ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আলোচনা-সমালোচনার দশম সংসদের আজ তৃতীয় বছরে পা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

আলোচনা-সমালোচনার দশম সংসদের আজ তৃতীয় বছরে পা

সংসদ রিপোর্টার ॥ গভীর সঙ্কটকাল ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দশম জাতীয় সংসদের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। আজ তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করছে এই সংসদ। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পর এবারই প্রথম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ছাড়াই ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি এই সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বিএনপির পরিবর্তে দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি। কেমন কাটল জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনটিÑ এ প্রশ্নের উত্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। গত দুই বছরে আগের যে কোন সংসদের থেকে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের উপস্থিতি বাড়লেও অধিবেশনগুলো প্রাণবন্ত হয়নি। বিরোধী দলের আসনে বসার পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রিসভাতেও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ থাকায় গত দুই বছরে নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত বিতর্ক, দফায় দফায় ওয়াকআউট, অসংসদীয় বা ব্যক্তি আক্রমণাত্মক বক্তব্য ছিল না। তবে সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর বৃহত্তর দুটি সংস্থা ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাচনে সভাপতি পদে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ও স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশকে নতুন মর্যাদায় আসীন করেছে। সংসদের দুই বছরপূর্তি প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই অনেক বিতর্ক তুলেছেন। অনেকে বলেছেন ১৫১ জন বিনাভোটে নির্বাচিত। এই সংসদ নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে এসব বিবেচনায় নেই, মানুষ দেখতে চায় সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে কি-না? সেই অর্থে সরকার যথাযথভাবে কাজ করছে। একই সঙ্গে সংসদও যথাযথভাবে ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের অংশ হিসেবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তিন সদস্য মন্ত্রিসভায় থাকা নিয়েও অনেকে সমালোচনা করেছেন। তবে আমি মনে করি, বিরোধী দল সরকারের উন্নয়নের অংশীদার হতে চায় বলেই তাঁরা মন্ত্রিসভায় আছেন। তাছাড়া তাঁরা সরকারের ভাল কাজের প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও করছেন। বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা অতীতের মতো সংসদ বর্জনের রেওয়াজ থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা সদস্যপদ টিকিয়ে রাখার জন্য সংসদে আসি না, আমরা প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সংসদে উপস্থিত থেকে সরকারের ভাল কাজের প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও করছি। আমাদের অনেক সদস্য একবারে নতুন হওয়া সত্ত্বেও কল্পনাতীত ভাল করছেন। মন্ত্রিসভায় তিন সদস্য থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সংসদে আসি বিরোধী দল হিসেবে, মন্ত্রিসভায় তিনজন আছেন এ কথা তখন আমাদের মাথায় থাকে না। আমরা মনে করি, অতীতের যে কোন বিরোধী দলের চেয়ে বর্তমান বিরোধী দল সংসদ কার্যকরে ভাল ভূমিকা রাখছে। আমরা গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করেছি, এই সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছি। আবার সরকারের ভাল কাজের প্রশংসাও করছি। বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদই সরকারের মেয়াদ। অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি দশম সংসদের পাশাপাশি সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। গত দুই বছরে আটটি অধিবেশনের ১৬৮ কার্যদিবসে ৪৮ বিল পাস হয়েছে, যার মধ্যে সংবিধান সংশোধনী বিল ও দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিলসহ বেশকিছু আলোচিত বিল রয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি সংসদের নবম অধিবেশন শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬ কার্যদিবসে একটি মাত্র বিল পাস হয়েছে। আর প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতির দেয়া ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে দশম জাতীয় সংসদে নতুনত্ব হচ্ছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নেয়া। মন্ত্রিসভায় তিনটি সদস্যপদের পাশাপাশি একটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদও পেয়েছেন তারা। দলের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এতে সংসদে সরকারী দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের উপস্থিতি বেড়েছে। তবে সংসদ অধিবেশনে তাদের একই অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সংবিধান সংশোধনী বিলসহ অনেক বিলই সর্বসম্মতিতে পাস হতে দেখা গেছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে একই সুরে বিএনপি জোট বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তারা হরতাল-অবারোধ ও পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার দায়ে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছেন। তবে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির প্রধান হিসেবে জাতীয় সংসদের দুই সদস্য নির্বাচিত হলে জাতীয় সংসদকে নতুন মর্যাদার আসনে আসীন করে। ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী আইপিইউ’র প্রেসিডেন্ট পদে এবং ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিপিএ নির্বাচনে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর বৃহত্তর দুটি সংস্থার প্রধান হিসেবে এই প্রথম কোন বাংলাদেশী নির্বাচিত হয়েছেন। এই সংসদে চমক দেখিয়েছেন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকী। পহেলা সেপ্টেম্বর অষ্টম অধিবেশন চলাকালে সংসদে বক্তৃতা দিয়ে তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর আগে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করায় মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকীর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
×