ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রবি ও এয়ারটেল একীভূত ॥ নতুন নাম রবি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

রবি ও এয়ারটেল একীভূত ॥ নতুন নাম রবি

স্টাফ রিপোটার ॥ রবি আজিয়াটা এবং ভারতী এয়ারটেল বাংলাদেশে কার্যক্রম একীভূতকরণে এক মতে পৌঁছেছে। একীভূত হওয়ার পর নতুন কোম্পানির নাম হবে ‘রবি’। মোবাইল নাম্বারে কোন পরিবর্তন হবে না। রবির নাম্বারই নতুন কোম্পানির নাম্বার হবে। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে দুই কোম্পানির মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়েছে। দুই কোম্পানি একীভূত শক্তি সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের সুবিধা নিয়ে গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা দিতে পারবে। ৪ কোটি গ্রাহক নিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটরে পরিণত হবে। তখন সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণে সহায়ক হবে বলে দুই কোম্পানির কর্মকর্তারা মনে করছেন। বিষয়টি নিয়ে এর আগে ঢাকাতেও দুই কোম্পানির কর্মকর্তা পর্যায়ে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এখন দুই কোম্পানি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছে গেল। জানা গেছে, আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ (আজিয়াটা) এবং ভারতী এয়ারটেল লিমিটেড (ভারতী) কার্যক্রম একীভূত করতে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুই কোম্পানির তরফ থেকে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করার সম্ভাবনার বিষয়ে একান্ত আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেয়ার পরই এ চুক্তি হলো। একীভূতকরণের পর, দুই কোম্পানির একীভূত সত্ত্বা রবি নামেই ব্যবসা পরিচালনা করবে। একীভূত সত্ত্বার গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ কোটিতে। রবি এবং এয়ারটেলের যৌথ সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্কের অধিকারী হবে রবি। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে টেলিযোগাযোগ এবং উচ্চ গতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। তখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। চুক্তির কার্যকারিতা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি), সরকার এবং আদালতের অনুমোদন পাওয়ার ওপর নির্ভর করে। এ প্রক্রিয়া আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত ক্রমবর্ধমান হারে এগিয়ে চলেছে এবং অতি অল্প সময়ে গ্রাহকের দোরগোড়ায় মোবাইল সেবা পৌঁছে গেছে। প্রস্তাবিত একীভূতকরণ এ শিল্পখাতে বিদ্যমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূরীকরণে সহায়ক হবে। বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সুনিশ্চিত করবে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এর ফলে আরও মানসম্পন্ন এবং বিস্তৃত নেটওয়ার্ক নিয়ে গ্রাহকদের কাছে অধিকতর সুবিধা এবং উন্নততর ডাটা ও অন্যান্য সেবা পৌঁছে দেবে রবি। চুক্তি সম্পাদনের ফলে শেয়ার মূলধনের পুনর্বিন্যাস হবে। এতে আজিয়াটা একীভূত সত্ত্বার ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। অন্যদিকে, ভারতী এয়ারটেল ২৫ শতাংশ এবং বাকি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বর্তমানের অপর শেয়ারহোল্ডার জাপানের এনটিটি ডকোমোর কাছেই থাকবে। দুই কোম্পানির একীভূতকরণের যৌক্তিকতা এবং লেনদেন সমন্বিতকরণ- একীভূতকরণ প্রতিযোগিতার পরিবেশ জোরদার করার মাধ্যমে গ্রাহকের জন্যে আরও উন্নততর অভিজ্ঞতা এবং অধিকতর পছন্দের সুযোগ নিয়ে আসবে। ৪ কোটি গ্রাহকের জন্যে তুলনামূলক বিচারে সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কাভারেজ এবং উন্নততর মোবাইল ইন্টারনেট সেবার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হবে। সবচেয়ে বিস্তৃত বিক্রয় ও বিপণন চ্যানেলের মাধ্যমে দেশজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের সহযোগিতা পাবেন। ৪ কোটি গ্রাহকের বিশাল সংখ্যার শক্তির ওপর ভর করে গ্রাহককে নিজ নেটওয়ার্কে (অন-নেট) কম মূল্যে কল করার সুযোগ দেয়া হবে। সারাদেশে ইন্টারনেট সংযোগের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং দুই কোম্পানির কার্যক্রম একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের ফলে আরও সুলভে মোবাইল সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। একীভূতকরণ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করবে। প্রস্তাবিত একীভূতকরণ বাংলাদেশ টেলিকম শিল্পখাত ও বাজার কাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড সারাদেশে আরও দ্রুত গতিতে পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করবে। দেশের সার্বিক অথর্নীতি এবং জাতীয় রাজস্বে এ একীভূতকরণ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। রবির প্রধান নির্বাহী সুপুন বীরাসিংহে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং প্রতিযোগী বহুল টেলিকমিউনিকেশন খাতে একীভূতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা মনে করি এ একীভূতকরণের মাধ্যমে আজিয়াটা এবং ভারতী এয়ারটেল উভয়েই বর্ধিত আকার এবং দক্ষতার ফলশ্রুতিতে ব্যয় সংকোচনের সুবিধা পাবে। পাশাপাশি, এর ফলে কর্মকৌশলের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন এবং গ্রাহকদের আরও সাশ্রয়ী সেবা দেয়ার লক্ষ্যে যে কোন বিনিয়োগে এ খাতের দুই শীর্ষস্থানীয় অপারেটর তাদের সম্মিলিত ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবে। আজিয়াটার প্রেসিডেন্ট এবং গ্রুপের প্রধান নির্বাহী দাতোশ্রী জামালুদ্দিন ইব্রাহিম বলেন, আজিয়াটার একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণ কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিভিন্ন দেশে আমরা নিজেদের অবস্থান জোরদার এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এ ধরনের একীভূতকরণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছি। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ক্যাম্বোডিয়ার মতো বাজারে এ ধরনের একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণে আমাদের সাফল্য বাংলাদেশের বাজারেও একীভূতকরণে আজিয়াটার নেতৃত্বদানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে। বাংলাদেশ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ ক্ষেত্র। আজিয়াটা সেই ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম বিনিয়োগ করে। এ অঞ্চলের অন্য সব বিনিয়োগ ক্ষেত্রের মতো আজিয়াটা বাংলাদেশেরও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
×