ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে অবৈধ ইটভাঁটি তৈরি ও পুকুর খননের হিড়িক

কমছে ফসলি জমি, হুমকিতে পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

কমছে ফসলি জমি, হুমকিতে পরিবেশ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ একের পর এক অবৈধ ইটভাঁটি আর মাটি কেটে পুকুর খননের মহোৎসবে হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের ফসলি জমি। সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফসলি জমিতে পুকুর খনন আর পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়ায় গড়ে উঠছে ইটভাঁটি। ফলে ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে ফসলি জমি। পুকুর খননে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি আর ইটভাঁটিতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, বিপর্যয় ঘটছে ফসলের। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় অনুমতিবিহীন শতাধিক ইটভাঁটিতে এখন মারাত্মকভাবে দূষিত করছে পরিবেশ। ফসলি জমিতে ইটভাঁটি হওয়ায় ক্রমেই কমছে আবাদি জমি। জনবসতি, ফসলি জমি ও গাছপালা রয়েছে এমন এলাকায় ইটভাঁটি গড়ে তোলা নিষিদ্ধ হলেও অবাধে নতুন নতুন ইটভাঁটি গড়ে উঠছে। কৃষি ও পরিবেশবিদরা বলেছেন, লোকালয়ের পাশে ফসলের জমিতে ইটভাঁটি গড়ে ওঠায় পরিবেশ দূষণসহ ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকহারে। একইসঙ্গে ফসলি জমির ওপরের স্তর (টপ সয়েল) ইটভাঁটির পেটে চলে যাওয়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরা শক্তি। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম জানান, ইটভাঁটি থেকে নির্গত ছাই ও ধোঁয়ায় গাছপালা ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। ছাই ও বস্তুকণা গাছের পাতার পত্ররন্ধন বন্ধ করে দেয় এবং উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। কার্বন ডাইঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড মিশ্রিত ছাই ধান, আম, কাঁঠাল, লিচু, শিম, কুমড়া, সরিষাসহ নানাবিধ ফসলের রেণুকে বিনষ্ট করে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুকনো মৌসুমে যেসব বিলে পানি থাকে না, সেসব বিলের ফসলি জমিতে ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে। এতে ফসলি জমি কমছে, চাপ পড়ছে কৃষির ওপর। পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। তবে এ নিয়ে প্রশাসনের কোন ভাবনা নেই অথচ বেশিরভাগ ইটভাঁটিই চলছে প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া। জানা গেছে, কয়েক বছরে রাজশাহীতে অন্তত ১৫০টি ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে। রাজশাহীতে এখন ইটভাঁটির সংখ্যা প্রায় ৩০০। মাত্র ১০টি ইটভাঁটি মালিক জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে লাইসেন্স নিয়েছেন। অন্যগুলো সব অবৈধ। রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের হিসেবে, জেলায় ইটভাঁটি রয়েছে ১৩৬টি। এসবের মধ্যে গোদাগাড়ীতে ২১টি, পবায় ৪৬টি, পুঠিয়ায় ১৪টি, চারঘাটে সাতটি, বাঘায় দুটি, মোহনপুরে ছয়টি, দুর্গাপুরে ১০টি, তানোরে দুটি ও বাগমারায় ২৮টি। এই ১৩৬টির মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩৯টির। কেউ কেউ আবার লাইসেন্স নবায়ন করেননি। রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নূর আলম বলেন, এ নিয়ে তারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জনবল সঙ্কটে অভিযান জোরদার করা যাচ্ছে না। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, ইটভাঁটির কারণে প্রতিবছর কয়েক শ’ বিঘা ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। এসব জমিতে যতদিন পোড়া মাটি থাকবে, ততদিন ফসল হবে না। বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে ফসল ও ফলের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। রাজশাহী ইটভাঁটি মালিক সমিতির সভাপতি শাজাহান আলী বলেন, আমরা কখনই পরিবেশের ক্ষতি চাই না। কিন্তু ইট উৎপাদনে যুগোপযোগী পদ্ধতির অভাব এবং সরকারের সিদ্ধান্ত ঘনঘন পরিবর্তনের কারণে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুকুর খননেরও হিড়িক পড়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি জনকণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে প্রশাসন মাঠে নামলেও এখন আবারও নীরব রয়েছে। ফলে বন্ধ হয়নি পুকুর খনন। রাজশাহীর পবা, বাগমারা ও তানোর এলাকায় সম্প্রতি দুই শ’র বেশি পুকুর খননেন কাজ চলছে ফসলি জমিতে।
×