ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে মুরগি-মাছের খাবার তৈরি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে মুরগি-মাছের খাবার তৈরি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির অপরাধে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক সাত জনকে জেল জরিমানা ও তিনটি কারখানা সিলগালা, এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান) কর্তৃক ৫ লাখ টাকার গাঁজাসহ তালিকাভুক্ত মহিলা মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই হাজতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বেলা এগারোটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন কালোনগর এলাকায় শিপন ফিড মিল, শোয়েব এন্টারপ্রাইজ ও খলিলের মাছের কারখানায় অভিযান চালায় র‌্যাব-২ এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। অভিযানে র‌্যাব-২ এর উপ-পরিচালক ড. মোঃ দিদারুল আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রতিনিধি ডাঃ মোঃ লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে কারখানা তিনটি সিলগালা করে দেয়া হয়। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তিনটির সাত জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল জরিমানা ও আর্থিক দ-ে দ-িত করা হয়। জয়নাল আবেদিনকে (৩২) ৩ মাসের কারাদ-, মোঃ জাহাঙ্গীরকে (২০) ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ দিনের কারাদ-, মোঃ আবুল কালাম আজাদকে (৪০) ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ দিনের কারাদ-, মোঃ গোলাম সারোয়ারকে (৪২) ৩ মাসের কারাদ-, মোঃ কালামকে (৩৬) ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদ-, মোঃ নাসির উদ্দিন (৫৫) ও মোঃ সাইদ শেখকে (৩০) ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককে ১৫ দিনের কারাদ- দেন বিচারক। সাজাপ্রাপ্তদের জবানবন্দীর বরাত দিয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, ট্যানারির বর্জ্য ও শুঁটকি থেকে মুরগি ও মাছের খাবার তৈরি করা হয়। তাদের কাছ থেকে এসব খাবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। মুরগি বা মাছের খাবারে ৩০ পিপিএম মাত্রার বেশি ক্রোমিয়াম থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ কারখানায় উৎপাদিত খাবারে প্রায় পাঁচ হাজার পিপিএম মাত্রায় ক্রোমিয়াম রয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। সাধারণত মুরগি বা মাছের উন্নতমানের খাবারে এক শ’ কেজির দাম সাড়ে চার হাজার টাকা। অথচ কারখানাগুলোতে উৎপাদিত খাবার মাত্র তিন হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এসব খাবারে মুরগি, মুরগির ডিম আর মাছ তুলনামূলক দ্রুত এবং বেশি বড় হয়। মুরগি বা ডিম এবং মাছ বড় করতে প্রচুর প্রোটিন বা আমিষের প্রয়োজন হয়। পশু চামড়ায় প্রচুর প্রোটিন বা আমিষ থাকে। ফলে চামড়ার বর্জ্য থেকে তৈরি মুরগি বা মাছের খাবার খাওয়ালে মাছ বা মুরগি ও মুরগির ডিম দ্রুত এবং বেশি বড় হয়। কিন্তু এসব খাবার খুবই বিষাক্ত। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘ সময় এসব খাবার খেলে শরীরে নানা রোগ বালাই বাসা বাঁধতে পারে। আমদানিকৃত মিটবন্ড ব্যবহার করে মাছ ও মুরগির খাবার তৈরির কথা। কিন্তু মিটবন্ডের দাম বেশি হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব পদ্ধতিতে মাছের ও মুরগির খাবার তৈরি করে বিক্রি করছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় বিভিন্ন ধাপে অন্তত ২০ প্রকারের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ক্রোমিয়াম এসব কেমিক্যালের মধ্যে অন্যতম। চামড়ার ওপরের অংশের মতো মেশিনের সাহায্যে ভেতরের অংশের চর্বি ছাড়িয়ে মসৃণ করা হয়। মেশিনে ছাটার সময় চামড়ার গুঁড়া বা পাতলা অংশ বা চর্বি কেটে পড়ে। এসবকে ট্যানারির ঝুঁট বা উচ্ছিষ্ট বলা হয়। এসব উচ্ছিষ্ট দিয়েই তৈরি হয় মুরগি ও মাছের খাবার। এসব খাদ্যের বেশির ভাগই মুরগি বা মাছের শরীরে জমে থাকে। এ ধরনের মাছ বা মুরগি খেলে মানবদেহে ক্যান্সার (বিশেষত ফুসফুস ক্যান্সার), টিউমার, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্রে আলসার, এ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা রোগ বালাই জন্ম নেয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-২ এর অভিযানে ময়মনসিংহ থেকে ৫ লাখ টাকা মূল্যের গাঁজাসহ তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী রিনা খাতুন (২৫) গ্রেফতার হয়। উত্তরা এপিবিএন সদর দফতর থেকে মিডিয়া বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার এএসএম হাফিজুর রহমান জানান, এপিবিএন-২ এর অপারেশন অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ ইব্রাহীমের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। গ্রেফতারকৃত রিনা খাতুন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। অভিযানে রিনার কাছ থেকে ২৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। এদিকে বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারের কয়েদি মনসুর মোল্লা (৬০) এবং হাজতি সুবাস নন্দির (৪২) মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে তাদের ভর্তি করা হয়েছিল।
×