ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

অর্জন বিশাল ॥ চ্যালেঞ্জ দলীয় দুর্বলতা, জঙ্গীবাদ ও মাদক

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

অর্জন বিশাল ॥ চ্যালেঞ্জ দলীয় দুর্বলতা, জঙ্গীবাদ ও মাদক

মজবুত আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে মহাজোট সরকারের প্রধান শরিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নতুন নেতৃত্বের সন্ধানে দলের জেলা পর্যায়ের কাউন্সিল অধিবেশন আয়োজনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। লক্ষ্য আগামী ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই সকল জেলা কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরনো বাতিল মাল ঝেড়েমুছে নতুন নেতৃত্ব তুলে এনে নিউ ব্লাড সঞ্চালন করা এবং দলকে আরও গতিশীল, আরও ত্যাগী ও সাহসী করে তোলা। এরই মধ্যে ২৭ জানুয়ারি বুধবার চাঁদপুর জেলা কাউন্সিলের মাধ্যমে ১২ বছর যাবত জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা বিতর্কিত এক ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে স্থানীয় জনপ্রিয় মেয়র নাসির ভূঞাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। লোকে বলে এবার চাঁদপুর আওয়ামী লীগ প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে। দলের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬৬টির কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। ১১টির এখনও বাকি। তন্মধ্যে বুধবার চাঁদপুর জেলা কাউন্সিল অধিবেশন হলো। আরও ৬টির তারিখ হলো কক্সবাজার ৩১ জানুয়ারি, ভোলা ১৮ ফেব্রুয়ারি, কিশোরগঞ্জ ১৯ ফেব্রুয়ারি, নেত্রকোনা ২৩ ফেব্রুয়ারি, সুনামগঞ্জ ২৫ ফেব্রুয়ারি ও শরীয়তপুর ২৭ ফেব্রুয়ারি। অবশিষ্ট ৪টির মধ্যে কুমিল্লা উত্তর, দক্ষিণ এবং মহানগর ও গাইবান্ধার তারিখও অচিরেই ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায় থেকে গড়ে ওঠা দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও সংগঠিত রাজনৈতিক দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা অর্জন তথা বাঙালীর স্বপ্নসাধ আপন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ যা যা অর্জন ঘরে তুলে এনে দিয়েছেন তার সবই করেছেন জনগণের শক্তির ওপর ভর করে। আর সেই জনগণকে সংগঠিত করেছেন বঙ্গবন্ধুর কালোজয়ী নেতৃত্ব ও দলের মজবুত ভিত। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, জঙ্গী দমন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান এবং সর্বোপরি দেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে তুলে আনার পাশাপাশি ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নসহ যা যা করেছেন, করছেন ও সাহসের সঙ্গে স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করে চলেছেন, সবকিছুর মূলেও দলের সাংগঠনিক শক্তি। একটা সময় ছিল যখন বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে কুদেতাদের রক্তচক্ষু আর বুলেটের মুখে দলকে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা যাবে অনেকেই তা বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু আজকের অবস্থা ভিন্ন। কেবল ১৯৯৬, ২০০৯ বা ২০১৪ তিনবার দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার মূল শক্তিও দল এবং বঙ্গবন্ধুর মতোই কালোজয়ী নেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দল তো আর আপনা-আপনি হাঁটে না, দলকে হাঁটাতে হয় এবং এই হাঁটানোর নেতৃত্বই দিচ্ছেন আজকের ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ এবং ‘সুচিন্তক’ হিসেবে বিশ্বের সফল নেতৃত্বের কাতারে উঠে আসা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সাহসী ও দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি সরকার পরিচালনার সঙ্গে দলকেও সুসংগঠিত করে চলেছেন। বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পা রেখে দ্রুত হেঁটে চলেছে এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যম আয়ের ইন্ডিকেটরের সর্বশেষ রেখা অতিক্রম করে উন্নত দেশের কাতারে উঠে আসা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আগামী ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। অর্জন বিশাল বিশাল। এত দ্রুত অর্জনের ইন্ডিকেটরগুলো তাবত বিশ্ব অবাক-বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে। “২০১৩ সালের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ছিল- কিছু কিছু দেশ মানব উন্নয়ন সূচকে এবং অন্যান্য দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভাল করেছে; কিন্তু ছোট দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ উভয় ক্ষেত্রে ভাল করেছে।” আর আজকের চিত্র হলো বাংলাদেশ বিশ্বের নিরাপদ বসবাসের যোগ্য দেশের মধ্যে ষষ্ঠ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমবার্গ এভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে যে, এ বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬% (বাংলাদেশ আশা করছে ৬.