ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সিইওর সঙ্গে বৈঠক

কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মোবাইলফোন গ্রাহকদের কলড্রপ মনিটর করার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। বৃহস্পতিবার মোবাইলফোন অপারেটরদের প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। এর আগে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত থাকলেও এতদিন মোবাইল অপারেটররা গ্রাহকদের কলড্রপ নিয়ে কোন ক্ষতিপূরণ দিত না। বিষয়টি নিয়ে অপারেটরদের বেশ কয়েকদফা চিঠিও দিয়েছে বিটিআরসি। এবার প্রতিমন্ত্রী গ্রাহকদের কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে অপারেটরদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ উপেক্ষা করা হলে অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, এ্যাকশনে যাওয়ার পরও মনিটরিং হচ্ছে না কেন, তা বিটিআরসির কাছে জানতে চান প্রতিমন্ত্রী। এটা মনিটরিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গ্রাহকদের ক্ষতি করে অপারেটররা অর্থ হাতিয়ে নিতে পারবেন না। গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে বিটিআরসিকে কাজ করতে হবে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, কলড্রপের জন্য গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ আছে। কিন্তু অপারেটররা এটা বাস্তবায়নে নানা টালবাহানা করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের আবার চিঠি দেয়া হবে। তাদের সঙ্গে বসে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা হবে। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে গ্রাহকদের ওপর মনিটরিং অনেকখানি নির্ভর করে আমরা যদি সঠিকভাবে জানতে পারি, কোন গ্রাহক কতবার কলড্রপ করলো বা ক্ষতিপূরণ পেল না, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে এলে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। তা না হলে কোটি কোটি কলড্রপ বিটিআরসি কোনভাবেই হিসাব রাখতে পারবে না। তারানা হালিম বলেন, বিটিআরসিকে বিনামূল্যে ফোন করে গ্রাহকরা জানাবেন, আপনারা মনিটর করবেন অভিযোগ কতখানি সত্য। আইটিইউয়ের (আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) নীতিমালার বাইরে কতগুলো কলড্রপ হয়, তার বাইরে কতগুলো কলড্রপ হলো তা গ্রাহককে জানাতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একটি শর্টকোডের মাধ্যমে দ্রুত কল সেন্টার করার নির্দেশ দেন তিনি। গাইডলাইনের বাইরে যে কলড্রপ হচ্ছে তা গ্রাহককে জানান এবং ক্ষতিপূরণ দিয়ে এসএমএস দেন। এতে গ্রাহক মনে করবেন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন তারা, তা না হলে মনে করবেন এর মধ্যে ফাঁক আছে, আমি কোন ফাঁক রাখতে চাই না। কলড্রপের বিষয়ে মোবাইল গ্রাহকরা সিরিয়াস, মন্ত্রণালয়ও সিরিয়াস। বিটিআরসি কোয়ালিটি অব সার্ভিসের ওপর অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। অভিযোগ দেয়ার জন্য খুব শীঘ্রই বিটিআরসিতে কল সেন্টার স্থাপন করার কথা বলেন। বর্তমানে বিটিআরসিতে মোবাইল ফোন, টেলিফোন, ই-মেইলে অভিযোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বিটিআরসি বিষয়টি নিয়ে অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়টি অপারেটররা কোনভাবেই মেনে নেয়নি। বৈঠকে রাজি হলেও বাস্তবে অপারেটররা কোন কাজই করেনি। মোবাইল ফোনে প্রতি কলড্রপে এক মিনিট করে ক্ষতিপূরণ দিতে অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফররত অবস্থায় তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে কলড্রপের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এরপরই অপারেটরদের বিটিআরসি কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে গত ১৯ জানুয়ারি একটি নির্দেশ জারি করে। সেই সময় এ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এ্যামটব) সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির বিটিআরসির নির্দেশ পেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। কতখানি কলড্রপ হলো, আর কত মিনিট ফেরত দেয়া হলো এটা বিটিআরসি যথাযথভাবে মনিটর করবে। মনিটর ঠিক হলে গ্রাহকরা কলড্রপের ক্ষতিপূরণ যথাযথই পাবেন। কলড্রপসহ মোবাইল ফোন গ্রাহকদের নানা ভোগান্তির প্রেক্ষাপটে গতবছর আগস্টে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। কলড্রপ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান বা গ্রাহকদের টকটাইম ফেরত দিতে হবে। উল্লেখ্য ২০১৪ সাল থেকে বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি অপারেটরদের দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও গতবছর প্রতিটি কলড্রপের জন্য গ্রাহকদের এক রুপী করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান চালু করা হয়েছে।
×