ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্য ড্যানিশ গার্ল

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

দ্য ড্যানিশ গার্ল

অস্কার পাওয়ার কি কোন ফর্মুলা আছে। প্রচলিত মতে প্রান্তিুক কোন মানুষকে নিয়ে বানানো মানবিক সম্পর্কের টানাপড়েনের ছবি কি এগিয়ে থাকে বাকিদের থেকে। এমনটা যদি হয়, তাহলে নিজের মতো করে সেই পথেই হাঁটতে চেয়েছেন পরিচালক টম হুপার। এখানে ‘নিজের মতো করে’টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা। চিকিৎসাশাস্ত্রের জ্ঞাত প্রথম ট্রান্সজেন্ডার লিলি এলবে-কে নিয়ে হুপারের ছবি ‘দ্য ড্যানিশ গার্ল’। ডেভিড এবারশফের উপন্যাস অবলম্বনে বানানো এই ছবিকে কোনভাবেই ইমোশনাল হয়ে যেতে দেননি পরিচালক। ঠিক যেমনটা তিনি চেয়েছিলেন ‘দ্য কিংস স্পিচ’-এর ক্ষেত্রেও। আর সেখানেই প্রথাগত অস্কার-ফর্মুলার থেকে অনেকটাই আলাদা তাঁর সিনেমা। নিপুণ নির্মাণ শৈলী থাকা সত্ত্বেও কোন ছবি যে চরম শীতল হতে পারে, তা দেখিয়েছেন তিনি। ডেনমার্কের ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী আইনার ওয়্যাগনার এবং তাঁর স্ত্রী, যিনি নিজেও একজন পোর্ট্রেট চিত্রকর, গারডা ওয়্যাগনারের সম্পর্কই ‘দ্য ড্যানিশ গার্ল’-এর কেন্দ্রবিন্দু? নিজের মধ্যকার নারীকে একটা যথাযথ শরীর দেয়ার প্রচেষ্টায় কীভাবে আইনার তার স্ত্রীকে পাশে পান- সেটাই ধরতে চাওয়া হয়েছে এই ছবিতে। বন্ধু হেনরিক যখন আইনারকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার চিকিৎসক তোমায় নারী বানাচ্ছে।’ উত্তরে আইনার জানায়, ‘না, ঈশ্বর আমায় নারী বানিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমাকে ঠিকঠাক শরীর দেননি। চিকিৎসক আমাকে সেই শরীরটা বানিয়ে দিচ্ছে।’ এমন একটা দর্শনকেই ছবিতে ধরতে চেয়েছেন পরিচালক। যেখানে শরীর শুধুমাত্র একটা পোশাক। শরীর বদলানোর প্রচেষ্টাটা, দীর্ঘদিনের পোশাক বদলানোর মতোই। পুরনোকে ত্যাগ করার মায়া থাকলেও, নিজের জন্য জুতসই পোশাক পাওয়ার আনন্দই যেখানে আলাদা। গল্প বলার ক্ষেত্রে এতটাই আবেগহীন, নির্মোহ এবং শীতল ‘দ্য ড্যানিশ গার্ল’। তবে সেই শীতলতা ছবির ক্ষেত্রে কখনও কখনও প্রতিবন্ধকতাও হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনার ওয়্যাগনার কীভাবে নিজের সেক্সুয়ালিটি বদলে, শরীর বদলে এক নারী-লিলি এলবে হয়ে উঠতে চাইছেন, তা পরিষ্কার গল্পে। কিন্তু কীভাবে তিনি নিজের শরীরের মধ্যে লিলিকে আবিষ্কার করেছিলেন, তা কখনওই পরিষ্কার হয় না এক ঘণ্টা ৫৯ মিনিটে। তবে হয়ত পরিচালক এমনটাই চেয়েছেন। বিষমকামী যৌনতা নয় এমন অলটারনেট সেক্সুয়ালিটি নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ যখন নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছেন, সমগ্র বিষয়টিকে যখন সবাই স্বাভাবিকত্বের চোখে দেখার চেষ্টা করছেন, তখন আজ থেকে প্রায় এক শ’ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক বিপ্লবকে হুপার হয়ত ধরতে চেয়েছেন নির্মোহভাবেই। নিজের আবেগ আরোপিত করতে চাননি গল্পে। এবং এই প্রচেষ্টায় তিনি পাশে পেয়েছেন এডি রেডমায়নে এবং এ্যালিসিয়া ভিকান্দেরকে। রেডমায়নে ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’-এ স্টিফেন হকিং-এর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য গত বছর অস্কারে সেরা অভিনেতার সম্মান পেয়েছেন। আইনার বা লিলির ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য এ বছরও তিনি নমিনেশন পেয়েছেন। কিন্তু তারপরেও বলতে হয়, ‘দ্য ড্যানিশ গার্ল’ এ্যালিসিয়া ভিকান্দেরের ছবি। গত বছর ‘এক্স মেশিনা’, ‘দ্য ম্যান ফ্রম আঙ্কল’, ‘বার্ন্ট’ এবং ‘দ্য ড্যানিশ গার্ল’ চার রকমের ছবিতে চার ধরনের চরিত্রে কাজ করেছেন তিনি। কখনও তাঁকে বেমানান লাগেনি। ব্রিটিশ ক্রিটিক পুরস্কারে সেরা সহ-অভিনেত্রীর সম্মান পেয়েছেন গারডার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্যও। এই ড্যানিশ গার্লটি তাহলে কে? নিঃসন্দেহে লিলি এলবের কথা মাথায় রেখেই এই নামকরণ। কিন্তু তারপরেও ছবির শেষে যেন মনে হয়, সে গারডা ওয়্যাগনার ছাড়া আর কেউ নয়।
×