ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতদরিদ্ররা

মাতৃসদনসহ ২৬ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ॥ সাড়ে তিন বছর বন্ধ

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

মাতৃসদনসহ ২৬ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ॥ সাড়ে তিন বছর বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ শহরের হতদরিদ্র ও বস্তির নারী ও শিশুর চিকিৎসা পরিষেবায় বগুড়ায় নির্মিত ‘নগর মাতৃসদন কেন্দ্র’ নামে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং তা ঘিরে যে ৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২০টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছিল তা প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সেকেন্ড আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতায় এই পরিষেবা কেন্দ্রগুলো নির্মিত হয়েছিল গত ২০০৭ সালে। পরিচালন দায়িত্ব পেয়েছিল পৌরসভা। বলা হয়েছিল বহু কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাঁচ বছরের এই প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পর আরেকটি নতুন প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাসপাতাল আর চালু হলো না। বহুতল ভবনের ভেতরে উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জামাদিতে মরিচা পড়তে শুরু করেছে। আসবাবপত্র ও বেডগুলোতে জমেছে ধুলাবালির আস্তরণ। ইঁদুর, বেড়াল, তেলেপোকার অভয়াশ্রমে পরিণত হওয়া এই কেন্দ্রে পৌর কর্তৃপক্ষ তিনজন পাহারাদার নিয়োগ দিয়েছে। তারাই এখন পালাক্রমে বন্ধ কেন্দ্র পাহারা দিচ্ছে। এই বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কথা- দাতা সংস্থার আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ানোর কারণে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে আছে। চেষ্টা করা হচ্ছে বিকল্প উপায়ে চালু করার। বগুড়াসহ দেশের আরও চার পৌরসভায় এ ধরনের প্রকল্প চালু হয়েছিল। সবই ২০১২ সালের ৩০ জুন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বগুড়া ছাড়া বাকি তিন পৌরসভা নতুন প্রকল্পের আওতায় পুনরায় চালু হয়। এই তালিকায় বাদ পড়ে যায় বগুড়া। গত সাড়ে তিন বছরেও নতুন কোন প্রকল্পের আওতায় তা আর বহাল হয়নি। নগর মাতৃসদন কেন্দ্রের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা পরিষেবা পেত। সকল ধরনের স্বাস্থ্যসেবা বিনা মূল্যে পেতে পারে পৌর এলাকার মধ্যে এমন সাড়ে দশ হাজার পরিবারকে চিহ্নিত করে পরিষেবার কার্ড দেয়া হয়। এই কার্ডের আওতায় ওই সব পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৫০ হাজার সদস্য সেবা পেত। ২০ শয্যার হাসপাতালে ইনডোর আউটডোরে প্রসূতি মা শিশুদের সেবার সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভকালীন পরিচর্যা থেকে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেয়া হতো। নগর মাতৃসদন কেন্দ্রে পাঁচ ডাক্তার, প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন করে ডাক্তার ও পাঁচজন করে স্বাস্থ্যকর্মীসহ মোট এক শ’ ৪২ কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্যাটেলাইট ক্লিনিকের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসত। দরিদ্র পরিবারে রোগী, বিশেষ করে শিশু ও নারী এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে জানান হতো। রোগের সেবা দ্রুত প্রদানে সচেষ্ট থাকতেন স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সকলেই। বগুড়ার পৌরসভার পরিচালনায় এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ায় হতদরিদ্ররা দ্রুত হাতের নাগালের মধ্যে যে সেবা পেত তা আর পাচ্ছে না। এই প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পরিষেবাকে চালু রাখতে নতুন কোন প্রকল্পের আওতায় আনা হয়নি। যদিও হাসপাতাল ক্লিনিক চালু রাখার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের ওপরই রয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষের ভাষ্যÑ পৌরসভার নিজস্ব তহবিল দিয়ে হাসপাতাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনা করা সম্ভব না হওয়ায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ উৎসের সন্ধান করছে যাতে হতদরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা চালু রাখা যায়। তবে তা সাড়ে তিন বছরেও সম্ভব হয়নি। এখন সরকার নতুন করে কোন প্রকল্পের আওতায় অথবা কোন দাতা সংস্থা এগুলোকে চালু না করলে স্বাস্থ্যসেবার এই কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে থাকবে না চালু হবে, এই বিষয়টির উত্তর মিলছে না।
×