ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ বিয়ে-শাদির গুরুত্ব

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ বিয়ে-শাদির গুরুত্ব

মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আরবীতে বিয়েকে বলা হয় নিকাহ। বিয়ে বন্ধনকে বলা হয় আকদ। একজন পুরুষ এবং নারীর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বৈধ পন্থায় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়াটাই হচ্ছে বিয়ে। এই বিয়ের মধ্য দিয়ে দাম্পত্য জীবনের শুভ সূচনা হয় এবং পরিবার গঠনের সুদৃঢ় পথ প্রশস্ত হয়। বিয়ের মাধ্যমে একজন পুরুষ এবং একজন নারী পরস্পরের জীবনের যাবতীয় কর্মকা-ের সাথী হয়ে যায় এবং তাদের একত্রে বসবাসের সামাজিক স্বীকৃতি লাভ হয়। তাদের প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, মিলন এবং তাদের সন্তান-সন্ততি পবিত্রতার সৌরভে সুরভিত হয়। মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলায়হিস সালাম ও আদি মাতা হাওয়া আলায়হাস সালাম বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন জান্নাতে এবং তাঁরা সংসার গড়ে তুলেছিলেন পৃথিবীতে এসে। পৃথিবীতে যত নবী-রসূল এসেছেন তাঁরা সবাই বিয়ে করেছিলেন এবং সবারই সংসার জীবন ছিল। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদি আল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : হে যুব সমাজ! তোমাদের যে বিয়ে শাদি করবার সামর্থ্য (দৈহিক ও আর্থিকভাবে) রাখে সে যেন বিয়ে করে, কেননা তা (বিয়ে) দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং গুপ্ত অঙ্গকে হিফাজত করে। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোযা রাখে, এটা তার জন্য ছিন্নমুষ্ক হওয়া। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)। এই হাদিসখানি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যার দৈহিক সামর্থ্য নেই এবং যার স্ত্রীর খোরপোষ দেবার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই তার উচিত হবে বিয়ে না করে সংযমী হওয়া। যখন সে সংসার চালানোর মতো সচ্ছলতা অর্জন করবে এবং দৈহিকভাবে সমর্থবান হবে তখন অবশ্যই সে বিয়ে করবে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : যাদের বিয়ে-শাদী করবার মতো সামর্থ্য নেই তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যদ্দিন না আল্লাহ অনুগ্রহ করে অভাব মুক্ত করেন। (সূরা নূর : আয়াত ৩৩)। ইসলাম বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে কনের সম্মতি (ইজিন) কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কনের ইজিন (সম্মতি ব্যতিরেকে বিয়ে শুদ্ধ হয় না। বিয়ের মজলিসে ইজাব-কবুল সম্পাদিত হতে হয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে। বিয়েতে কনের জন্য মাহর নির্ধারণ করতে হয় এবং তা অবশ্যই যথাসময়ে কনেকে প্রদান করতে হয়। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে তোমরা নারীদেরকে তাদের মাহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে। (সুরা নিসা : আয়াত ৪)। মাহর বা মুহরানার হকদার একমাত্র কনে। পূর্বকালে রেওয়াজ ছিল কনের অভিভাবক কনে পণ হিসেবে বরপক্ষ থেকে অর্থ আদায় করে কনেকে না দিয়ে নিজেরাই ব্যয় করত। আল্লাহ জাল্লা শানুহু এই প্রথাটি বাতিল করে দিয়ে উপরিউক্ত আয়াতে কারিমায় মাহরের হকদার একমাত্র কনেই তা স্থির করে দিয়েছেন। বর কনে পক্ষ থেকে দাবি করে যে অর্থ সম্পদ আদায় করে তা ইসলামে বৈধ নয়। এটাই যৌতুক। এই যৌতুক প্রথাকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মাহর বা মুহরানা নির্ধারণ এমনভাবে করার কথা বলা হয়েছে যা বর আদায় করতে সমর্থ হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বড়লোকী দেখানোর জন্য বরের সাধ্যের বাইরে মাহর ধার্য করা হয়। এটা আদৌ শরী’আত সম্মত নয়। মাহর ধার্য হতে হবে বরের আর্থিক সামর্থ্যানুযায়ী। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : মাহর নির্ধারণের পর কোন বিষয় পরস্পর রাজি হলে তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। (সূরা নিসা : আয়াত ২৪)। স্ত্রীকে মাহরের টাকা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দিতে হবে। যদি দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ার কারণে পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে ওঠে এবং পরিণতিতে তা তালাক পর্যায়ে উপনীত হয় তবুও স্বামী কোন অবস্থাতেই মাহর যা স্ত্রীকে প্রদান করেছে তার কিছুই ফেরত নিতে পারবে না। এমনকি পোশাকাদি-গয়না যা দিয়েছে তাও ফেরত নিতে পারবে না। মাহর নির্ধারণে জটিলতা সৃষ্টি হলে বোন, ফুফুর মাহরের নিরিখে কনের মাহর ধার্য করা যেতে পারে, একে বলা হয় মাহর মিছাল। মাহর কনের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক, হযরত আলী (রাদি.) ও হযরত ফাতিমা (রাদি.) এর বিয়েতে মাহর ছিল ৪০০ দিরহাম, এটাকে বলা হয় মাহরে ফাতিমা। তাঁদের বিয়ের সময় হযরত আলী (রাদি) এর বয়স ছিল ২৪ বছর আর হযরত ফাতিমা (রাদি.)-এর বয়স ছিল প্রায় ১৯ বছর। ইসলামে বিবাহ বিচ্ছেদের বিধান রয়েছে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : একটা জিনিস যা বৈধ হলেও আল্লাহ পছন্দ করেন না তা হচ্ছে তালাক। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.), সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ
×