ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কম্বোডিয়ায় বিশাল মিউজিয়াম গড়ে দিল নিপুণ শিল্পী দল

ছড়িয়ে পড়ছে ॥ উত্তর কোরীয় আর্ট পাওয়ার

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

ছড়িয়ে পড়ছে ॥ উত্তর কোরীয় আর্ট পাওয়ার

কম্পোডিয়ার সিয়েম রিয়াদ শহরের নতুন এ্যাঙ্কর প্যানোরামা মিউজিয়ামের প্রবেশপথে স্থাপিত হাস্যোজ্জ¦ল প্রস্তর মুখম-লটি মনোমুগ্ধকর রুচিবোধেরই পরিচায়ক। ভেতরে রয়েছে ৩৬০ ডিগ্রীতে আঁকা এক ছবি প্রায় চারটি বাস্কেটবল কোর্টের জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এ সাইক্লোরামাতে রয়েছে ৪৫ হাজারেরও বেশি ছবি। এটি দ্বাদশ শতকের এ্যাঙ্করিয়ান ইতিহাসের এক বর্ণনা। মিউজিয়ামটি ঐতিহাসিকদের ভাষায় নবম ও পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়কার বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগর এবং খোমার সাম্রাজ্যের রাজধানীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতীক। কিন্তু এ ভবনটি নির্মাণে যা কিছুই লেগেছিল সব কিছুই কম্বোডিয়া থেকে নয়, উত্তর কোরিয়া থেকে এসেছিল। উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় আর্ট স্টুডিও মানসুদায়ে এসব যুগিয়েছিল। যখন বিশ্বের দৃষ্টি উত্তর কোরিয়ার রহস্যঘেরা নেতৃত্ব ও পরমাণু সামর্থ্যরে দিকে অনেকাংশে নিবদ্ধ, তখন স্টুডিওর কাজ এ একঘরে রাজতান্ত্রিক দেশটির গ-ির বাইরে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোশ্যালিস্ট রিয়ালিজমের আধুনিক মাস্টার মানসুদায়ে শিল্পীদের তৈরি স্মৃতিসৌধ ও স্থাপত্যকর্ম আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং এমনকি জার্মানিতেও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এ্যাঙ্কর পেনোরামা মিউজিয়াম হলো স্টুডিওর সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী বিদেশী প্রকল্প। সাইক্লোরামাটি আঁকতে উত্তর কোরিয়া থেকে বিমানে করে নিয়ে আসা ৬৩ শিল্পীর চার মাস লেগেছিল। এ্যাঙ্কর কমপ্লেক্স পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী সংস্থা অপসারার মিউজিয়ামগুলোর অস্থায়ী ডিরেক্টর ইত চান্দারোয়াত বলেন, শিল্পকর্ম, ছবি আঁকা ও নির্মাণ কাজে মানসুদায়ের বিরাট প্রতিভা ও সুখ্যাতি রয়েছে। তিনি এর অংশীদারকে কম্বোডিয়া কেন বেছে নিয়েছিল, তিনি তা ব্যাখ্যা করছিলেন। পিয়ংইয়ংয়ের মানসুদায়ের আর্ট স্টুডিও ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আর্ট ফ্যাক্টরি। এতে প্রায় ৪ হাজার লোক কাজ করেন এবং তাদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর কোরিয়ার ৮০০ থেকে ৯০০ জন সেরা প্রতিভাবান শিল্পী। স্টুডিওর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিনিধি পিয়ের লুইজি সেসিওনি এ কথা জানান। স্টুডিওটিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়ায় ছড়িয়ে থাকা বেশিরভাগ প্রপাগান্ডা আর্ট ও স্থাপত্যকর্ম। বলা হয়, এর শিল্পীদেরই কেবল দেশটির ক্ষমতাসীন কিম পরিবারের সদস্যদের ছবি আঁকার অনুমতি রয়েছে। ১৯৭২ সালে স্টুডিওটি উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান নেতার পিতামহ কিম ইল সুংয়ের ৬৬ ফুট উঁচু প্রতিকৃতি রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের এক পাহাড়ে নির্মাণ করে। কিম ইল সুংয়ের পুত্র ও উত্তরাধিকারী কিম জং ইলের অনুরূপ আকৃতির প্রতিকৃতি ২০১২ সালে কিম জং ইলের মৃত্যুর পর প্রথম প্রতিকৃতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯৯০-এর দশক থেকে মানসুদায়ে বাইরের প্রকল্পগুলোও হাতে নিতে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার সরকারগুলো স্বল্প ব্যয়ে বড় বড় প্রকল্প নির্মাণের জন্য এর শিল্পীদের নিয়োগ করে যেমন সেনেগালের ডাকারের আফ্রিকান রেনেসাঁ মনুমেন্ট এবং ফ্রাঙ্কফ্রুর্টের ফেয়ারি টেল কাউন্টেন। স্টুডিওটি চীনের রাজধানী বেজিংয়েও একটি গ্যালারি রেখেছে। ইত বলেন, মানসুদায়ের ওভারসিজ ডিভিশন কয়েক বছর আগে সিয়েম রিয়াপে একটি মিউজিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে কাউন্সিলর ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব কম্বোডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এটি সরকারের বিনিয়োগ বোর্ড। কম্বোডিয়া ও উত্তর কোরিয়া ঐতিহাসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। এ সম্পর্কের বড় ভিত্তি ছিল কিম ইল সুং এবং কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহানুরের মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক। সিহানুক ২০১২ সালে মারা যান। ১৯৭০ এর দশকে ওই উত্তর কোরীয় নেতা রাজা সিহানুককে পিয়ংইয়ংয়ের বাইরে একটি প্রাসাদ প্রদান করেন। সিহানুক কিমকে এক সময়ে ‘বন্ধুর চেয়ে বড়, ভাইয়ের চেয়েও বড়’ বলে অভিহিত করেন। বহু বছর ধরে নির্বাসিত জীবনযাপনকালে কম্পোডীয় রাজা বছরে কয়েক মাস উত্তর কোরিয়ায় কাটান এবং এমনকি লেখালেখি করেন ও উত্তর কোরীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেন। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×