ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চঞ্চলবাজি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

চঞ্চলবাজি

‘আগে যেখানে কেএফসিটা ছিল ইস্কাটনে, ওইখানে থাকব সন্ধ্যার পর’- ফোনালাপে দেয়া এ প্রতিশ্রুতি রাখলেন চঞ্চল। সন্ধ্যার একটু পরেই তাকে আবিষ্কার করা গেল, ভিড় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন হাত নেড়ে নেড়ে, শব্দ করে হেসে। শহরজুড়ে শীতের দাপট বেড়েছে। বাসে, রিক্সায়, গাড়িতে জবুথবু মানুষের চলাফেরা। নাগরিক ব্যস্ততা আর শীত দু’টোই মানুষকে কাবু করে ফেলেছে বেশ। তবে চঞ্চলের আশপাশে যারা দাঁড়িয়ে, অনেকটা বৃত্তাকার হয়ে, তাদের যেন ক্লান্তি নেই! ঘাড় সোজা করে একদৃষ্টিতে তারা চঞ্চলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। যারা এতক্ষণ ধরে কেবল কথাই শুনে যাচ্ছিল খানিকটা দূরত্ব রেখে, প্রতিবেদককে চঞ্চল ‘চলো ভেতরে গিয়ে বসি’ বলার পর, ঘিরে ধরল ঘন হয়ে। একটাই দাবি- একটা ছবি। ‘ওহ ছবি? তোলো তোলো’ শেষ করে চঞ্চল গলি ধরে আরও খানিকটা হেঁটে একটা বাড়ির গেট পেরিয়ে নিজের গাড়িতে হেলান দিলে বললেন, ‘আমার অভিনয় জীবনের সেরা অভিনয়টাই আয়নাবাজিতে করার চেষ্টা করেছি।’ আগেই কথা হয়ে ছিল, কথা হবে ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে। অমিতাভ রেজার এ ছবিটির দৃশ্যধারণ শেষ করে বসে আছেন চঞ্চল। শেষ ডাবিং, এডিটিংও। শেষ ধোয়ামোছাটা চলছে। চঞ্চলও ‘আয়না’ থেকে বেরিয়ে এসে আবার ছোটপর্দায় কাজ করছেন। কিন্তু করতে পারছেন কই! যেমনটা জানাচ্ছিলেন, এ ছবির গল্প চরিত্রে এমনভাবে ঢুকে পড়েছেন যে, বেরুতে কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে অন্য চরিত্র নিয়ে অন্য সেটে অন্য নাটকে কাজ করতে! ছবির প্রস্তুতি থেকে শুরু করে শূটিং- সময় লেগেছে মাস চারেক। এই চার মাসে আর কিছু করেননি। যে সে ব্যাপার তো নয়! একই ছবি, একই নাম হলেও চরিত্র ৭-৮টি। প্রত্যেকটি চরিত্রের মানসিকতা আলাদা, বলার-চলার ধরন আলাদা। আয়ত্ব করতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই পড়েছিলেন চঞ্চল। চোখ রাখা হয় ‘আয়নাবাজি’ শুরুর আগের দিনগুলোয়- কীভাবে আলাপ হলো ছবিটি নিয়ে? কী দেখে তিনি রাজি হলেন? এ দুটি প্রশ্নের উত্তর খুব বেশি বড় নয়, খুব বেশি দ্বিধার নয়। রাজি এ কথায়! চঞ্চল বলছিলেন, ‘আয়নাবাজির জন্য অমিতাভ রেজা যখন আমাকে বলল, তখন প্রথম কনফিডেন্টের জায়গা ছিল যে, সে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পরিচালক। তার নাটকে অভিনয় করেছি। আমার কাছে অমিতাভ রেজা হচ্ছে, প্রুভড একজন ডিরেক্টর, যার ওপর চোখ বুজে ভরসাটা করা যায়। দ্বিতীয়ত, গল্পটি যখন শুনলাম, আমার কাছে অনেক চ্যালেঞ্জিং মনে হলো। কারণ, এই একই আমাকে ভেঙ্গে ছয়-সাতটি চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি চরিত্রকে আলাদা করতে গেলে, আমার ভাল মেকআপ আর্টিস্ট লাগবে। কারণ আমি জানি, মেকাপ ভাল না হলে আমার অভিনয় ভাল হবে না। অমিতাভ রেজা কলকাতা থেকে মেকআপ আর্টিস্ট আনলেন।’ তারপর প্রস্তুতির কিছু অধ্যায় আছে। তিন মাস তিনি ভাতই খাননি! দু’মাস প্রত্যেকদিন বাড়িতে এসে ব্যায়াম করিয়ে গেছেন বিশেষজ্ঞ। টানা একমাস হয়েছে ওয়ার্কশপ। চঞ্চলের ‘আয়না’ হয়ে ওঠা এভাবেই। কথা অন্যও আছে। ‘মনপুরা’, ‘টেলিভিশন’, অথবা ‘মনের মানুষ’-এর যে চঞ্চল, তার যে ইমেজ, দর্শকদের তার ওপর যে আস্থা; চঞ্চল সেখান থেকে সরে এসেছেন বার বার। বিশেষ করে টিভিপর্দায়। তবে প্রত্যাশা পূরণের সব দায়ভার একা তার ওপর দিলে অন্যায়ই হয়ে যায় খানিকটা! যেখানে পুরো টিভি নাটকের হালচাল সুবিধের নয় তেমন একটা। বলে দিলেন, ‘এর মধ্যে আমি কিন্তু আরও অনেক ছবির অফার পেয়েছি। কিন্তু করিনি, ওই একটি কারণেই- প্রত্যাশার কথা ভেবে।‘ এত বছরে তার ছবি সংখ্যা হাতে গোনা। খুব বুঝে, হিসেব করে, তবেই সায় দিয়েছেন। ‘আয়নাবাজি’ও তার খুব হিসেবের, পরিশ্রমের ফসল। কিছুদিন আগে ট্রেলার বেরিয়েছে, সর্বমহলে দারুণ প্রশংসিত। চঞ্চলের তাই বিশ্বাস, ভাল লাগবে দর্শকদের। পূরণ হবে তার প্রতি দর্শকদের প্রত্যাশা।
×