ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রবিবার শেষ হচ্ছে মাসব্যাপী আয়োজন

শেষ মুহূর্তে বিশেষ ছাড়ে পণ্য কিনতে মানুষের ঢল বাণিজ্যমেলায়

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

শেষ মুহূর্তে বিশেষ ছাড়ে পণ্য কিনতে মানুষের ঢল বাণিজ্যমেলায়

রহিম শেখ ॥ শুক্রবার ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলা হয়ে উঠেছিল জনসমুদ্র। মেলার শেষ সপ্তাহের ছুটির দিন থাকায় সকাল থেকেই দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের স্রোত ছিল মেলা প্রাঙ্গণের দিকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় রীতিমতো মানুষের ঢল নামে। বিকেলের দিকে মেলায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সন্ধ্যায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। সারাদিনই মেলার আশপাশের সড়কে যানজট লেগে ছিল। শেষ মুহূর্তের পছন্দের পণ্য কিনতে দিনভর স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। অধিকাংশ ক্রেতাই ছুটে বেড়িয়েছেন বিশেষ ছাড় কিংবা ডিসকাউন্টে পণ্য কিনতে। এজন্য মেলায়ও প্রায় সব পণ্যেই বিশেষ ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ছুটির দিনে ক্রেতার বাড়তি চাপে বিক্রিতে রীতিমতো রেকর্ড গড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তারপরও সন্তুষ্ট নন অনেক বিক্রেতাই। বলছেন, ছুটির দিনগুলো ছাড়া অন্যদিনগুলোতে ভাল বেচাকেনা হয়নি। দাবি জানিয়েছেন, সময় বাড়ানোর। আবার কেউ বলছেন, বিক্রি নয়, পণ্যের পরিচিতিটাই বড় কথা। মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুারো (ইপিবি) জানিয়েছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামীকাল রবিবার। এদিন সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হচ্ছে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলা। এজন্য শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা যুদ্ধে শামিল হতে শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের গন্তব্য বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণের দিকে। ইজারাদারদের দেয়া তথ্য মতে, ছুটির দিনগুলোতে গড়ে প্রায় ২ লাখ ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ক্রেতার সমাগম ঘটেছে শুক্রবার। এদিন সরেজমিন বাণিজ্যমেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০টায় মেলার প্রধান গেট খুলতেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেল হতে না হতেই মেলা প্রাঙ্গণ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগমনে পুরোপুরি পূর্ণ হয়ে যায়। শেষ বিকেলে আগত যারা তাদের প্রায় ঘণ্টাখানেক দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ টিকেট কাটতে হয়েছে। মেলার আশপাশের সড়কে দুপুরের পর থেকে যানজট লেগে ছিল। বিকেলে সংসদ ভবন ও খামারবাড়ি সংলগ্ন মোড় থেকে মানুষ হেঁটেই অনেকটা মিছিলের মতো মেলায় আসতে থাকেন। অপরদিকে মিরপুর থেকে আসা মানুষ আগারগাঁও মোড় থেকেই হাঁটা শুরু করেন। কারণ এ রাস্তায় দুপুরের পর থেকে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়। অন্যদিকে গণপরিবহনে যাওয়া মানুষ মেলা প্রাঙ্গণের কাছাকাছি নেমে হেঁটে যেতে পারলেও বেশি ভোগান্তি হয়েছে নিজস্ব বাহনে করে আসা দর্শনার্থীদের। এদিকে দিনভর মেলার প্রবেশপথে ব্যাপক লোক সমাগমে হিমশিম খেতে হয় শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার শেষ ছুটির দিনে দুপরের পর থেকেই স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের প্রচ- ভিড়। ক্রেতার বাড়তি চাপে দিনভর স্টল মালিকদের হিমশিম খেতে হয়। কয়েকজন বিক্রি প্রতিনিধি জনকণ্ঠকে জানান, বাণিজ্যমেলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই মেলার শেষ সময়ে প্রকৃত ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। যাঁরা এখন মেলায় আসছেন, সবাই পণ্য কিনছেন। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ডেপুটি ডিরেক্টর ড. বিকর্ণ কুমার ঘোষ জানান, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় এবার শান্তিপূর্ণভাবে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বাণিজ্যমেলায় এসেছেন। গত কয়দিন শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও ক্রেতাসমাগম বেশি ছিল। মেলায় সার্বিক নিরাপত্তা ভাল ছিল সন্তুষ্টির কথা জানান এ কর্মকর্তা। রাজধানীর ধানম-ি থেকে মেলায় এসেছিলেন ফারিয়া জান্নাত এ্যানি। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, মেলার শুরুতে কয়েকবার আসলেও কেনাকাটা হয়নি। