ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দল। এ দলটিকেই ৪৩ রানে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দল। নাজমুল হোসেন শান্তর (৭৩) অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর ৩ উইকেট করে নেয়া অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে এ জয় মিলে। রবিবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ও ২ ফেব্রুয়ারি নামিবিয়ার বিপক্ষে জিতলে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ যুব দল। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হয় ম্যাচটি। ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। শান্তর ৭৩, জয়রাজ শেখের ৪৬ ও পিনাক ঘোষের ৪৩ রানে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান করে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯। উইয়ান মুল্ডার পায় ৩ উইকেট। জবাবে স্পিনেই ধস নামে দক্ষিণ আফ্রিকা যুব দলের। স্পিনার মিরাজ, সালেহ আহমেদ শাওন (২/৩৭) ও সাইদ সরকারের (২/৩৯) ঘূর্ণির জাদুতে কাবু হয় প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। ৪৮.৪ ওভারে ১৯৭ রান করে অলআউট হয়। লিয়াম স্মিথ ১৪৬ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০০ রান করে। তবে বাংলাদেশের তিন স্পিনারের সঙ্গে সাইফুদ্দিনের গতির ঝড়ও ওঠে। তাতে করে হার হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। শুরুতেই ৮২ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৩ রান করে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা শান্ত ম্যাচসেরা হন। ঘরের মাঠে হচ্ছে অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যেমন সেই সম্ভাবনা দেখছেন। এখন সাকিবসহ জাতীয় দলের সব ক্রিকেটার আছেন খুলনায়। অনুশীলনে ব্যস্ত। হোটেল সিটি ইনে আছেন তারা। সেখানে এফএম রেডিও চ্যানেল ‘রেডিও ধ্বনি’-এর একটি অনুষ্ঠানে সাকিব জানান, ‘এটা আমাকে আশান্বিত করে যে নিজেদের দর্শকের সামনে খেলবে বাংলাদেশ। আমাদের দলটা তরুণ ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণে গড়া। বড় মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের। তারা ম্যাচ-উইনারও বটে। সুতরাং তাদের কাছে ভাল কিছু প্রত্যাশা করতেই পারি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার মতো সব সম্ভাবনাই রয়েছে বাংলাদেশের। কমপক্ষে সেমিফাইনাল তো আশা করতেই পারি। চলুন, আমরা সবাই দলের জন্য সেরাটাই (শিরোপা জয়) কামনা করি।’ সেই সেরার ঝলক প্রথম ম্যাচেই মিলেছে। ২৪১ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় ওভারেই মেহেদী হাসানের বলে বিদায় নেন ওপেনার ভেরেইন। এরপর দলীয় ২৭ রানে মুল্ডারকে সরাসরি বোল্ড করেন সাইফুদ্দিন। এরপর ১৪তম ওভারে আবারও আঘাত হানেন সাইফুদ্দিন। জর্জিকেও বোল্ড করেন এই ডানহাতি পেসার। দলীয় ৬০ রানে মুনস্যামিকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন সাঈদ সরকার। প্রাথমিক এই বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেন এক প্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার স্মিথ। তাকে সঙ্গ দেন গালিম। কিন্তু ৩৪তম ওভারে তাকেও ফিরিয়ে দেন সাঈদ। শেষ ৬০ বলে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল পাঁচ উইকেটে ৯৭ রান। কিন্তু ৪২তম ওভারে আক্রমণে আসেন অধিনায়ক মিরাজ। ফিরিয়ে দেন গালিমকে। গালিম ফিরে গেলেও একপ্রান্ত ধরে খেলতে থাকেন স্মিথ। তুলে নেন সেঞ্চুরি। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই তাকে ফিরিয়ে দেন সালেহ আহমেদ শাওন। আউট হওয়ার আগে ১৪৬ বলে নয় চার ও এক ছক্কায় ১০০ রান করেন তিনি। স্মিথ আউট হওয়ার এক বল পরেই আবার আঘাত হানেন শাওন। উইলিয়াম লুডিককে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। দলীয় সংগ্রহে আর ২০ রান যোগ করতেই শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। ৪৮.৪ ওভারে ১৯৭ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ। বাংলাদেশের পক্ষে মিরাজ ও সাইফুদ্দিন নেন তিনটি করে উইকেট। এছাড়া সাঈদ এবং শাওন নেন দু’টি করে উইকেট। এর আগে বাংলাদেশ টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও রানের খাতা খুলতে সময় লেগেছে চতুর্থ ওভার পর্যন্ত। শুরু থেকেই ধীরগতির ব্যাটিং হয়তো সমর্থকদেরও ভাবিয়ে তুলেছিল। কিন্তু দলীয় ৩০ রানে ওপেনার সাইফ হাসান আউট হলে জয়রাজ শেখকে নিয়ে এগোতে থাকেন পিনাক ঘোষ। শুরু থেকেই দারুণ বোঝাপাড়ার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছিলো তাদের ব্যাটিং। তাদের উপরে ভর করেই গতি পেতে থাকে রানের চাকা। মাঝখানে একবার সহজ রানআউটের ফাঁদে পড়তে গিয়েছিলেন পিনাক। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের ছুঁড়ে দেয়া বল সরাসরি স্ট্যাম্পে লাগাতে না পারায় বেঁচে যান সে যাত্রায়। তখন ৪০ রানে ছিলেন পিনাক। ভাগ্য খারাপ, তিন রান যোগ করতেই সেই রানআউটের ফাঁদেই পড়তে হলো তাকে! ৫১ বলে ৪৩ রান করে ফিরতে হয় তাকে। এই জুটি থেকে আসে মোট ৪৪ রান। জয়রাজ তখন উইকেটে রয়েছেন ২৪ রানে। নাজমুল হাসান শান্তকে নিয়ে তিনিও বড় সংগ্রহের পথে এগোচ্ছিলেন। সফল হতে পারেননি। পিনাকের মতো ৪০ পার করতেই (৪৬ রান ৫০ বলে) আউট আউট হন। সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজও। তবে মিডল অর্ডারে তার করা ২৩ রানের গুরুত্ব অনেক বেশি। একপ্রান্তে তখনও সমানে প্রতিরোধ গড়ে চলেছেন শান্ত। অন্যপ্রান্তে ততক্ষণে সাজঘরের পথ ধরে ফেলেছেন জাকির হোসেন (১৯) ও সাইদ সরকার (৪)। পরবর্তীতে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে নিয়ে এগোতে থাকলেও শান্ত নিজেই আউট হন। তার ব্যাট থেকে আসে ইনিংস সেরা রান। শেষ পর্যন্ত রঞ্জিত সাহা (১) ও সাইফুদ্দিন (১২) অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেন।
×