ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

জে কে রাউলিং : কাল্পনিক চরিত্রের সফল লেখিকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

জে কে রাউলিং : কাল্পনিক চরিত্রের সফল লেখিকা

জে কে রাউলিং নামটি অনেকের কাছে পরিচিত। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, এক সময় জে কে রাউলিং এই হ্যারিপটার গল্পটিকে নিয়েই প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কেউ তার গল্পটিকে ছাপাতে রাজি হয়নি। মজার বিষয় হচ্ছে, এই কাল্পনিক চরিত্রের ‘হ্যারিপটার’ই জয় করেছে পুরো বিশ্ব। যার মাধ্যমে একজন সফল নারী লেখিকার আবির্ভাব হয় পাঠক হৃদয়ে। ১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই ইংল্যান্ডের গ্লুসেস্টারশায়ারের ইয়েটে জন্ম নেয়া জোয়ান ক্যাথলিন রাউলিং আজ সারা দুনিয়ার পাঠকদের মাঝে একজন ‘কাল্পনিক চরিত্রের লেখিকা’ হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ঁঁজীবনের এক সময়ে চরম দরিদ্রতা ভর করে রাউলিংয়ের জীবনে। প্রথমদিকে নিজের বাচ্চার খরচ সামলানোর সামর্থ্য রাউলিংয়ের ছিল না। এ কারণে তিনি চলে গেলেন সরকারী সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে, আর এরই ফাঁকে চলতে থাকল লেখা। পরে অবশ্য তিনি একটি স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ পান। লেখালেখি কিন্তু তার থেমে থাকেনি। কখনও কখনও ক্যাফের মধ্যে খুব দ্রুত লিখতেন সেসময় হয়ত ছোট্ট মেয়ে জেসিকা ঘুমিয়ে থাকত তার পাশে। এভাবেই জে কে রাউলিংয়ের হাতে এক সময় জন্ম নিল সাহিত্যের অমর চরিত্র হ্যারিপটার। ১৯৯০ সালে জে কে রাউলিংয়ের মাথায় আসে ‘হ্যারিপটার’ গল্পের ধারণা। একদিন তিনি ম্যানচেষ্টার থেকে লন্ডনে যাচ্ছিলেন পাতাল ট্রেনে চড়ে। ট্রেনটিতে যাত্রীদের প্রচ- ভিড় ছিল। সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর এক অবস্থা বিরাজ করছে পুরো ট্রেনজুড়ে। এই ট্রেনেই দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা অতিবাহিত করতে হয়েছে জে কে রাউলিংকে। এই অবস্থাতেই তিনি চিন্তা করছিলেন নতুন কোন একটি লেখা নিয়ে। হঠাৎই তার স্বপ্নের মনের জানালায় কড়া নাড়ে এক এতিম ছেলে। যেই ছেলেটি পালিত হচ্ছে তার এক ফুফু ও ফুপার কাছে। যারা দুজনই খুব নীচুমনের অধিকারী। ছেলেটি শত অন্যায় অত্যাচার সহ্য করলেও সে জানে না যে, তার মধ্যে রয়েছে এক মায়াবী জাদুকরী ক্ষমতা। একই সঙ্গে তিনি তার মনের ক্যানভাসে একে ফেলেন সেই এতিম ছেলেটির মুখাবয়ব। মোটা ফ্রেমের চশমা পরিচিত কালো চুলের হ্যারিকে নিয়ে ওই সময় থেকেই লেখা শুরু“করেন জে কে রাউলিং। অবশেষে ১৯৯৫ সালে শেষ করেন হ্যারিপটার সিরিজের ১ম গল্পটি। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সাতটি বইয়ের প্রথম ৬টি বই সারা পৃথিবীতে ৩২৫ মিলিয়ন কপিরও বেশি বিক্রি হয়েছে এবং ৬৪টিরও অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। জে কে রাউলিংয়ের ছোটবেলাতেই স্বপ্ন ছিল, যখন তার বই বাজারে বের হবে তখন সবাই হটকেক হিসেবে তা গ্রহণ করবে। কিন্তু বাস্তবে প্রথমদিকে ঘটে পুরোই উল্টো। তার হ্যারিপটার সিরিজের ১ম গল্পটি লেখা শেষ করার পর বইটি প্রকাশ করার জন্য প্রকাশকদের কাছে অনেক ঘুরতে হয়েছিল রাউলিংকে। প্রকাশকদের ধারণা ছিল বইটি তাদের ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন করবে। আটজন প্রকাশক ফিরিয়ে দেয়ার পর ব্লুমসবারি নামের একটি প্রকাশনী ১৯৯৭ সালের ২৬ জুন হ্যারিপটার সিরিজের প্রথম বই ‘হ্যারিপটার এ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন’ প্রকাশ করে। এর পরের ইতিহাস সকলেরই জানা। একেবারে অচেনা-অজানা জে কে রাউলিং হয়ে যান বিশ্ব বিখ্যাত। হ্যারিপটার সিরিজের গল্প লেখার পর সারা বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন রাউলিং। মাঝে মধ্যে ছদ্মনামেও লেখেন তিনি। ‘রবার্ট গালব্রেইথ’ ছদ্মনামে তিনি ‘কুকোস কলিং’ নামের একটি বই লেখেন ২০১৩ সালে। তার এই বইটি যখন প্রকাশিত হয় তখন খুব বেশি কপি বিক্রি হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে যায় যে, এই বইটি রাউলিংয়ের লেখা। ব্যাস রাতারাতি কয়েক শত থেকে ১.৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় একই বই। এই কাল্পনিক চরিত্রের জননীর লেখা ‘হ্যারিপটার’ উপন্যাস অবলম্বনে ৭টি মুভি নির্মাণ করা হয়েছে। বইয়ের মতো রূপালি পর্দায়ও সমানভাবে জনপ্রিয়তা পায় এই মুভি সিরিজের প্রতিটি মুভি। এছাড়াও জে কে রাউলিং বড়দের জন্য লিখেছেন ‘দ্য ক্যাজুয়াল ভ্যাকেন্সি’ নামের উপন্যাস। এতে রাউলিং তুলে ধরেছেন যৌনতা, মাদক ও গ্রাম্য রাজনীতিকে। হ্যারিপটার সিরিজের বই কিনতে যেমন আগাম বুকিংয়ের হিড়িক পড়ত, এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। হ্যারিপটার ছাড়াও ছোটদের জন্য অন্য ধরনের জাদুবিশ্বের গল্প নিয়ে আসছেন ব্রিটিশ লেখিকা জে কে রাউলিং। এর প্রথম ছবির নাম ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস এ্যান্ড হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম।’ এর মধ্য দিয়েই চিত্রনাট্যকার হিসেবে অভিষেক হচ্ছে তার। জে কে রাউলিং এবং হ্যারিপটার সিরিজ ফিলোসফার্স স্টোন প্রকাশের পর থেকে অনেক পুরস্কার পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ চারটি হুইটেকার প্লাটিনাম বুক এ্যাওয়ার্ডস, তিনটি নেসলে স্মার্টিস বুক প্রাইজ, দুটি স্কটিশ আর্টস কাউন্সিল বুক এ্যাওয়ার্ডস, উদ্বোধনী হুইটব্রেড বর্ষসেরা শিশুতোষ গ্রন্থ পুরস্কার, ডব্লিউ এইচ স্মিথ বর্ষসেরা বই। ২০০০ সালে ‘হ্যারিপটার এ্যান্ড দ্য প্রজনার অব আজকাবান’ শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বিভাগে ‘হিউগো’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। কিন্তু পায়নি। তবে ২০০১ সালে ‘হ্যারিপটার এ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার’ বইটি ওই পুরস্কার ছিনিয়ে নেয়। এক সময়ে যার নিজের বাচ্চার খরচ সামলানোর সামর্থ্য ছিল না, সেই নারীর নাম উঠে আসে বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারীর তালিকায়। ২০০৪ সালে ফোর্বস পত্রিকা তার সম্পত্তির পরিমাণ ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করে। এ বিরল অর্জন রাউলিংকে বই লিখে ধনী হওয়া প্রথম বিলিয়নিয়ার নারী হওয়ার মর্যাদা দান করে। ২০০৬ সালে ফোর্বস পত্রিকা তাকে অপরাহ উইনফ্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী নারী বলে অভিহিত করেছে। ২০০৭ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে বিশ্বের ক্ষমতাবান সেলিব্রেটিদের তালিকায় জে কে রাউলিং ছিলেন ৪৮তম। ২০০৭ সালে টাইম ম্যাগাজিন রাউলিংকে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ রানার-আপ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১১ সালে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ম্যাগাজিন রাউলিংকে ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী হিসেবে নির্বাচিত করে।
×