ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সুপ্রীমকোর্টের কজলিস্ট অনলাইনে

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সুপ্রীমকোর্টের কজলিস্ট অনলাইনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাগজে মুদ্রিত কার্যতালিকা (কজলিস্ট) বন্ধ করে দিচ্ছে সুপ্রীমকোর্ট। ওইদিন থেকে সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের (আপীল ও হাইকোর্ট) কার্যতালিকা শুধু অনলাইনেই দেখা যাবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেছিলেন পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে কাগজে মুদ্রিত কার্যতালিকা (কজলিস্ট) বন্ধ হবে। পরে আইনজীবীদের দাবির মুখে প্রধান বিচারপতি কাগজে ছাপা কজলিস্ট আরো ১৫ দিন চালু রাখার সিদ্ধান্ত দেন বলে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করার পরই আইনজীবী সমিতি এক জরুরী সভা ডেকে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, কাগজের কজলিস্ট থাকলে কোর্ট চলবে, অন্যথায় কোর্ট চলবে না। এর পর সন্ধ্যায় আইনজীবী সমিতির নেতারা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে দেখা করে অনলাইনের পাশাপাশি কাগজে ছাপা কজলিস্ট চালু রাখার আর্জি জানান। তারা প্রধান বিচারপতিকে বলেন, অনেক আইনজীবীর স্মার্টফোন নেই কিংবা তারা ইন্টারনেটের সঙ্গে অভ্যস্ত নন। এরপর প্রধান বিচারপতি ১৫ দিন সময় দিয়ে বলেন, সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে আইনজীবী ও তাদের সহকারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সম্পাদক এস এম মুনীর ও সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, মামলাজট ও জনদুর্ভোগ কমানো, খরচ বাঁচানো এবং ডিজিটাল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কাগজের কার্যতালিকা তুলে দেয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আপীল বিভাগের রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন ও অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (হাইকোর্ট বিভাগ) সাব্বির ফয়েজ প্রমুখ। আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের পয়লা নবেম্বর থেকে সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের কার্যতালিকা কাগজে ছাপানোর পাশাপাশি একযোগে অনলাইনেও প্রদর্শন করা শুরু হয়। তিন মাস পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতি অনুসরণ করার পর পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে কাগজে ছাপা কার্যতালিকা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এ উদ্যোগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে আন্দোলন সেটাকে আরও বেগবান করবে এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, ৩১ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটা থেকে হাইকোর্ট বিভাগের প্রত্যেকটি বেঞ্চের পরবর্তী দিনের কজলিস্ট চূড়ান্তভাবে অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে যে কজলিস্ট ছাপা হয় তাতে প্রতিটি কজলিস্টের পেছনে ৪শ’ টাকা খরচ পড়ে। যার খরচ বছরে দাঁড়ায় ২১ কোটি টাকা। অথচ গ্রাহক চাঁদা বাবদ মাত্র ৬০ লাখ টাকা আসে। আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনের ছাপা কজলিস্টের কলেবর বহনযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব নয়। কারণ প্রায় ৪শ’ পৃষ্ঠার এ কজলিস্ট ছাপাতে প্রতিদিন ৬৫টি গাছ কাটতে হয়। তাই পুরোপুরি অনলাইনে যাওয়ার পর এখন এ গাছ রক্ষা পাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবর মাসের শুরুতে কজলিস্টের পুরো কার্যক্রম অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। ওই সময় একটি নির্দেশনাও জারি করা হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল ১ নবেম্বর থেকে উভয় বিভাগের কজলিস্ট অনলাইনে এবং কাগজে ছাপা একত্রে তিন মাস পরীক্ষামূলকভাবে চালু থাকার পর কাগজের কার্যতালিকা বন্ধ করে দেয়া হবে। জামিন আদেশ নিশ্চিতকরণ জালিয়াতি রোধে জামিন আদেশ নিশ্চিতকরণের জন্য সফটওয়ার চালু করেছেন সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। একই সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টিও জানান সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাইকোর্ট থেকে জামিনের যে আদেশ নিম্ন আদালতে পাঠানো হতো, তা নিশ্চিত করতে সুপ্রীমকোর্টে মাত্র একটি টেলিফোনের ব্যবস্থা ছিল। যার ফলে অনেক বেশি সময় লাগত। ওই সময় জালিয়াতির ঘটনাও ঘটত। তিনি বলেন, এসব সমস্যা মাথায় নিয়ে একটি সফটওয়ার তৈরি করা হয়েছে। যেখানে যে জামিন আদেশটি জেলা আদালতসমূহে পাঠানো হবে, তারই একটা কপি আপলোড করা থাকবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পাসওয়ার্ড দিয়ে ওই জামিন আদেশটি যাচাই করতে পারেব। সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইট (www.supremecourt.gov.bd) মাধ্যমে জামিন আদেশ ও কার্যতালিকার সুবিধা পাওয়া যাবে বলেও তিনি জানান। পরে সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রীমকোর্টের রিসার্স ও রেফারেন্স অফিসার শামীম সুফি এবং সিস্ট্যাম এনালিস্ট কাজী পারভেজ আনোয়ার অনলাইন কজলিস্ট ও জামিন আদেশ নিশ্চিতকরণ সফটওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
×