই অনুভূত হয়। সেই ছেলেবেলায় খুব ভোরে ঘুম ভাঙত গাছির রস আহরণকালে বাদুড় কিংবা অন্য পাকিদের উদ্দেশ্যে ভর্ৎসনার শব্দে। তাড়াতাড়ি উঠে জগ কিংবা গ্লাস নিয়ে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে যাওয়া, গাছির হাসিমুখে রস ঢেলে দেয়া আর তা খালি পেটেই মুখ না ধুয়ে চালান করা এখন কেবলই স্মৃতি। ঠা-া রস পেটে পড়ায় ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে আবার কাঁথার মধ্যে চলে যাওয়া। ছোট বা বড় ভাইবোনদের সঙ্গে খুনসুটির কথা মনে পড়লে কেবলই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। আরও মন ভারাক্রান্ত হয় যখন মনে পড়ে অসচ্ছল, দীনহীন প্রতিবেশীর শীতকষ্টের কথায়। তখন দেখতাম ভোরে উঠে তারা জীর্ণ কাপড়ে-শীর্ণ শরীরে নাড়া বা খড়ের আগুন জ্বালিয়ে একটু উত্তাপ নিচ্ছে। মনে মনে ভাবতাম সারারাত না জানি ওদের কত কষ্ট হয়েছে! মনে পড়ে যেত সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রার্থী’ কবিতা। মনে মনে বলতাম ‘হে সূর্য, শীতের সূর্য, ...হে সূর্য, তুমি তো জানো,/আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!/ সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে/এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,/কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!।’ আজ যখন বড় হয়েছি একটু বুঝতে শিখেছি তখনও দেখি রাস্তার পাশে ভাসমান মানুষ কিংবা গ্রামের কোন উঠানে দরিদ্র মানুষ শীত তাড়ানোর জন্য একইভাবে আগুন জ্বালিয়ে চালাচ্ছে জীবনের চাকা। তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে জাগে পরিবর্তন নামক সূর্য কি ওদের প্রতি সদয় হয়নি কিংবা ফেলেনি কোন আলো? দেশ জাতি নিয়ে স্বাধীনতার পর কত পরিকল্পনা, কত কিছুই তো হলো? সব সরকারের আমলেই উন্নতির জোয়ারের কথা বলা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ গত ৪৪ বছরে ক্ষমতার বাইরে ছিল বেশি সময়। জাতির জনকের মৃত্যুর দেশ চলেছে উল্টো পথে। এতদিন পর বেশ পোক্তভাবেই ক্ষমতাসীন। অনুরোধ করব ভাসমান মানুষ, ভিক্ষুক আড়ালে নেয়া কোন সমাধান নয়। আগে প্রয়োজন অর্থনৈতিক সাম্যতা বিধান। যে স্বপ্ন আজীবন দেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই স্বপ্ন পূরণ করে তার দল ও যোগ্য কন্যা দেশ থেকে অর্থনৈতিক বৈষম্য বা শোষণ চিরতরে দূর করবে বলে প্রত্যাশা। মির্জা সামসুর রহমান মধুখালী, ফরিদপুর
×