ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অনুমোদনহীন ব্লাড ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

অনুমোদনহীন ব্লাড ব্যাংক

খাদ্য, প্রসাধনী, জীবন রক্ষাকারী দ্রব্য, ওষুধ, পানি, খাবার স্যালাইনে ভেজাল মেশানো হচ্ছে এটা পুরনো খবর। এখন মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান রক্তের অনুমোদনহীন পরিসঞ্চালন কেন্দ্র নিয়েও নানা আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র। অধিদফতরের এক পরিসংখ্যানে রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রগুলোতে সংগৃহীত প্রায় ৪৮ হাজার ইউনিট রক্তে নানা জটিল রোগের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে এইডস, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-বি, সিফিলিস ও ম্যালেরিয়া। পরিসংখ্যান বলছে, রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রগুলোতে সংগৃহীত রক্তে ঝুঁঁকিপূর্ণ রক্তের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বেশিরভাগ কেন্দ্রে মাদকসেবীরা টাকার বিনিময়ে রক্ত বিক্রি করছে। অনিরাপদ রক্ত গ্রহণের কারণে একজনের জটিল রোগ আরেকজনের শরীরে সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। অথচ জীবাণুমুক্ত নিরাপদ রক্তই রোগীকে নতুন ও নিরাপদ জীবন দিতে পারে। তাই পেশাদার রক্তদাতা থেকে রক্ত গ্রহণে বিরত থাকা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতার থেকে রক্ত গ্রহণ করা জরুরী। রক্তদান একটি মহৎ সেবা। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে অনিরাপদ রক্তই আবার মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। এ কথা সত্য যে, সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অথচ দেশের শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র অনুমোদনহীন। রক্ত সংগ্রহের সময় বাধ্যতামূলক পাঁচটি পরিসঞ্চালন সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয় না শতকরা ৫০ ভাগ কেন্দ্রে। গত তিন বছরে সারাদেশে ইতোমধ্যে আড়াই শতাধিক অনিরাপদ ও ভুয়া ব্লাড ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। জব্দ করা হয়েছে কয়েক হাজার ইউনিট অনিরাপদ রক্ত। হেলথ বুলেটিন ২০১৫-এ বলা হয়েছে, গত ২০১৩ সালে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৪ ইউনিট রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪০ ইউনিটে এইচআইভি পজিটিভ, ৩৬ হাজার ২৯১ ইউনিটে হেপাটাইটিস বি পজিটিভ, ৪ হাজার ৭০৬ ইউনিটে হেপাটাইটিস সি পজিটিভ, ৩ হাজার ৯৫০ ইউনিটে সিফিলিস ও ১ হাজার ৩৪৪ ইউনিট রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধরা পড়ে। তালিকাভুক্ত ২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৭টির কাছে রক্তের বিভিন্ন উপাদান পৃথকীকরণের জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা রয়েছে। এসবিটিপির তালিকাভুক্ত নয় এমন সব প্রতিষ্ঠানে রক্ত পরিসঞ্চালনের সুবিধা নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৪১টি বেসরকারী রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র রয়েছে। এ তালিকার বাইরে থাকা ব্লাড ব্যাংকগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণ মানুষের উচিত হবে ওই সব অবৈধ ব্লাড ব্যাংক এড়িয়ে চলা। সরকার চিকিৎসার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ ধরনের অরাজকতা চলতে দেয়া যায় না। বিশুদ্ধ রক্তের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। অন্যথায় বিপন্ন রোগী আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। কাজেই বিপন্ন রোগীদের আরও বেশি বিপন্ন হওয়ার অবস্থা থেকে রক্ষা করতে হবে। সেই লক্ষ্যে অনুমোদনহীন রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রগুলো আইনগতভাবে বন্ধ করতে হবে, মানুষকে সচেতন ও রক্ত দানে উৎসাহিত করা দরকার। সারাদেশে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
×