ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বুধবার নিজ কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের প্রতি সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ প্রদান করেছেন যা প্রত্যাশিত ছিল। অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেও অনেক সময় ব্যর্থতা মেনে নেয় পুলিশ। এই ব্যর্থতা পুলিশ বাহিনীর ভেতর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কাগজে-কলমে কেউ বিষয়টি স্বীকার না করলেও প্রকৃত বাস্তবতা হলো- যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সে সরকারের দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ পুলিশের ওপর অন্যায় অন্যায্য প্রভাব বিস্তার করে থাকে। প্রভাবশালীদের চাপের কাছে শেষ পর্যন্ত অসহায়ভাবে পুলিশের নতিস্বীকার করতে হয়। ফলে প্রশ্রয় পায় অন্যায়, সুনীতি নির্বাসিত হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দখলবাজ ক্ষমতা অপব্যবহারকারী আওয়ামী লীগার হলেও প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে কোন ছাড় নয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গুটিকতক নীতিভ্রষ্ট দুর্বৃত্ত দলীয় প্রভাবশালীর কারণেই দল ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের বিপক্ষে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে। সর্বপ্রকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্ব শর্ত হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। বিশেষ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিকরা যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে তার দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে সমাজ বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে এটাও সত্য সমাজে পুলিশের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা মোটেই সম্মানজনক নয়। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে একতরফাভাবে কেবল পুলিশের দোষ দেয়া সমীচীন নয়। পুলিশের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিও অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। দুষ্টের দমনে যে বাহিনীর কাজ করার কথা তাদের কেউ কেউ যদি নিজেরাই দুষ্টচক্র হয়ে ওঠে তাহলে বিষয়টি দাঁড়ায় রক্ষক হয়ে ভক্ষকের সমতুল্য। তবে সামাজিকভাবে দুর্নামের ঢোলই বেশি বাজে; প্রশংসনীয় ভূমিকা চাপা পড়ে যায়। নিকট অতীতে অপরাধ দমনে পুলিশের চ্যালেঞ্জ বহুলাংশে বেড়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ অপরাধীর পেছনে ছোটেÑ পুলিশের পেশার এই বৈশিষ্ট্যের দিকে সমাজের সহানুভূতির দৃষ্টি তেমন নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মান্য করে জনবল, সরঞ্জাম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি কাটানোর পাশাপাশি পুলিশের সদাচরণ ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং মানসিক গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুনাম বাড়ুক; পুলিশ হয়ে উঠুক সমাজবান্ধবÑ এটাই প্রত্যাশা। একই দিনে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে লেখা একটি গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দলের প্রবীণ নেতাদের বই লেখার যে আহ্বান জানান তা সুচিন্তাপ্রসূত ও তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীনতাযুদ্ধে আওয়ামী লীগের যেসব তরুণ নেতা ত্যাগ স্বীকার করেছেন আজ তাদের অনেকেই পৌঁছে গেছেন জীবনসায়াহ্নে। এরা প্রত্যেকেই ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী। তাই তাদের গৌরবময় স্মৃতিকথা নিঃসন্দেহে আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে রইবে।
×