ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধে জড়িত দলের বিচারে আইন ফেব্রুয়ারিতে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

যুদ্ধাপরাধে জড়িত দলের বিচারে আইন ফেব্রুয়ারিতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িত দল বা সংগঠনের বিচারের বিধান যুক্ত করে ফেব্রুয়ারিতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হবে। বৃহস্পতিবার তার দফতরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতারা দেখা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি আগে বলেছিলাম, মার্চ মাস নাগাদ হবে। সেই ক্ষেত্রে এটা এগিয়ে এসেছে। এখন বলছি ফেব্রুয়ারি। জামায়াত নিষিদ্ধের আইন ফেব্রুয়ারির মধ্যে হচ্ছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলা হলে আদালতের এখতিয়ারে হাত দেয়া হয়। যেটা করা হচ্ছে, সংগঠনের বিচার এবং শাস্তির বিধান রেখে একটা আইন করা হচ্ছে। সেটা আইসিটি এ্যাক্ট সংশোধন করে করা হচ্ছে। জামায়াত নিষিদ্ধ হবে কি-না, সেটা আদালত বলবে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিষয়টি শাস্তির বিধান হিসেবে আসবে বলেও জানান তিনি। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাউকেই ফুটবল খেলতে দেয়া হবে না। এ নিয়ে (মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ) আইন করা হবে। আইনের খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। বাকি প্রক্রিয়া শীঘ্রই সম্পন্ন করা হবে। অন্যদিকে শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছি। বৃহস্পতিবার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আইন মন্ত্রণালয়ে যান। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সংখ্যালঘু ভিকটিমের ন্যায় বিচার, বৈষম্য নিরসন এবং অমর্যাদা অবসানে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে। সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকে করে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। সংগঠনের পক্ষে সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক মুনতাসীর মানুম, কাজী মুকুল, শ্যামলী নাসরিন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। নেতৃবৃন্দ আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের কাছে তাদের ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন। সাম্প্রদায়িক নির্যাতন বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ দাবি করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন আইনমন্ত্রীর কাছে। নির্যাতিতদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। লিখিত আবেদনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও নিপীড়নের অবসান ঘটাতে এবং ধর্ম-বর্ণসহ সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে আইন প্রণয়ন করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের আহ্বান জানানো হয়। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছি। মন্ত্রী আমাদের প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী এই ব্যাপারে কথা বলেছেন। আমি এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলব। বাজেয়াপ্তের বিধান রেখেই আইন করতে হবে। এ সময় ইউরোপের ‘হলোকাস্ট ডিনায়াল এ্যাক্টের’ আদলে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা ও ইতিহাস বিকৃতি রোধে আইন প্রণয়নের বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। আনিসুল হক বলেন, এটা খসড়াটা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আমার মনে হয়, এ রকম একটা আইন প্রয়োজন হয়ে গেছে। আমার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ফুটবল খেলা আমরা খেলতে দিতে পারি না। আজকেও আপনারা দেখবেন বিএনপির এক নেতা বলেছে, ওনাদের লিস্ট দিতে হবে, কতজন শহীদ হয়েছেন। ওনারাও ক্ষমতা ছিলেন। ওনারা কেন তৈরি করেননি? কোথাও এ রকম লিস্ট তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আজগুবি কথাবার্তা শোনার সময় নেই। সেই কারণেই এই আইনটার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে এ ধরনের আইন আছে, সেখানে কতটুকু শাস্তির বিধান রাখা আছে, সেটার কতটুকু যুক্তি আছে, তার কতটুকু রাখা হবে, সেটা পরে ঠিক হবে। আজকেই আমি এ ব্যাপারে বলতে চাই না।’ সাক্ষী সুরক্ষা আইন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইনের ইনিশিয়েটিং মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র। সেখানে আছে এটা। আমার সঙ্গে একবার আলাপ হয়েছে।’ সেই আইনটার মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় আমাদের প্রশ্ন আছে। এ বছরের জুন মাসের মধ্যে আমার মনে হয়, সেটা সংসদ পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হবে।
×