ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নৈরাজ্য ঠেকাতে

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

নৈরাজ্য ঠেকাতে

রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থায় চলছে নৈরাজ্য। একদিকে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম, অন্যদিকে অপ্রতুল যানবাহন প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছিনিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন থেকে। ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। আয়তন ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী রাজধানীতে প্রতিদিন সোয়া দুই লাখ পরিবহন চলতে পারে। অথচ সরকারী হিসাব অনুযায়ী চলছে সাড়ে নয় লাখ যান্ত্রিক পরিবহন। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। প্রতি তিন হাজার যাত্রীর জন্য রয়েছে মাত্র একটি। অটোরিক্সাগুলোর মধ্যে প্রতিদিন অচল থাকে এক-তৃতীয়াংশ। ট্যাক্সিক্যাব যেন সোনার হরিণ। বাস্তবে গণপরিবহনের কোন ধারণাই যেন গড়ে ওঠেনি- না সরকার, না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, না বিআরটিসির। জনসংখ্যা ও রাস্তাঘাট বিবেচনায় অন্তত এই মুহুর্তে রাজধানীতে প্রয়োজন ১২ থেকে ১৩ হাজার বাস। চলছে বড়জোর তিন হাজার। বিআরটিএর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ১৬৮টি রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪০৭টি। এর মধ্যে মিনিবাস তিন হাজার। আর বাস আছে মাত্র দুই হাজার ২৮১টি। তবে পরিবহন মালিকদের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা চার হাজারেরও কম। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, এক হাজার ৫২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকায় সড়ক রয়েছে দুই হাজার ৫৫০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ৮৮ কিলোমিটার প্রধান সড়ক, যার বেশিরভাগই দখল করে নেয় ব্যক্তিগত যানবাহন। এই অবস্থায় সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীতে তিন হাজার নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনাটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই অনেকটা অগ্রসর হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সাড়া মিলেছে। প্রস্তাবও মোটামুটি চূড়ান্ত। বর্তমানে পরিবহন খাতে বাস মালিকদের ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশ। এতে তাদের কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয়। সরকারের তরফ থেকে এবার এই কর মওকুফ করে দেয়ার আশ্বাস মিলেছে। তিন হাজার নতুন বাসের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা সরকারী ভর্তুকির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। ঋণের চার ভাগের দায়িত্ব মালিকদের। প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমানে সচল ১৯০টি পরিবহন কোম্পানিকে একীভূত করে পাঁচটি কোম্পানি করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে তিন হাজার নতুন পাবলিক বাস চালু হবে বলে আশা করা যায়। নতুন বাস নামানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরনো জরাজীর্ণ লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাসগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হবে বলেও বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরিকল্পনা ভালই বলতে হবে। তবে কথায় বলে, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। নগরবাসীরও হয়েছে অনুরূপ অবস্থা। সম্প্রতি বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে মিটার অনুযায়ী চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হলো। বাস্তবে ভাড়া দ্বিগুণ হলেও অটোরিক্সা চলছে মিটার ছাড়াই চালক ও মালিকের মর্জিমাফিক। যাত্রীরা সেখানে অসহায়, জিম্মি। এর পাশাপাশি সময় সময় ভাড়া বাড়ানো নিয়ে বাস ও মিনিবাস মালিকদের দৌরাত্ম্য ও যথেচ্ছাচার চলছেই। চীন থেকে বহু হাঁকডাক করে নিয়ে আসা হলো ডেমু ট্রেন। অচিরেই সেগুলোর দুরবস্থা ও অকার্যকারিতা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে নগরবাসীর। নতুন তিন হাজার বাসের মধ্যে এসি-ননএসি দুটোই থাকবে। তবে বাসগুলো যেন সচল থাকে এবং টেকসই হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। বিআরটিসিসহ বর্তমানে সচল বাসগুলোর জরাজীর্ণ চেহারা দেখলে রীতিমতো করুণা হয়। নতুন বাসের ক্ষেত্রে যেন অনুরূপ অভিজ্ঞতা না হয় নগরবাসীর, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে।
×