ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহীন রেজা নূর

বিএনপির ফের পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

বিএনপির ফের পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত থাকতে থাকতে বর্তমানে ভারাক্রান্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং অন্যান্য বাকসর্বস্ব নেতা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার একটি উক্তিকে সম্বল করে আবার আসর গরম করার অপচেষ্টায় মেতেছেন। প্রধান বিচারপতি তার ব্যক্তিগত মন্তব্য প্রকাশকালে বলেন যে, কোন বিচারপতি যদি অবসর গ্রহণের পর কোন রায়ের বিবরণী লেখেন তবে তা হবে সংবিধান পরিপন্থী। ব্যস, আর যায় কোথায়? বিএনপির গোয়েবলস মির্জা ফখরুল এই সংবাদ পাবার সঙ্গে সঙ্গেই সাড়ম্বরে সভা ডেকে এবং দলের সেইসব চেনামুখ নেতা যারা কিনা কথায় চিড়া ভেজাতে চান তাদের সঙ্গে নিয়ে দেশে হৈ চৈ বাধাবার জন্য তৎপর হয়ে উঠলেন। তাদের কথা একটাই। ওই নতুন বোতলে পুরনো মদ ঢালা আর কী! প্রধান বিচারপতি যা বলেছেন তা প্রথাগত ও আইনগত বিচার-বিশ্লেষণে কতটুকু গ্রহণযোগ্য সে বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে মির্জা সাহেবেরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি পুনরায় তুলবার মওকা হিসেবে ওই উক্তি বা মন্তব্যটিকে ব্যবহারের জন্য উঠে পড়ে লেগে গিয়েছেন। সাধারণ কা-জ্ঞান দ্বারা আমাদের মতো নাদানদেরও এ কথা বুঝতে বা মানতে বেগ পেতে হয় না যে, বিচারক শপথের আওতায় থাকাকালীন কোন মামলার নিষ্পত্তিতে যে রায় দিয়েছেন সেটিই চূড়ান্ত রায় বলে বিবেচিত হবে তা সে রায় যত সংক্ষিপ্তাকারেই দেয়া হয়ে থাক না কেন। এখন ওই রায়ের বিবরণী লেখার সময় ওই একই বিচারপতি অবসরে চলে গিয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট রায়টির চূড়ান্ত ও বিশদ বিবরণী লিখতে তার জন্য সাংবিধানিক বাধা থাকবে কেন? তিনি তো রায় দিচ্ছেন না, তিনি কেবল তারই প্রদত্ত রায়টির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ লিখছেন মাত্র। রায়ের সঙ্গে যে বিবরণী থাকে সেটি লিখতে যেমন সময়ের প্রয়োজন তেমনি এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ সদস্যদের সই-সাবুদ এবং তাদের গোচরীভূত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক নিয়ম-কানুন রয়েছে সেসব নিষ্পন্নের জন্য সময়ের আবশ্যকতা রয়েছে। প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পরপরই সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ কয়েকজন খ্যাতিমান আইনজ্ঞ বলেছেন যে, এ ধরনের ব্যবস্থা ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে প্রচলিত রয়েছে। আসলে বিষয়টি কি সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহল পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করে জনগণকে অবহিত করবেন আশা করি। তবে শপথে থাকাকালীন অবস্থাতেই বিচারপতি যে রায় প্রদান করেছেন অবসরে গিয়ে তার বিশদ বিবরণী লেখাটা সংবিধানের লঙ্ঘন তা সাধারণ কা-জ্ঞানে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না। তবে আমরা সাধারণ মানুষরা নিজেদের সাধারণ জ্ঞান দ্বারাই যে কোন বিষয়বস্তু অনুধাবনের চেষ্টা করব বৈকি! এ ক্ষেত্রে যদি আসলেই সংবিধানের লঙ্ঘন হয়ে থাকে তাহলে তার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জনগণ সঙ্গত কারণেই দাবি করতে পারেন প্রধান বিচারপতি বা আদালতের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কাছে। কিন্তু এক্ষেত্রে মুশকিল এই যে, এসব বিশেষজ্ঞের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুনে আম-জনতার পক্ষে কোন্টি সঠিক বা কোন্টি বেঠিক তা সহজে ঠাওর করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিএনপি ইনডেমনিটি বিল, পঞ্চম