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ঝক্কি ঝামেলা থাকলেও অনেক পণ্যেই বিশেষ ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। গতবারের তুলনায় পণ্যের মূল্য কিছুটা বেশি বলে জানালেন রাজধানীর মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা সেলিনা হোসেন। তার মতে, দেশীয় পণ্য অনেক আকর্ষণীয়। তাছাড়া মেলার শেষভাগে প্রায় সব পণ্যেই ছাড় পাওয়া যায় তাই শতকষ্টের মধ্যেও মেলায় ছুটে আসা। শুক্রবার দুপুরে মেলার ঠিক মাঝখানে বড় টাওয়ারের পাশে কথা হয় কাজীপাড়ার বাসিন্দা এহসানুল করীম ও নাঈমা রহমান দম্পতির সঙ্গে। জানালেন, প্লাস্টিক, গৃহস্থালি, ইলেকট্রনিক্স ও কিছু প্রসাধনী কিনেছেন। শেষ সময়ে মেলায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, পুরো মাস ব্যস্ততায় মেলায় আসা হয়নি। তাছাড়া শেষ সময়ে কেনাকাটার আলাদা আনন্দ। যদিও ভিড় সামলাতে একটু বেগ হতে হয়েছে বলে জানান এই দম্পতি। শুক্রবার সপরিবারে মেলায় আসেন রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা সাব্বির রহমান। জানালেন, প্রতিবছরই মেলায় আসার চেষ্টা করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব উপভোগ করি। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যও কেনা যায়। কথার এক ফাঁকে তিনি জানালেন, দেশের পরিচিত সব ব্র্যান্ডের প্যাভিলিয়নে বিক্রেতাদের আচরণ অনেক ভাল। তারা বিভিন্ন পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছেন। তিনি অভিযোগ করে জানান, এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী দোকানি ক্রেতাদের বোকা বানিয়ে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করছেন উচ্চ দামে। শুক্রবার বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে গৃহস্থালি, প্লাস্টিক, ফার্নিচার ও ইলেক্ট্রনিক্সের স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে। বিক্রির তালিকায় আরও আছে কসমেটিক্স, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, মেশিনারিজ, কার্পেট, জুয়েলারি, জুতা, কাপড়সামগ্রী ইত্যাদি। শুক্রবার বাণিজ্যমেলার প্লাস্টিক পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ক্রেতা দেখা গেছে। বেঙ্গল, আরএফএল, এনপলি, তানিন, গাজীসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যের স্টলে সারাদিনই ভিড় লেগে ছিল। বাণিজ্যমেলায় অন্য সব পণ্যের তুলনায় ইলেক্ট্রনিক পণ্যের চাহিদাও বেশ। শুক্রবার ওয়ালটন, রানার, যমুনা, সনিসহ বিভিন্ন নামীদামী প্যাভিলিয়নে সারাদিনই ভিড় লেগেছিল। এদিকে দেশী-বিদেশী ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটরেও ছিল ক্রেতাদের আকর্ষণ। দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন, যমুনা, ভিশন ছাড়াও বিদেশী ব্র্যান্ড শার্প, সিমেন্স, সিঙ্গার, গোদরেজ, র‌্যাংগস, এলজি ফ্রিজের প্যাভিলিয়নের ক্রেতা দর্শকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে বিদেশী পণ্যের চেয়ে দেশী পণ্যের দাম তুলনামূলক কম এবং মানেও ভাল হওয়ায় সেদিকেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা। এদিকে মেলার সময়ের পরিধি কমতে থাকায় বিশেষ মূল্যছাড় ও উপহার দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন দোকানিরা। প্রায় প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নে নগদ ক্রয়ের ওপর বিভিন্ন অঙ্কের ছাড়, নানা ধরনের উপহার, স্ক্র্যাচকার্ডে পণ্য জিতে নেয়ার সুযোগ, প্যাকেজ অফারে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আরএফএলের নির্বাহী কর্মকর্তা (বিক্রয়) আরিফুর রহমান বলেন, প্রতিবছর মেলায় ১০ শতাংশ ছাড় দেয়া হয় আরএফএলের পণ্যে। প্রতিবছর মেলার শেষদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়লেও এবার ছিল শুরু থেকেই। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে যা পণ্য বিক্রি হয় সাপ্তাহিক ছুটির দিন দুটিতে তার দুই থেকে তিনগুণ বেশি পণ্য বিক্রি হয় বলে তিনি জানান। ২৮ দিনে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বেশি ভ্যাট আদায় ॥ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ভ্যাট আদায় হয়েছে। মেলার ২৭তম দিন পর্যন্ত ভ্যাট আদায় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার কাছাকাছি, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। মেলার শেষ দিন পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ ২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তারা। বাণিজ্যমেলায় একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স ও অটোমোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। এ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ আকরামুজ্জামান অপু জানান, পরপর কয়েক বছর মেলায় সেরা ভ্যাটদাতা হিসেবে ওয়ালটন সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে সেরা পুরস্কারের সম্মান অর্জন করেছেন। এটা আমাদের যথাযথভাবে ভ্যাট প্রদানে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেন, ভ্যাট দিয়েছিল ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯০৫ টাকা। এ বছর ওয়ালটন এখন পর্যন্ত দশ লাখ টাকারও বেশি ভ্যাট প্রদান করেছে, যা একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বোচ্চ।
×