ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লে. জে. মাহবুব বললেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

লে. জে. মাহবুব বললেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। অথচ তারই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমানের মুখেই আবার উচ্চারিত হচ্ছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা। একই রাজনৈতিক দলের ভেতর থেকে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিপরীতমুখী এসব মন্তব্যে সাধারণ লোকের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয় নিয়ে বিএনপির ভেতর থেকে ভিন্নধর্মী বক্তব্যের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী কোন দল নয়। গত ১৯ ডিসেম্বরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, অনেকে বলেন মুক্তিযুদ্ধে এত লোক নিহত হয়েছে। আসলে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ওই সভায় তিনি প্রকারান্তরে নিহত ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যাকে অস্বীকার করে বক্তব্য রাখেন। এরপরই বিষয়টি নিয়ে দেশে এখনও সমলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। শুধু খালেদা জিয়া নয়, তার এ বক্তব্যের পর দলের অনেকইে নেত্রীর পক্ষ নিয়ে ইতোমধ্যে শহীদের সংখ্যা নিয়ে এখনও বিতর্কিত মন্তব্য করে যাচ্ছে। সঠিক সংখ্যা নিয়ে একধাপ এগিয়ে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গুনে গুনে ৩০ লাখ শহীদের হিসাব দাবি করেছেন। এছাড়া নজরুল ইসলাম খান, রুহুল কবির রিজভীও খালেদা জিয়ার সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। অথচ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান ঠিকই উচ্চারণ করেছেন এদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। এক সাগর রক্তে স্নাত এ দেশ। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্রের আকাল চলছে। গণতন্ত্রের সঙ্কট থেকেই আরও অনেক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রের সঙ্কট কেটে গেলে অন্য সঙ্কটও কেটে যাবে উল্লেখ করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সমকালীন রাজনীতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই এখন সবচেয়ে জরুরী। এজন্য সবাইকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধসে গেছে। গুম-হত্যা-রাহাজানি এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশী-বিদেশী কেউ এখন নিরাপদ নয়। নিরাপত্তাহীনতায় মানুষ শঙ্কিত। এমন অবস্থা মানুষ আগে কখনও দেখেনি। তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করাই তাদের কাজ। অথচ তারা এখন চরম কর্তৃত্ববাদী আচরণ করছে। দেশে সুশাসনের চরম অভাব রয়েছে। দুর্নীতিতে গোটা দেশ ছেয়ে গেছে। টিআইবির সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশ শীর্ষ ১৩তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের জন্য এটি গর্বের নয়। দেশ গভীর সঙ্কটে। সরকার বলছে, অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতুসহ অনেক কিছু হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে অনেক তালি বাজছে। কিন্তু আমরা যদি গভীরে যাই, অনেক কিছু বাইরে থেকে চকচকে মনে হয়। সোনা মনে হয়। কাছ থেকে যদি দেখিÑ না সোনার বেশে পিতল। তিনি বলেন, আমরা দেশে কোন হানাহানি চাই না। তাহলে আজকে কেন এসব দ্বন্দ্ব, সংঘাত। আমি মনে করি যারা অপশক্তি তারাই দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। আজকে স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের বীরউত্তম খেতাব পাওয়া জিয়াউর রহমানকে ছোট করা হয়। জিয়াউর রহমান প্রথমে নিজ নামে পরে বঙ্গবন্ধুর নামে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তার স্বাধীনতার ঘোষণার পরই যুদ্ধের দাবানল জ্বলে উঠে। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। তার বহুদলীয় রাজনীতির দ্বার উন্মুক্তের সুযোগ নিয়েই আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে এসে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দুইজনই মহান নেতা ছিলেন। তাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে জিয়াউর রহমানেরও উল্লেখ করেন তিনি। জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, এ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এনডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ। এদিকে প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের কোন আদালত বর্তমানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতকে প্রাইভেট সেক্টরে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। সকল মামলা-মোকদ্দমা শাসক দলের ইচ্ছায় হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক যে অপরাধ করেছেন, তা চাপা দিতেই দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচীতে সরকার স্বস্তিতে থাকে না। আজকের এ মানববন্ধন বানচাল করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা করা হয়েছে। কারণ এ দেশে বিরোধী দলের কোন অধিকার নেই। মানববন্ধনে মহিলা দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, সরকারকে বলব এখনও সময় আছে দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহার করুন। নইলে ক্ষমতাকে আর বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। মানববন্ধনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
×