সংশোধনী, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ, নির্বাচন কমিশনার (সেই বিচারপতি আজিজ), তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিষয়ক জটিলতা (এক-এগারোর আগে) এবং সংবিধানে পরবর্তী সংশোধনী যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হলো ইত্যকার সকল ব্যাপারেই নানান কূটচালের মাধ্যমে জনগণকে বারংবার বিভ্রান্ত করেছে এবং এখনও সামান্য একটু ফাঁকফোকর পেলেই তার মধ্য দিয়ে মাথা গলিয়ে দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে (যেমন সপ্তম, ত্রয়োদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনী)। এসবই অপরাজনীতি। এই যে প্রধান বিচারপতির উক্তিকে ঘিরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি এটি যে নতুন করে গোলযোগ বাধাবার হীন প্রয়াস ছাড়া কিছু নয় তা বুঝবার মতো বুদ্ধিশুদ্ধি জনগণের আছে। মোদ্দাকথা, ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্য বিএনপি নেতৃত্ব সদা তৎপর। প্রসঙ্গক্রমে তাদের এই চরিত্রের বহু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। বিএনপি রাজনীতি মতলবী রাজনীতির সমার্থক মাত্র। তাদের এই রাজনীতির মাহাত্ম্য বোঝা আদতে কি খুব একটা কঠিন বিষয়? মোটেই না। বিএনপির জন্মবৃত্তান্ত যারা জানেন এবং এর চলন-বলনের ওপর যারা গভীর নজর রাখেন তাদের পক্ষে এ রাজনীতির উদ্দেশ্য-বিধেয় বুঝতে বেগ পেতে হয় না নিশ্চয়ই। যা হোক, বেশ কিছুদিন আগে দীর্ঘ মৌনব্রত পালনের পর অবশেষে মওদুদ সাহেব আবার মুখ খুলেছিলেন। শুধু মুখই খোলেননি, জাতির এই ‘সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে’ কিভাবে দেশ ও জাতি উদ্ধার পেতে পারে তার নোস্খাও বাত্লে দিয়েছিলেন তিনি। দেশে মৌলবাদী তথা উগ্রপন্থী ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বও আরোপ করতে ভোলেননি এই কীর্তিমান ব্যারিস্টার। অতি সম্প্রতি নিজ দল বিএনপির সমর্থক বা মতাবলম্বী একটি সংগঠনের সভায় বক্তব্যদানকালে তিনি দুই দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন ‘জাতীয় সঙ্কট’ কাটিয়ে উঠবার জন্য। এর একটি হচ্ছে অবিলম্বে সর্বদলীয় ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও দ্বিতীয়টি হলো সন্ত্রাস দমনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। পাঠক, নিশ্চয়ই আপনাদের বুঝতে একটুও বেগ পেতে হচ্ছে না যে, এই করিৎকর্মা আইনজ্ঞ কোন নতুন কথাই বলেননি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে যে খেসারত আজ তার দলকে দিতে হচ্ছে তা থেকে বেরুবার জন্য আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের এই দাবিটি বিএনপি সেই ডে-ওয়ান থেকেই করে আসছে। আর প্রস্তাবিত এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে জঙ্গী-জামায়াতের তত্ত্বাবধানে বিএনপি দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও ও পেট্রোলবোমা মেরে মাসের পর মাস মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। তাছাড়া, তাদের বিদেশী মুরব্বীদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ওপর অযাচিত অন্যায় ও অযৌক্তিক চাপ প্রয়োগ করতেও কসুর কম করেনি। পাঠকের স্মরণ আছে নিশ্চয়ই, এতসব সত্ত্বেও যখন সরকারকে একবিন্দু টলানো গেল না বরং দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্রমশই উজ্জ্বলতর হলো তখন ‘দেশনেত্রী’ খালেদা জিয়া লন্ডন পাড়ি জমিয়েছিলেন তার মহাদুর্নীতিবাজ পুত্রের সঙ্গে বসে ভবিষ্যত ষড়যন্ত্রের নীল-নকশা প্রণয়নের জন্য। তিনিও বিদেশ গেলেন আর দেশে বিদেশী নাগরিক, ব্লগার, মুক্তবুদ্ধি প্রকাশক হত্যা শুরু হলো, শিয়াদের ওপর বোমা হামলা হলো। বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব থাকার দাবি তুলে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার অপপ্রয়াসও কম হলো