ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙলা নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নাট্যোৎসবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা ‘মুক্তির ছিন্ন দলিল’

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

বাঙলা নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নাট্যোৎসবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা ‘মুক্তির ছিন্ন দলিল’

সাজু আহমেদ ॥ নানা ঐতিহ্যেসমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতি। বলা হয়ে থাকে সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের হাত ধরে আলোকিত হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গন। বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ মঞ্চনাটক। বিভিন্ন নাট্যদলের তরুণরাই নিত্যনতুন আঙ্গিকসমৃদ্ধ প্রযোজনা উপহার দিয়ে আমাদের নাট্যাঙ্গনকে গতিশীল করছেন। প্রযোজনার গুণ ও মানে বিশ্বব্যাপী নন্দিত হচ্ছে দেশীয় নাটক। আমাদের ঢাকার নাট্যাঙ্গনে তেমনি একটি তারুণ্যনির্ভর নাট্য সংগঠন বাঙলা নাট্যদল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এই নাট্য সংগঠনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালের ১০ জানুয়ারি। দলটি ইতোমধ্যে তাদের ১৯ বছরের পথচলায় বেশ কিছু নান্দনিক প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে, যা দর্শকদের কাছে যেমন নন্দিত হয়েছে, তেমনি নাট্যবোদ্ধাদের কাছে অকুণ্ঠ প্রশংসিত হয়েছে। বাঙলা নাট্যদল বাংলাদেশের অন্যতম মৌলিক বিষয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধর্মী নাটক মঞ্চায়নে অনেকটাই অগ্রগামী। দেড়যুগ সময়ে তারা মঞ্চে এনেছে বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মঞ্চ ও পথনাটক। এর মধ্যে আলোচনায় এসেছে তাদের প্রথম প্রযোজনা আবিদ আহমেদ রচিত এবং সদস্য হ ম সহিদুজ্জামান নির্দেশিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা ‘এখনও অন্ধকার’। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের আরেক প্রযোজনা ‘মুক্তির ছিন্ন দলিল’ নাটকটিও সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত হয়। দলের অন্য প্রযোজনা যেমন ‘শাদী মোবারক’, ‘প্রেম পরাণের কথা’, ‘বেদ কইন্যা’, ‘তুই চোর’, ‘ঘুঘু মুন্সি ও অন্যান্য’, ‘মধুমতি পাড়ের মানুষ’, ‘১৯৭১’, ‘ভাবান্তর’, ‘পরিণতি’, ‘দ্য ফ্যান্টাস্টিক’, ‘বান্দরের কিস্সা ও অন্যান্য’ নাটকগুলোতেও সামাজিক ম্যাসেজ দেয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দর্শকদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছে বাঙলা নাট্যদল। নিজেদের প্রযোজনাগুলো নিয়মিত মঞ্চায়নের পাশাপাশি অন্যদলগুলোর জনপ্রিয় প্রযোজনা নিয়ে নাট্য উৎসব করে থাকে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারের মতো তারা আয়োজন করতে যাচ্ছে জহির আলম পথনাট্যোৎসব। দলের প্রতিষ্ঠাতা হ ম সহিদুজ্জামান ও আবিদ আহমেদের উদ্যোগে আগামীকাল ২৯ জানুয়ারি শুক্রবার দনিয়ার এ কে স্কুল এ্যান্ড কলেজ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন বাংলদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেল নাট্যজন আকতারুজ্জামান, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ গিয়াস। উৎসব প্রসঙ্গে বাঙলা নাট্যদল প্রধান আবিদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দনিয়াতে আমরা একটা সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি করেছি। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রচুর দর্শকের সমাগমেই তা বোঝা যায়। এবারের নাট্যোৎসবে অংশগ্রহণ করেছে পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি), ঢাকা মৌলিক নাট্যদল, খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠী, নাট্যেপুরান ও বাঙলা নাট্যদল। তিনি আরও জানান, উৎসবে দলের জনপ্রিয় প্রযোজনা পথনাটক ‘মুক্তির ছিন্ন দলিল’ নাটকটি প্রদর্শনী হবে। নাটকটি রচনা করেছেন নাসির আহমেদ ও নির্দেশনায় হ ম সহিদুজ্জামান। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেনÑ আবিদ আহমেদ, জয়া হাসান প্রিয়ন্তী, সেলিম বহুরুপী, মেহজাবীন রাত্রি, নাসির আহমেদ, জামিল উদ্দিন লোটাস, সুবর্ণা আক্তার, সৈয়দ পার্ল, শামিম চৌধুরী, পালাশ খান, স্বচ্ছ প্রধান ও মাসুদ হাসান। নাটকটির গল্প মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন আবহে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর অত্যচার, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল দেশের মানুষ। তাদের বিরদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের বাংলার দামাল ছেলেরা। পাক হানাদারকে সাহায্য করেছিল এদেশের গুটিকয়েক চিহ্নিত রাজাকার। আমরা স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি কিন্তু তারা এখনও নির্বিকারে চালিয়ে যাচ্ছে হত্যা, গুম ও ধর্ষণ। এসব রাজাকারদের শিকড় কবে নির্মূল হবে সেই প্রত্যাশার অঙ্গীকার নিয়ে নাটকের কাহিনী। উৎসব প্রসঙ্গে বাঙলা নাট্যদলের আরেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হ ম সহিদুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বাঙলা নাট্যদলের সভাপতি ছিলেন জহির আলম। দনিয়ার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তার স্মরণেই দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আমি ও আবিদ আহমেদের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো শহীদ মিনার, দনিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজে মাঠে পথনাট্যোৎসব করছি। এতে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের কয়েকটি দল অংশ নিচ্ছে। জহির আলম পথনাট্যোৎসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশের প্রতিটি নাট্যদলকে ক্রমান্বয়ে উৎসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা। এ লক্ষ্যেই আমরা প্রতি উৎসবে নতুন দলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। পরবর্তীতে এ উৎসবকে আরও বড় পরিসরে করার ইচ্ছে আছে। সহিদুজ্জামান আরও বলেন, ১৯৯৭ সালের ১০ জানুয়ারি আমাদের নাট্য অঙ্গনে পথচলা শুরু। যেহেতু আমরা মুক্তিযদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ। তাই সেই তাগিদ থেকে আমরা বেশিরভাগ সময় মুক্তিযুদ্ধের নাটক প্রযোজনায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এ লক্ষ্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা মঞ্চে আনার চেষ্টা করি। নাটকের মাধ্যমে আমরা দর্শকদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে থাকি।
×