৭%)। অর্থাৎ বিশ্বের যে সব দেশ ভাল করছে এমনি ৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ (ভিয়েতনামসহ) দ্বিতীয় অবস্থানে (ঝবপড়হফ নবংঃ ঢ়বৎভড়ৎসবৎ) রয়েছে। পক্ষান্তরে চীন ৬.৫% জিডিপি গ্রোথ নিয়ে ৪র্থ অবস্থানে রয়েছে। অবশ্য ভারত ৭.৪% জিডিপি গ্রোথ নিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী সম্প্রতি একটি সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরে বলেন, শ্রীলঙ্কা ৫ম স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান তালিকায় উঠে আসতে পারেনি। সেমিনারটির আয়োজন করে আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটি। প্রফেসর ইমেরিটাস আনিসুজ্জামান, বিচারপতি শামসুদ্দিন আহমদ মানিক প্রমুখ বক্তৃতা করেন। উন্নয়নের চিত্রের দিকে তাকালে এক এক করে চোখে ভেসে বেড়াবে নিজস্ব অর্থে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, রাশিয়ান ফেডারেশনের সহায়তায় নির্মাণাধীন ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেল, রাজধানী ঢাকায় হাত-পা ছড়ানো ফ্লাইওয়ারের পাশাপাশি কমিউটার ট্রেন, মেট্রোরেল এবং সাবওয়ে বা ভূতল-রেল নির্মাণের পরিকল্পনা, একেকটি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে। একই সঙ্গে গত ৭ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য উৎপাদন, এ বছর ৩৪ পয়েন্ট ৩৫ মিলিয়ন অর্থাৎ তিন কোটি ৮০ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত, যা বিশ্বে খাদ্য ও মৎস্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ৪র্থ; বিদ্যুত উৎপাদন এ বছর ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াট (যা ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৩১০০ মেগাওয়াট); মাথাপিছু আয় বছরে এখন ১৩১৪ মার্কিন ডলার (যা ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৪২৭ ডলার)। যে কারণে গ্যালাপের জরিপে বলা হয়েছে বিশ্বের জীবনমানের ক্ষেত্রে নিরাপদ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে। যে কারণে শেখ হাসিনা বিশ্বের দুর্লভ সম্মান চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ, সুচিন্তক এবং ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে উঠে এসেছেন। তার অবস্থান রাশিয়ার ভøাদিমির পুতিন, জার্মানির এঞ্জেলা মের্কেল এবং ভারতের নরেন্দ্র মোদির কাতারে। আগেও বলেছি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে জাতিকে পাপমুক্ত করে শেখ হাসিনা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা; বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নারীর ক্ষমতায়নÑ এ সব নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদন ও বণ্টনে সামঞ্জস্য রেখে দেশের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এখানে প্রকাশ পেয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ক্যারিশমা। এখনও যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে তার মধ্যে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো লুটেরা টাকাঅলা বিতর্কিত লোকদের দলে অনুপ্রবেশ, জঙ্গীবাদের কুৎসিত চেহারা এবং মাদকদ্রব্যের ব্যাপক প্রসার। বিতর্কিত লোকদের অনুপ্রবেশ রোধ করার একমাত্র উপায় হলো দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে ধোলাই শিল্পের চর্চা। সেটি করা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। বুধবার চাঁদপুরে জেলা কাউন্সিল অধিবেশন হলো তা ১১ বছর পর। পূর্বের কাউন্সিল হয় ২০০৫ সালে। তাতে দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি পদে ভোট না দিয়ে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঢাকায় চলে আসেন। পরবর্তীতে এমন এক লোককে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় যাকে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। চাঁদপুর জেলায় ৮টি থানার মধ্যে শোনা যায় ২টি ছাড়া আর কোনটাতেই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব আসেননি। সবই জেলার সেই তথাকথিত সভাপতির পকেট কমিটি এবং ওই সব কমিটি দ্বারা প্রণীত কাউন্সিলর তালিকাও অবৈধ। জেলা সম্মেলনের প্রাক্কালে মঙ্গলবার