ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পবার আলোচনা সভায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

রাজধানীর সব ভবনের ছাদে বাগান করুন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

রাজধানীর সব ভবনের ছাদে বাগান করুন

স্টাফ রিপের্টার ॥ নগরীর বায়ু দূষণরোধে এবং গ্রীষ্মকালের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজধানীর সব ভবনের ছাদে বাগান করার কথা বলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী ঢাকার পরিবেশ দিন দিন বিষিয়ে উঠছে। গ্রীষ্মকালের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা এবং বাতাসে দূষণ মাত্রা বৃদ্ধি রোধে ছাদে বাগান হতে পারে উত্তম সমাধান। শহরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা, নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং বিষমুক্ত সবজি প্রাপ্তিতে ছাদে বাগান তৈরির জন্য বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান তারা। বুধবার পরিবেশ সংগঠন পবা আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এ আহ্বান জানান। সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারা বলেন, বাসার ছাদে বাগান করা এবং বাগান পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা থাকলেও এ বিষয়ে নীতিমালা, সচেতনতা ও সরঞ্জামাদির সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। অথচ নীতিমালা থাকলে ছাদে বাগান বিস্তারের মাধ্যমে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেত। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে। রাজধানীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ ও শব্দ দূষণও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন। পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, জার্মানিতে শতকরা ১২ভাগ ছাদ সবুজ এবং টোকিও আইনে সব নতুন ছাদের অন্তত ২০ ভাগ সবুজ রাখার কথা বলা হয়েছে। টোকিও সরকারের হিসাব মতে, যদি তাদের অর্ধেক ছাদ সবুজ হয় তাহলে প্রতিদিন এয়ার কন্ডিশনে ব্যবহৃত জ্বালানি বাবদ এক মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। সিঙ্গাপুরে এক গবেষণায় দেখা যায়, যে পাঁচতলা বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে প্রতিষ্ঠিত বাগান বছরে জ্বালানি খরচের ০.৬-১৪.৫% সাশ্রয় হতে পারে। অনেক উন্নত দেশে ভবন গরম ও শীতলকরণে ৩০ভাগ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়ে থাকে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ছাদ বাগানের মাধ্যমে কম খরচে স্থায়ীভাবে জ্বালানি ব্যবহার কমানো, ভবনের বাহ্য রূপের উন্নতি, তাপমাত্রা হ্রাস করা সম্ভব। ছাদে বাগান জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। বিষমুক্ত টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল উৎপাদনেও ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্ষামৌসুমে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে জলাবদ্ধতা রোধে ভূমিকা রাখবে। ছাদের সবুজ স্তর বিভিন্ন ট্রান্সমিটিং স্টেশন থেকে নিঃসরিত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রতিহত করে। পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ছাদে বাগান প্রতিদিন ভবনের বাসিন্দাদের জন্য হতে পারে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন তথা বিনোদনের অন্যতম স্থান। ছাদ বাগানের উদ্ভিদরাজি হতে পারে কোন এক মহাপ্লাবন বা মহাদুর্যোগের পর পুনরায় বাঁচার জন্য উদ্ভিদ জিন ব্যাংক। সর্বোপরি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে যা সামাজিক অবক্ষয় রোধে এবং অর্থনৈতিক মুক্তিতে ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করেন বক্তারা। আলোচনাসভায় ছাদে বাগান তৈরিতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা করা, সরকারী ও বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করা। আইনের মাধ্যমে রাজউকের বিল্ডিং কোডে ছাদে বাগান বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান করার এবং রিহ্যাব ও সিটি কর্পোরেশনকে তা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়াও নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, কৃষিবিদ, উপকরণ সরবরাহকারীদের প্রতিনিধি, ছাদে বাগানকারী সংগঠনের প্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশন, নগর উন্নয়ন কর্পোরেশন, পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা যেতে পারে। রাজউকের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ছাদে বাগান শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়া এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন কথা সাহিত্যিক বিপ্রদাস বড়ুয়া, বাংলাদেশ গ্রীন রুফ মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক নেয়ামুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী গোলাম হায়দার, পল্লীমা গ্রীনের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, বাংলাদেশ নার্সারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাদিউল ইসলাম টিপু, বাংলাদেশ প্ল্যান্ট নার্সারি সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এম কে ম-ল, সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন, মডার্ন ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ।
×