ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উবাচ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

উবাচ

কী এমন অপরাধ! স্টাফ রিপোর্টার ॥ একজন শিক্ষাবিদ তিনি। সম্মানিত ব্যক্তি। অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য। তার কথা ও বক্তব্য হওয়ার কথা সাবলীলÑ এটাই স্বাভাবিক। সবার প্রত্যাশাও তাই। কিন্তু তিনি যদি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে অগ্রহণযোগ্য কথা বলেন? তখন! বিতর্ক হবে এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। সম্প্রতি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন মন্তব্য শুনে হতবাক হয়েছেন দেশের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের পর একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যই বা কী? নিশ্চয়ই আছে। কারণ খালেদা জিয়া এ কথা বলার পর তার দলের অনেক নেতাই একই সুরে কথা বলছেন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হলে তা হবে অমার্জনীয় অপরাধ- এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ। প্রশ্ন হলো- তাহলে কি কেউ অপরাধ করলে মামলা হবে না? কারও বিরুদ্ধে কেউ বিচার চাইতে পারবেন না? চাইলেই তাকে রক্ষা করার চেষ্টা হবে! এটা কেমন কথা। যৌক্তিই বা কেমন। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাসাস আয়োজিত জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. এমাজউদ্দীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কথা বলে খালেদা জিয়া কী এমন অপরাধ করেছেন যে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে? যদিও এখন পর্যন্ত এমন কোন মামলা হয়নি। তবুও তিনি বলছেন, ‘তিনবারের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ ধরনের হেয় করার মামলা অমার্জনীয় ও অগ্রণযোগ্য অপরাধ।’ সত্যিই হাস্যকর বিষয়। এ কথা শোনার পর অনেকেই হয়ত হেসে কুটিকুটি হবেন। যিনি অপরাধ করলেন তিনি নির্দোষ। আর অপরাধের বিচার যিনি চাইবেন, তার অপরাধ হবে অমার্জনীয়! মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বির্তক রয়েছে উল্লেখ করে দেশের প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, কতজন শহীদ হয়েছেন? কতজনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে তার হিসেব নেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ আনতে চান তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও আপনাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের এজেন্ডা আনবে। জিয়া পরিবারের ওপর ক্ষমতাসীনদের অন্যায় আচরণ কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই এ নির্যাতনের বিচার হোক। হয়ত খালেদা জিয়াকে রক্ষার জন্যই এ কথা বলছেন বিএনপিপন্থী এই শিক্ষাবিদ। ‘অদক্ষ শাসক’ স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালকদের দায়ী করা হয়। এর কারণও যৌক্তিক। অদক্ষ চালক হলে তো দুর্ঘটনা হবেই। মানুষ মারা যাবে। আহত হবেন অনেকে। তাই দাবির যৌক্তিকতা আছে। একজন সরকারপ্রধান যদি অদক্ষ হন! তাহলেও বিপত্তি। তাকে নিয়েও বিতর্ক হবে। তার কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে। যদি তাই হয়, তবে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করা উচিত। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব। কেউ অদক্ষ হলেও ব্যর্থতার কথা মেনে নেবেন না। বরং পাল্টা সফলতার সাফাই গাইবেন। এটাই আমাদের রেওয়াজ। হয়ত এ কারণেই নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘অদক্ষ বাস-ট্রাক চালক যেমন অহরহ দুর্ঘটনা ঘটায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও তেমনি একজন অদক্ষ দেশ-শাসক ছিলেন। এ কারণে তিনি দেশ পরিচালনায় বারবার ব্যর্থ হয়েছেন।’ সোমবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নির্বাচন (২০১৬-২০১৮) উপলক্ষে এক পরিচিতি সভায় শাজাহান খান এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘খালেদার শাসনামলে কেবল জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটেছে। তার শাসনামলে দেশের মানুষ শান্তিতে ছিল না।’ মহাপাগল! স্টাফ রিপোর্টার ॥ যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন; যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে তিনিই নাকি মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি! এ কথা শুনে হয়ত চোখ কপালে উঠবে সবার। সত্যিই তাই। এবার যিনি এ কথা বলেছেন তাকে কী বলবেন? পাগল, নাকি মহাপাগল। নাকি ইতিহাস পাল্টানোর নতুন কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ কথা বলছেন বিএনপির দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী। অনেকেই হয়ত সব বাদ দিয়ে বলছেন, কেউ জেগে ঘুমালে তাকে জাগানো যায় না। হয়ত রিজভীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। জেগে ঘুমাচ্ছেন বলেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস কোনদিন স্বীকার করবেন না। আগেও করেনি বিএনপি। তাই এই দলটির পক্ষে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা নতুন কিছু নয়। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে জাতির জনককে নিয়ে রিজভী বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে তিনি শুনেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধে যাদের ভূমিকা নেই তাদের দিয়ে জাতির পিতা বা স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চাইলেই বানানো যায় না।’ কী বলবেন এই রাজনৈতিক নেতাকে। এটা কেমন বক্তব্য। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এরকম বক্তব্য দেয়া মানেই গোটা জাতিকে হতাশ করার সামিল। পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে ইতিহাস নিয়ে ফের বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত চিকিৎসক সমাবেশে রিজভী আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বির্তক আছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ১০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তার এ বক্তব্যের জন্য খালেদা জিয়ার আগে তাজউদ্দীন আহমদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া উচিত। এরপর আরও অনেকেই শহীদদের বিভিন্ন সংখ্যার কথা বলেছেন।’
×