ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী অর্থবছরে সোয়া লাখ কোটি টাকার এডিপি আসছে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

আগামী অর্থবছরে সোয়া লাখ কোটি টাকার এডিপি আসছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জন্য ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আসছে। যা চলতি অর্থবছরে হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। ওই অর্থবছর বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধরা হতে পারে ৭ দশমিক দুই শতাংশ, যা চলতি বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ শতাংশ ধরা হয়। প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্য পূরণে এডিপির আকার বাড়ছে। নতুন এডিপিতে শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুত খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, খাতা কলমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার বাড়িয়ে লাভ নেই। এক্ষেত্রে টাকার অঙ্কে আকার বাড়ার চেয়ে প্রকল্প সমাপ্ত করার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব বড় প্রকল্প রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে এডিপির আকার না বাড়িয়েও করা যায়। এগুলো প্রকল্পের কাজ শুরু করতে কিংবা বাস্তবায়ন কাজ অব্যাহত রাখতে খুব বেশি অর্থায়ন সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম শেষ না করে শুধু বরাদ্দ বাড়ালে তা বাস্তবায়নের শঙ্কা থেকেই যায়। বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় যেটা ধরা হবে সেটি ব্যয় করা কোন সমস্যা নয়। সেটি তো ব্যয় হবেই। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। এটি বাস্তবায়নের সক্ষমতা না বাড়লে আকার বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। অতীতে যেভাবে প্রচুর নতুন প্রকল্প নিয়ে এডিপির আকার বাড়ানো হয়েছিল, আগামী অর্থবছরও যদি তাই করা হয় তাহলে কিছুই হবে না। সূত্র জানায়, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য এডিপির আকার ধরা হতে পারে এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছর ২০১৮-এর জন্য এডিপির আকার প্রক্ষেপণ করা রয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার ২০ কোটি টাকা। ২০১৯ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা এবং অর্থবছর ২০২০-এ গিয়ে এডিপির আকার দাঁড়াবে এক লাখ ৯৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। গড়ে প্রতি অর্থবছর এডিপির আকার হবে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯ কোটি টাকা করে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য নিরসন ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। বাংলাদেশের উন্নয়ন ‘রূপকল্প ২০২১’-এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) এবং মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব পরিকল্পনার উন্নয়ন কৌশলের আলোকে গৃহীত অর্থনৈতিক খাতভিত্তিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। সরকারের গৃহীত এসব পরিকল্পনা ও বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন এডিপি তৈরি করা হবে। সূত্র জানায়, নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) প্রকল্পভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় গুরুত্ব দেয়া হতে পারে সেগুলো হচ্ছে, সরাসরি দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প, কৃষি-কৃষিভিত্তিক শিল্প-বিদ্যুত উৎপাদন এবং ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতি সংক্রান্ত প্রকল্প, সরকারী বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) প্রকল্প এবং বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প। এছাড়া নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে বরাদ্দ নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। প্রকল্প সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে উন্নয়নসহযোগী দেশ বা সংস্থার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদের দিকে নজর রেখে বরাদ্দ দেয়া হবে। এডিপিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উন্নয়ন ফল কাঠামোতে চিহ্নিত ক্ষেত্রের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে অগ্রাধিকার প্রদান করে সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির করা হবে। তবে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে একান্ত অপরিহার্য বা উচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পগুলো সরকারী তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সরকারী বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নের সহায়ক নতুন প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে। সূত্র জানায়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে মধ্য আয়ের দেশে যেতে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো, বিনিয়োগকারীদের দ্বারা চিহ্নিত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা,পাবলিক বিনিয়োগ ঘাটতি দূর করতে আধুনিকায়ন পরিকল্পনা তৈরি, বিদ্যুত ও জ্বালানির সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও ভর্তুকির পরিমাণ যুক্তিযুক্তকরণ, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব পুনর্গঠন ও গতিশীলতা আনয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, পোশাক খাত থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অ-পোশাক রফতানি খাতের জন্য উদ্দীপক কাঠামোর উন্নতীকরণ, রফতানি সম্ভাবনাসহ কৃষি কৌশল পুনর্বিবেচনা করা, কৃষকদের ভাল প্রণোদনা প্রদানে মূল্য নীতি প্রণয়ন ও গ্রামীণ অবকাঠামোর ওপর বেশি জোর প্রদান করা, পশু ও মৎস্য ক্ষেত্রে মনোযোগ সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে প্রমাণভিত্তিক নিরূপণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের সাহায্যে সঠিক কৌশল নির্ধারণ করা এবং আইসিটি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট বিধিগত এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা ও এর সুনির্দিষ্ট সমাধানের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা। আগামী এডিপি প্রণয়নে এসব বিষয় মাথায় রাখা হবে। চলতি অর্থবছরে এডিপির মোট আকার সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তার অংশে ৩৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির প্রক্রিয়া। সেই সঙ্গে এডিপির কাজও। তবে বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের এডিপি সংশোধনের কাজ করছে। এরপরই শুরু হবে নতুন এডিপি তৈরির কাজ। তবে এর আগে বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জন্য নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৩ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মধ্যে, যা চলতি অর্থবছর দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৪৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেশি।
×