ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাকিয়া জিতু

কন্যাসন্তান জন্মের সামাজিক প্রেক্ষাপট

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

কন্যাসন্তান জন্মের সামাজিক প্রেক্ষাপট

আমাদের সমাজে নারী এবং পুরুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিগত ভিন্নতা রয়েছে, যেখানে পুরুষের প্রাধান্য বিরাজমান। এর ফলে সন্তান কামনার পছন্দে চলে আসে পুত্রশিশু। কয়েকজন দম্পতির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণপূর্বক প্রতীয়মান হয় যে, কন্যাসন্তান নিয়ে সামাজিক বিড়ম্বনাই পুত্রসন্তান কামনার অন্যতম কারণ। ‘বেটির ভক্ত বান্দির ভক্ত’ - এ উক্তির মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক এবং একটি বেসরকারী কলেজের শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ এমনভাবেই জানান তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। ব্যক্তি জীবনে উক্ত গবেষকের একান্ত প্রত্যাশা ছিল যে, তাঁদের প্রথম সন্তানটি হবে কন্যা। তবে প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার পর নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের দ্বারা তিনি উপযুক্ত বাক্যবানে জর্জরিত হয়েছেন। ‘বাহে বেটা আইছেতো টাকা ধরি আইছে, বেটি আইছেতো টাকা ধরি যাবার আইছে’ - এটি বেগম রোকেয়ার পায়রাবন্দ এলাকার একটি জনশ্রুতি। এভাবে কন্যাসন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই সমাজ তাকে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দিচ্ছে। সন্তান কামনার পদক্ষেপ হিসেবে একজন নারী এবং পুরুষ সমাজ-স্বীকৃতভাবে সন্তান উৎপাদনের অনুমোদন লাভ করে বিয়ে নামক পদবাচ্যের মাধ্যমে। বিয়ের পরপরই নতুন বউয়ের কোলে সুদর্শন পুত্রসন্তান দেয়া হয় পুত্রসন্তান জন্মের আকাক্সক্ষা থেকে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। কন্যাশিশু যে কোন জাতির ভবিষ্যত এবং এ কথা বাংলাদেশের জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য। নারীশিশুর প্রতি সামান্য যতœ, উষ্ণ ও আন্তরিক ভালবাসা এক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। পুত্রসন্তানের উপর নির্ভর করার সনাতনী মানসিকতার বাস্তব চিত্রের ভিন্ন বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। পূর্বে সন্তান জন্মের সময় কন্যাসন্তানের নাড়ি কাটার পর বিচ্ছিন্ন অংশ বাড়ির ভেতর এবং সন্তান পুত্র হলে তা বাড়ির বাইরে জনবহুল স্থানে পুঁতে রাখার প্রচলন ছিল। এমনকি পুত্রসন্তানের ক্ষেত্রে নাড়ির বিচ্ছিন্ন অংশ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যা¤পাসে পুঁতে রাখার নজির বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজওয়ানা ত্বিষা বলেন যে, এ পরিবর্তনটি মোটেই সুখকর নয়; বরং এর মাধ্যমে নারীর প্রান্তিকতাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ‘নহি দেবী নহি সামান্যা নারী আমি চিত্রাঙ্গদা...’, ঠিক রবীন্দ্র্রনাথের চিত্রাঙ্গদার মতো করে বড় হয়ে ওঠার জন্য কন্যাশিশুকে শুরু থেকেই সুযোগ করে দিতে হবে। যতই ঝড়-ঝাপটা আসুক না কেন হার মানলে চলবে না। আর কবি সুুকান্তের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ বিশ্বকে আগামীর কন্যা বা পুত্র নির্বিশেষে সকল শিশুর জন্য বাসযোগ্য করে যেতেই হবে!
×