চাঁদপুর প্রেসক্লাবে এসে সভাপতি পদপ্রার্থী পৌর মেয়র নাসির ভূঞা, ইউসুফ গাজী, ডাঃ টিপু এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীগণ একযোগে এই অভিযোগ করে বলেন, এই অবৈধ তালিকা দিয়ে কোনভাবে ভোটাভুটি হতে পারে না এবং তারা কেউ তাতে অংশ নেবেন না। নেতৃবৃন্দ একই সঙ্গে এ কথাও বলেন, বর্তমানে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় যে কমিটি রয়েছে সেটিও সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এই কমিটির ব্যাপারে জেলা কমিটিতে কোন আলোচনা হয়নি এবং অনুমোদনও লাভ করেনি। কাজেই ঐ অবৈধ কমিটি দ্বারা প্রণীত কাউন্সিলর তালিকাও অবৈধ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো জঙ্গীবাদ। বহির্বিশ্বের আইএস, আল কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুড প্রভৃতির আদলে চরিত্রে গড়ে ওঠা এবং মাঝে-মধ্যে উঁকি দেয়া কিছু জঙ্গী সংগঠন, যেমন হিযবুত তাহরীর, হিযবুল মুজাহিদীন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হামযা ব্রিগেড প্রভৃতি। ব্লগার-বিদেশী হত্যা বা উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি কর্মকা-ের মাধ্যমে মাঝে-মধ্যে অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। এদের মূল দল তথা সদস্য সরবরাহকারী হচ্ছে আদালতের অবজারভেশনে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত ও শিবির। অথচ এই দলটি এখন ২০ দলীয় জোটের দ্বিতীয় প্রধান শরিক এবং বেগম খালেদা জিয়া ও দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বিদেশে (লন্ডন) আত্মগোপনকারী তার ছেলে তারেক রহমান এদের নেতা। যদিও এখন আর বড় কিছু করার শক্তি খালেদা জিয়ার নেই। তবু চ্যালেঞ্জ বটে। বিশেষ করে তাদের কাছে অঢেল অর্থশক্তি। একটু পেছনে তাকালে দেখা যাবে সপ্তদশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ অঞ্চলে সমৃদ্ধি ছিল ঈর্ষণীয়। তখন যে কেউ বাংলায় আসত আর ফিরে যেতে চাই না। তখন একজন ফরাসী পর্যটক লিখেছিলেন “ইবহমধষ যধং যঁহফৎবফ মধঃবং ড়ঢ়বহ ভড়ৎ বহঃৎধহপব, নঁঃ হড়ঃ ধ ংরহমষব ড়হ ভড়ৎ ফবঢ়ধৎঃঁৎব”. আজও বাংলাদেশ সমৃদ্ধির উচ্চাসনে। কিন্তু আজ আর বিদেশী বেনিয়া বা পর্তুগীজ দস্যু নয়, আজ আসছে জঙ্গী, মৌলবাদ দস্যু। তৃতীয়ত ড্রাগ বা মাদকদ্রব্য, যা রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মাদকদ্রব্যের বিষক্রিয়া শিক্ষিত মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর মানুষের ঘরে অনুপ্রবেশ করে তরুণ জীবনগুলো বিনাশ করে চলেছে। আগে ছিল গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, এখন সামনে চলে এসেছে ইয়াবা নামের মারণাস্ত্র লাল টেবলেট (পত্র-পত্রিকায় ছবি), যা কিশোর-তরুণ-যুব সমাজকে ধ্বংস করে চলেছে। এই ইয়াবা নাকি আসে মিয়ানমার থেকে। এটি হেরোইনের চেয়েও ভয়ঙ্কর। যে একবার ধরেছে খুব কমই তা থেকে ফিরে আসতে পেরেছে। দিনে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত এর পেছনে ব্যয় করতে হয়। ইয়াবাসেবী তরুণ-তরুণী এই ব্যয় নির্বাহের জন্য যে কোন কাজ করতে পারে। চুরি, হাইজ্যাক, এমনকি ঐশীর মতো মা-বাবাকেও খুন করতে পারে। এটি জীবনাস্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর। মাঝে-মধ্যে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে; কিন্তু চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। এগুলোর মূল চোরাচালানীরা প্রভাবশালী। তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে, ডিস্ট্র্রিবিউশন বা বাজারজাতকরণের কাজ করে বস্তি বা নিম্নমানের এলাকায় বসবাসকারী নারী-পুুরুষ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নারকোটিক্স বলে একটা বিভাগ রয়েছে সরকারের। কখনও কখনও তাদের হাতেও হেরোইন, ইয়াবা চোরাচালানী ধরা পড়ে ঠিকই; কিন্তু তারপর কি হয় কেউ জানে না। বদির মামলার কি হলো তাও অজানা। এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং কেবল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দলই সেই সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। আশার কথা হলোÑ এই প্রথম দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক দিয়ে পৌরসভা নির্বাচন হলো এবং সামনে একইভাবে ইউপি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত ভিত রচনার সুযোগ পাবে। এতে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করাও সহজ হবে। তবে সরকারকে অবশ্যই মাদকদ্রব্যের প্রসার রোধে র‌্যাবের মতো বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হবে। ঢাকা ॥ ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×