না। যে বিএনপি এতকাল জামায়াত-বিএনপিকৃত হত্যা-সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক কর্মকা- হিসেবে অভিহিত করে এসেছে এবং সরকার এসব সহিংসতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে গেলেই জামায়াত-বিএনপি এবং তাদের সুশীল বাবুরা ও বিদেশী প্রভুরা সব শেয়ালের এক রা’-এর মতো করে এই বলে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে যে, সন্ত্রাস দমনের নামে সরকার প্রতিপক্ষীয় রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদদের ঘায়েল করছে। মোদ্দাকথা, তারা বাংলাদেশে মৌলবাদী সন্ত্রাসী থাকার কথা এতদিন একটিবারের জন্যও স্বীকার করেনি। তাদের মতে এসবই নাকি সরকারের সাজানো নাটক। র‌্যাব ও পুলিশ যখন প্রায়দিনই অস্ত্র, গোলা-বারুদ, জেহাদী পুস্তিকা-পুস্তক আর বোমা বানাবার পদ্ধতি ও জঙ্গী প্রশিক্ষণের সিডি ইত্যাদিসহ জামায়াত-শিবির-বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করছে তখন বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ হতে এদের সন্ত্রাসী নয়, রাজনৈতিক কর্মী বলে দাবি করা হয়। হাতেনাতে গ্রেফতার, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, সাক্ষী-সাবুদ-প্রমাণ ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াত এদের সন্ত্রাসী হিসেবে মানতে নারাজ। আর এর সহজ ও একমাত্র কারণটি হচ্ছে এই যে, এসব সন্ত্রাসীকে তো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিএনপি-জামায়াতই মাঠে নামায় মূলত পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সক্রিয় সহায়তায়। সরকার উৎখাতের জন্য গণতান্ত্রিক পথে না গিয়ে সন্ত্রাসের পথে কার্যসিদ্ধি সহজতর বলে ভেবেছিল তারা। তাছাড়া, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক কোন নির্বাচনে বিজয় লাভ আদৌ সম্ভব কিনা সে ব্যাপারেও বিএনপি দ্বিধান্বিত থাকায় সহিংস পন্থাই কার্যকর হবে বলে তাদের ধারণা। আর এই ধারণাটি সন্দেহাতীতভাবে বিদেশী প্রভুদের পরামর্শে তারেক ও বেগম জিয়ার কাছ থেকেই এসেছে। তারেকের জঙ্গী কানেকশনের তথ্য, দলিল-দস্তাবেজ ও প্রমাণ-পুঞ্জি যে দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের কাছে আছে তাতে বলাই বাহুল্য! মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম, উলফা, লস্করে তৈয়বা, জেএমবি, হুজি, জঈশে মোহাম্মদ, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম, হিজবুত তাহরির ইত্যাদির সঙ্গে জামায়াতের সহায়তায় খালেদা-তারেকের সম্পর্ক যে কত নিবিড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না নিশ্চয়ই। পাঠকদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে যে, এই তারেক জিয়াই এক সময় ঢাকার এক জনসভায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী গংদের হাতে হাত রেখে এই ঘোষণা দিয়েছিল যে, ‘আমরা একই পরিবারের সদস্য।’ এরপর থেকে অদ্যাবধি তাদের মধ্যকার সখ্য, পেয়ার-মহব্বত এতই গাঢ় যে একে ‘এক দুযে কে লিয়ে’ বললেও ভুল হবে না। অর্থাৎ খালেদা-তারেকের বিএনপি ও জামায়াত এক অভিন্ন সত্তা। বেগম জিয়া সভা-সমিতিতে বক্তব্যদানকালে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মুক্তির জন্য ও যুদ্ধাপরাধ বিচার কার্যক্রম বানচালের জন্য যেসব গণবিরোধী ও মিথ্যা বক্তব্য দেন তাতে তার প্রতি ধিক্কারই জন্মায় কেবল! তিনি দেশে যুদ্ধাপরাধী থাকার কথা স্বীকারই করেন না। বঙ্গবন্ধু সব যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে গেছেন, বিএনপি নেতারা এই মিথ্যা প্রচারও কম করেননি; যুদ্ধাপরাধীদের জন্য তার যে দিল্ চপ্সি, তার যে আকুলতা ও ব্যাকুলতা তা এটাই স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করে যে, তিনি ও তারেক বিএনপিকে সর্বতোভাবে জামায়াতের বরকন্দাজে পরিণত করেছেন। অবশ্যই