ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অন্যত্র ২ জনের মৃত্যু ॥ মুন্সীগঞ্জে ক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে ওসি হাসপাতালে

সড়ক দুর্ঘটনায় ২ র‌্যাব সদস্য ও আনসার কমান্ডার নিহত

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

সড়ক দুর্ঘটনায় ২ র‌্যাব সদস্য ও আনসার কমান্ডার নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শুক্রবার অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছে। দুপুরে নারায়ণগঞ্জে সুতা বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে টহল পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই র‌্যাব সদস্য নিহত হন। এদের মধ্যে সার্জেন্ট মনসুর উদ্দিন ঘটনাস্থলে এবং চালক কনস্টেবল সোহেল হাসপাতালে মারা যান। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে র‌্যাবের আরও ৬ সদস্য। ঝিনাইদহে আনসার কমান্ডার এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন (পিসি) নিহত হয়েছেন। রাস্তা পার হতে গিয়ে একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কায় জাহাঙ্গীর গুরুতর আহত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থানীয় সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া-লৌহজং মহাসড়কে বাস চাপায় রিয়া বেগম নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। নিহত রিয়া কুয়েতপ্রবাসী আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী। দুর্ঘটনায় মহাসড়কে দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। উত্তেজিত জনতার পিটুনিতে আহত ওসিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া, রাজশাহীতে দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় আবদুল আজিজ নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। নারায়ণগঞ্জ ॥ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আড়াইহাজারের পুরিন্দা বাজার এলাকায় সুতা ভর্তি ট্রাকের সঙ্গে র‌্যাবের একটি টহল পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংর্ঘষে ভ্যানটি দুমড়ে-মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই সার্জেন্ট মনসুর (৩৪) ও হাসাপাতালে কনস্টেবল (চালক) সোহেল (৩০) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় র‌্যাবের আরও ৬ সদস্য আহত হয়েছে। নিহত দুইজনই র‌্যাব-১১ এর আদমজী সদর দফতরে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় আদমজী র‌্যাব-১১ এর দফতরের সহকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দুপুর বারো টায়। র‌্যাব -১১ এর এএসপি শামীম কবির জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে র‌্যাবের একটি পিকআপ ভ্যানে ৮ সদস্য টহল দিচ্ছিল। পুরিন্দা বাজার এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সুতা ভর্তি ট্রাকের সঙ্গে র‌্যাবের টহল পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষের র‌্যাবের পিকআপ ভ্যানটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন র‌্যাব-১১ এর সার্জেন্ট মনসুর উদ্দিন। এ ঘটনায় আহত হন র‌্যাবের আরও ছয় সদস্য। স্থানীয়রা গুরুতর আহত র‌্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল ও ঢাকার সিএমএইচে নিয়ে যায়। পরে চালক কনস্টেবল সোহেল হাসপাতালে মারা যায়। দুর্ঘটনার পরপর সুতাবাহী ট্রাকটি পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। আদমজীতে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর সিও লে কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থলে সার্জেট মনসুর উদ্দিন মারা যান। আর কনস্টেবল সোহেল রানা বেলা দুটোয় সিএমএইচে মারা যান। আহতরা হলেন এএসআই মিজানুর রহমান, এএসআই মাহফুজুর রহমান, ইন্সপেক্টর আবদুল্লাহ, নায়েক জয়নাল, কনস্টেবল রাসেল ও সিপাহী আজাহার। এদের মধ্যে চারজনকে সিএমএইচে ও দুইজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। নিহত মনসুর উদ্দিন সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট ও সোহেল পুলিশের কনস্টেবল থেকে র‌্যাবে যোগদান করেন। লে কমান্ডার গুলজার হোসেন জানান, নিহত মনসুরের পিতার নাম মনির আহমেদ। বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালির পশ্চিম নাথমুরা গ্রামে ও নিহত সোহেলের পিতার নাম মজিবুর রহমান, বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী থানার গোপালপুরে। তিনি আরও জানান, তাদের লাশ ময়নাতদন্ত ও জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ঢামেকে র‌্যাব সদস্যকে দেখতে গেলেন ডিজি ॥ স্টাফ রিপোর্টার রাতে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় আড়াইহাজারে দুর্ঘটনায় আহত র‌্যাব সদস্য আজহারকে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ। ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগে এসে আহত র‌্যাব সদস্যের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে নিহত র‌্যাব সার্জেন্ট মনসুর (৪২) ও কনস্টেবল সোহেল রানার (২৯) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোখলেছুর রহমান জানান, ঘাতক ট্রাক চালক ও সহকারী আহত হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে আড়াইহাজার ও নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ঝিনাইদহ ॥ শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় আনসার কমান্ডার এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন (পিসি) (৫৯) নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে শহরের আনসার অ্যাডজুট্যান্ট কার্যালয়ের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি মোটর-সাইকেলের ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত জাহাঙ্গীর রাজবাড়ীর আল্লাদীপুর গ্রামের মজিদ মিয়ার ছেলে। মুন্সীগঞ্জ ॥ ঢাকা-মাওয়া-লৌহজং মহাসড়কের কুমারভোগ পদ্মা সেতু পুনর্বাসন কেন্দ্রের সামনের রাস্তায় ঢাকাগামী বাস চাপায় রিক্সারোহী রিয়া বেগম (৩০) নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে উত্তেজিত জনতা টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লৌহজং থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন জনতাকে মহাসড়ক থেকে সরাতে চলা (কাঠ) দিয়ে জনতাকে তাড়া করে। এতে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওসিকে লাঞ্ছিত করে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ওসি একটি মোটরসাইকেলে করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ সামসুজ্জামান জানান সোয়া ১২টায় জানান, মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হবে। নিহত রিয়া বেগম কুমারভোগ গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী। এদিকে দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা লৌহজং থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেনকে গণধোলাই দিয়ে ওয়ারলেস ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। ওসিকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিক্সারোহী রিয়া বেগম (৩০) নিহত হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা দুর্ঘটনাস্থলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। দুর্ঘটনার পর সাদা পোশাকে এ ওসি গাছের খড়ি নিয়ে জনতাকে এলোপাথাড়ি পেটাতে গেলে উল্টো হামলা চালিয়ে বেদম প্রহার করে। ওসি সবকিছু ফেলে রেখে পথচারীর এক মোটরবাইকে উঠে কোনক্রমে প্রাণ বাঁচায়। মোটরসাইকেল ওঠার পরও ওসিকে লাথি ও কিল-ঘুষি দেয় জনতা। এ সময় মোবাইল, ওয়্যারলেস ও জুতা ফেলেই পালায় ওসি। লৌহজং থানার ওসি (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, লৌহজং থানার ওসির ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওসি জাকির হোসেন লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। তবে ইউনিফর্ম ছাড়া গেঞ্জি পরে লোকজনকে পেটানোর বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় বাসের ধাক্কায় আব্দুল আজিজ (৫০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
×