ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ সত্যি বিরল ইতিহাস। মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল বাঙালী। এই স্মৃতি বিষাদের। গৌরবেরও। উভয় অনুভূতিকে নতুন করে জাগাতে আসছে ফেব্রুয়ারি। মাত্র দু’দিন পর শুরু। সোমবার প্রথম দিন এবং এদিন থেকেই নানা আয়োজনে সরব হয়ে উঠবে রাজধানী ঢাকা। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহরজুড়ে চলছে প্রস্তুতি। এখন যেদিকে চোখ যায়, একটা জাগরণ। বাঙালীর প্রাণের স্পন্দন প্রখর হয়ে বাজে। টের পাওয়া যায়। প্রথমেই আসে অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথা। ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও মর্মবাণীকে সামনে রেখে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে প্রাণের মেলা। লেখক, পাঠক, প্রকাশকের সম্মেলন ঘিরে তুমুল ব্যস্ত এখন বাংলা একাডেমি ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান। এবারও দুটি ভেন্যু। উভয় প্রান্তে চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। প্রতি ঘণ্টায় বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। মেলার মূল আয়োজন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ চত্বরে। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে মন কেমন যেন আনচান করে ওঠে! উৎসবের হাতছানিটা টের পাওয়া যায়। উদ্যানের বিপুল জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে মেলা। রমনা কালীমন্দিরের প্রবেশ দ্বারটি থাকছে। পাশেই খোলা হয়েছে নতুন দ্বার। মূল রাস্তায় ইট বসিয়ে দেয়া হয়েছে। রাস্তা ধরে এগোতে থাকলে পৌঁছে যাওয়া যায় একেবারে শেষ প্রান্তে। মোট চারটি পথ। সব পথই মেলার মূল অংশে সহজেই পৌঁছে দেবে পাঠকদের। বের হওয়ার জন্যও থাকছে চারটি পথ। স্বাধীনতা স্তম্ভের খুব কাছাকাছি এসে শেষ হয়েছে সীমানা। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, মেলার চেহারাটি দ্রুত দৃশ্যমান হচ্ছে। ছোট-বড় সব স্টল নিজেদের মতো করে গড়ে নেয়া হচ্ছে। বড়সড় জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫টি প্যাভিলিয়ান। নির্মাণ শৈলীর কারণেও কিছু কিছু স্টল খুব নজর কাড়ছে। কোনটিরই কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ধরন ধারণ তবু অনুমান করা যায়। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্লাইউড। শোলা। নানা আকার ও আকৃতি মাথায় রেখে এগুলোতে করাত চালানো হচ্ছে। এখানে ওখানে খুলে রাখা হয়েছে রঙের কৌটা। তুলি হাতে দারুণ এঁকে যাচ্ছেন শিল্পী। প্রকাশকরা ব্যস্ত বই ছাপার কাজ নিয়ে। সময় করে আসছেন মেলার ভেন্যুতেও। শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসানের সঙ্গে কথা হলো বেশ কিছুক্ষণ। তরুণ প্রকাশক প্রায়শই ক্ষুব্ধ থাকেন। নানা ইস্যুতে সরব থাকেন। মেলার সঙ্গতি অসঙ্গতি প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, আমি মেলার একেবারে শেষ অংশে জায়গা পেয়েছি। লটারিতে পাওয়া। আমি আমার জায়গাটিতেই স্টল সাজাচ্ছি। কিন্তু প্রভাবশালী অনেকেই স্টল সরিয়ে নিয়ে সামনে চলে গেছেন। সামনের খোলা জায়গার দখল নিয়েছেন। শুরুতেই মেলার নীতিমালা এভাবে ভঙ্গ করা হলে পরবর্তীতে কী ঘটতে পারে? কিছুটা যেন সন্দিহান মনে হয় তাঁকে। মেলার বাংলা একাডেমি চত্বরে এখন অনেক কিছুই নেই। শিশুদের বিশেষ আয়োজনটিও সরিয়ে নেয়া হয়েছে সোহ্রাওয়ার্দীতে। এর পরও বাংলা একাডেমি যে! জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ছায়াতলে একটা ভাললাগা যেন ঘুমিয়ে থাকে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এনজিও মিডিয়ার স্টল। কাজ এগিয়ে চলেছে। আজকের মেলার সূচনা যে মুক্তধারা দিয়ে, এখানে আছে সে প্রতিষ্ঠান। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যথাসময়ে কাজ শেষ করবেন তাঁরা। বর্ধমান হাউসের সামনে মেলা মঞ্চের কাজ এগিয়ে চলেছে। এটিও শেষ পর্যায়ে। অমর একুশের মাসে সাংস্কৃতিক কর্মকা- অনেক বেশি থাকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও থাকেন যারপরনাই ব্যস্ত। তবে আসাদুজ্জামান নূর গুরুত্ব দিচ্ছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলাকেই। নিজের আগ্রহেই তিনি প্রস্তুতি দেখতে আসেন। শুধু কি দেখা? যেন তদারকি করেন সব। বৃহস্পতিবার তাঁকে পাওয়া গেল পুকুর পাড়ে। কয়েক মিনিটের আলাপ। মন্ত্রী আয়োজন নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট বলেই মনে হলো। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এখন সব শেষের পথে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন সমস্যা দেখি না। প্রাণের মেলাকে সফল করতে সব ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। নিরাপত্তার কী হবে? কতটা চিন্তিত? এমন প্রশ্নকে তিনি খুব বেশি গুরুত্ব দিতে রাজি নন। বলেন, গোটা পৃথিবীতেই এখন অনেক অঘটন ঘটে যাচ্ছে। তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। সব ধরনের অবস্থা বিবেচনায় রেখেই কাজ হচ্ছে। কারও হুমকি-ধমকি নিয়ে আমাদের পাঠকরাও ভাবেন বলে মনে করি না। অনেকেরই জানা, ফেব্রুয়ারির প্রথম দুই দিন অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় কবিতা উৎসব। এটিও ভাষার মাসের খুব গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। এবারও আয়োজনটি অব্যাহত থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর পাশে গড়া হবে মঞ্চ। হাতে সময় বেশি বাকি নেই। আয়োজক জাতীয় কবিতা পরিষদের সকলেই মহাব্যস্ত। টিএসসির অস্থায়ী কার্যালয়ে চলছে নানা কর্মকা-। গত কয়েকদিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের রং। সারাদিন চলে নিবন্ধনের কাজ। বিকেলে সমবেত হন পরিষদের সভাপতি কবি মুহম্মদ সামাদ, সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাতসহ অন্যরা। খ্যাতিমান কবিরাও সন্ধ্যায় এসে যোগ দেন। তখন দারুণ জমে ওঠে আড্ডা। ঝাল মুড়ি শীতের পিঠায় চলে আপ্যায়ন। মুহম্মদ সামাদ জানান, তাঁদেরও প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এবার আরও চমৎকার একটি উৎসব আয়োজন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×