এ কথাও সত্য যে, এই দুটি সংগঠনই প্রধানত পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র ক্রীড়নক হিসেবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই রাজনীতির প্রধানতম বৈশিষ্ট্যই হলো ভারতবিদ্বেষ। ভারতবিরোধী ব্যাপক অপপ্রচার, বাঙালী সংস্কৃতিবিরোধী ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম আর ইসলাম ধর্মের অপব্যবহারের মাধ্যমে সরল প্রাণ খোদাভীরু মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে বাংলার আবহমান সেক্যুলার তথা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও চরিত্র ধ্বংস করার যাবতীয় আয়োজনের মাধ্যমে এক জঘন্য অপরাজনীতির সূত্রপাত ঘটিয়েছে তারা। আইএসআই’র রীতিমতো প্যারলে আছে বিএনপি। এ কথা আইএসআই’র সাবেক প্রধান জেঃ দুররানী পাকিস্তানের আদালতে একটি মামলায় সাক্ষ্যপ্রদানকালে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন। একাত্তরে সশস্ত্র যুদ্ধে ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের জন্মলাভ পাকিস্তানবাদী প্রতিক্রিয়াশীল ও তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ীদের পক্ষে কিছুতেই মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি এবং হচ্ছেও না। আর তাই যে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সেই ভিতটিকেই ধসিয়ে দেবার সর্বক্ষণিক প্রয়াস-প্রচেষ্টা চালায় বিএনপি ও জামায়াত। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভপূর্বক ক্ষমতারোহণের কোন প্রকার চিন্তা-চেতনাই এদের মাথায় বোধকরি এখন আর কাজই করে না। বিশেষত একদিকে এক কোটির ওপর ভুয়া ভোটার বাতিল হওয়ার এবং অন্যদিকে নামমাত্র বা পদলেহী নির্বাচন কমিশন ও কমিশনার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইত্যাদি যখন কোনভাবেই বানানো যাচ্ছে না তখন বিএনপিকে সন্ত্রাস ও মিথ্যার বেসাতীর আশ্রয় নিতে হচ্ছে বৈকি! এ রাজনীতি যে কপটতা ও ভ-ামির নামান্তর তা তারা বোঝেন না, তা কিন্তু নয়। তবু তাদের ওই রাজনীতিই করতে হয়, কেননা, বাংলাদেশকে তাদের ভাষায় ‘ভারতীয় সংস্কৃতি-ও প্রভাব’ ইত্যাদি থেকে মুক্ত করা তাদের রাজনীতি। আসলে আমরা যে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরই একটি অংশ এই সত্যটি ওরা বেমালুম চেপে যায় পাকিস্তানের হয়ে এক ধরনের মতলবী স্বার্থ হাসিলের রাজনীতি করে বলে। ভারতেও কোটি কোটি মুসলমান রয়েছে। সেখানে তাদের মুসলমানত্ব কিন্তু খর্ব হয়নি বা হচ্ছে না তারা ভারতীয় জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে। যত গোল তা এই আমাদের বেলায়। আমরা বাঙালী মুসলমানরা নাকি একাত্তরে স্বাধীনতা লাভ করার মধ্য দিয়ে ভারতের গোলামে পরিণত হয়েছি (এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য প্রগতিবাদী দলকে লক্ষ্য করে এসব মিথ্যাচার করে বেড়ায়)। বরং প্রতিবেশী ও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে মর্যাদার ভিত্তিতেই যে আমরা গভীর সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ আছি ও থাকতে চাই এই সত্যটি ওরা কিন্তু জানে, তা সত্ত্বেও এই মিথ্যার বেসাতি চালায় তাদের পাকিস্তানস্থ মুরব্বীদের মনঃতুষ্টির জন্য আর নিজেদের জঘন্য মতলবী স্বার্থ হাসিলের নিমিত্তে। বিএনপির এই ভারতবিরোধী রাজনীতি বর্তমান যুগে যে কত অচল, কত অসাড় আর পাকিস্তানের হয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করা যে কত বড় নির্বুদ্ধিতা তা বোধকরি বিএনপি নেতৃবৃন্দ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। তাই বেগম জিয়া ও অন্যদের মাঝে মধ্যেই ভারতের নেতাদের কাছে নির্লজ্জের মতো ধরনা দিতে দেখতে পাই আমরা। তাদের এই অসাধু ও কপট রাজনীতি-দৃষ্টে বাংলাদেশের আমজনতা অলক্ষে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসে বৈকি!
×