ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিকেজি ৮-১০ টাকায় বিক্রি, উৎপাদন ব্যয় ২০ টাকা

পেঁয়াজের দাম কমায় মাঠ পর্যায়ের চাষী মহাসঙ্কটে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

পেঁয়াজের দাম কমায় মাঠ পর্যায়ের চাষী মহাসঙ্কটে

এম শাহজাহান ॥ মাঠ পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়। চাষীদের দাবি, উৎপাদনে ২০ টাকা খরচ হয়েছে প্রতিকেজিতে। এই বাস্তবতায় উৎপাদনপর্যায়ে চাষীরা বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। যদিও রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। ভোক্তারা খুশি এই দামে। উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় চাষীরা পেঁয়াজ নিয়ে মহাসঙ্কটে পড়েছেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তাই লোকসান ঠেকাতে এবার পেঁয়াজের আমদানি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সংস্থা টিসিবিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণ, আমদানি হলে শুল্ক পুনর্বহাল এবং পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষীদের ভর্তুকি প্রদানের দাবি করা হয়েছে। চাষীদের পক্ষে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এসব দাবিসংবলিত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন দেশের সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের চাষী মোঃ রফিক মিয়া। এদিকে, চাষীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রফিক মিয়ার এই চিঠি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ গত বছরের পুরোটা সময় অস্থির ছিল পেঁয়াজের বাজার। ভোক্তাদের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি ও বাজারজাত করে সরকারকে দাম সামাল দিতে হয়েছে। ওই সময় প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮০-১০০ টাকা দিয়ে ভোক্তাকে কিনতে হয়েছে। মাঠপর্যায়ে সেই পেঁয়াজের দাম এখন মাত্র ৮-১০ টাকা। প্রতিবছর পেঁয়াজের নিজস্ব উৎপাদন দিয়েই সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। মাত্র ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির বিপরীতে ব্যবসায়ীরা মূল্য নিয়ে যতসব কারসাজির আশ্রয় নিয়ে থাকে। তাই আমদানি কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদনে চাহিদা পূরণে সরকার বেশি জোর দিচ্ছে। আর এ কারণেই চাষীদের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য। গত বছরের পুরোটা সময় এই পণ্যটি নিয়ে সরকার বেশি চিন্তিত ছিল। পেঁয়াজের অতিরিক্ত দাম ভোক্তাদেরও ভুগিয়েছে। এ কারণে পেঁয়াজচাষীদের দাবিসংবলিত চিঠিটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে যাতে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। এখন ৮-১০ টাকায় মাঠপর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এতে তারা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে আগামীতে চাষীরা উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। আর সেটি হলে পণ্যটি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও বেকায়দায় পড়তে হবে। তাই শীঘ্রই পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, এখন পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুম। তাই এ সময়ে আমদানির ওপর শুল্ক পুনর্বহাল করা হতে পারে। এছাড়া টিসিবিও পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারে। এদিকে পেঁয়াজের উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে তথ্য নেয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সারাবছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪-২৬ লাখ টন। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২০ লাখ টন। প্রতিমাসে চাহিদা রয়েছে দুই লাখ টনের। রমজান ও কোরবানি ঈদের সময় বাড়তি আরও এক লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রতিবছর পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদা নিয়ে তৈরি হয় সঙ্কট। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা করে থাকে। তবে এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদী চাষীরা। মেহেরপুরে এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মেহেরপুরের পেঁয়াজচাষী মোঃ রফিক মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, উৎপাদন ভাল হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮-১০ টাকায়। অথচ প্রতিকেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ২০ টাকার মতো। এ অবস্থায় পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি দাবি জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি অবগত আছে কৃষি মন্ত্রণালয়ও। তিনি বলেন, কৃষকরা ন্যায্যমূল্য চায়। আর এটি হলে পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষীরা উৎসাহিত হবেন। সারাবছর সঠিক দামে পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। খুঁচরা বাজারে খুশি ভোক্তারা ॥ দু’মাস আগেও প্রতিকেজি পেঁয়াজে ভোক্তাদের ৬০-৬৫ টাকা গুনতে হয়েছে। এখন এই পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। এতে খুশি ভোক্তারা। দাম কমায় পেঁয়াজের চাহিদাও বেড়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন সাইজের দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। কাপ্তানবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির জানান, দাম কম হওয়ায় পেঁয়াজের বিক্রি বেড়েছে। ক্রেতারা ন্যায্যদামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। শুক্রবারের বাজার পরিস্থিতি ॥ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বাজারে এসে ভোক্তারা আগের দামেই পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন। মানভেদে প্রতিকেজি আমদানিকৃত ও দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকার মধ্যে। এছাড়া সবজির দাম আরও কমেছে। প্রতিকেজি দেশী টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। এছাড়া গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, করল্লা, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমেছে। এছাড়া চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি এবং আদার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিকেজি সরু চাল ৪২-৫৪ টাকায়, মাঝারি মানের ৪০-৪৪ ও মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৪ টাকায়। ভোজ্যতেলের দাম সামান্য হ্রাস পেয়েছে। সয়াবিন তেল লুজ প্রতি লিটার ৮৩-৮৫, বোতল পাঁচ লিটার ৪৪০-৪৬০, বোতল এক লিটার ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চিনি ও ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেড়েছে রসুনের দাম। প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকায়। পিকনিক, বিয়েশাদি ও অন্যান্য শীতকালীন উৎসবের কারণে মুরগি ও হাঁসের চাহিদা বাড়লেও মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ইলিশ মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া নদীনালা, হাওড়-বাঁওড়ের পানি কমে আসায় বাজারে মিঠাপানির মাছের সরবরাহ বেড়েছে।
×