ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিনদিনের মধ্যে বৃষ্টি, শীত আরও বাড়তে পারে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

তিনদিনের মধ্যে বৃষ্টি, শীত আরও বাড়তে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী তিন দিনের মধ্যে দেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে। আরও বেড়ে যেতে পারে শীতের তীব্রতা। শীতজনিত কারণে মানুষের কষ্টের মাত্রা ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বুধবারও মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে শীতজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। বুধবারও দিনের অধিকাংশ সময় সারাদেশে বিরাজ করে ঘন কুয়াশা, অনুভূত হয় তীব্র শীত। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয় ব্যাহত। দেশের সব ক’টি সেন্টারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েই চলেছে। বুধবার ৪১টি সেন্টারের মধ্যে ২৫টির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে। অর্থাৎ নতুন নতুন জায়গায় বিস্তার লাভ করে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। গত কয়েক বছরে একই সময়ে এত সংখ্যক সেন্টারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এভাবে হ্রাস পায়নি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার কুয়াশার দাপট বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ঘন কুয়াশা অব্যাহত রয়েছে। কুয়াশার কারণে জলীয়বাষ্প উপরে যেতে পারছে না। ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ শুকাচ্ছে না। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি গত দু’সপ্তাহ ধরে উত্তরে ঠা-া হাওয়ারও বেশ প্রভাব বিরাজ করছে। চলতি মাসে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে, যা এখন পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নেয়নি। আগামী দু’ তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রা নেমে গেলে চলমান মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ রূপ নিতে পারে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বুধবারও দেশের অধিকাংশ সেন্টারের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৬.৭ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাদলগাছিতে ৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ২২.১ ও ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে, শীতজনিত কারণে রাজধানীতে সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নগরীর অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এমন মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তরা ভিড় জমাচ্ছে। রোগীর কাশি অনেক সময় রূপ নিচ্ছে শ্বাসকষ্টে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। প্রতিবছরই শীত মৌসুমে এসব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও বিএমএ সিনিয়র সহ-সভাপতি ডাঃ আব্দুর রউফ সর্দার বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বেড়েছে। প্রতিবছরই শীত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এমন অবস্থা হয়ে থাকে বলে জানান ডাঃ আব্দুর রউফ সর্দার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক মুশতাক হোসেনও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, সর্দি-কাশি জ্বর নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। তবে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না। ভাইরাসবাহিত অসুখে আক্রান্ত হলে বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না। পেটের পীড়া ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের হাসপাতালের বহির্বিভাগে আগত সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এ রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে ওঠে। শিশুদের বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া। নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, অব্যাহত শীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিশু। প্রতিদিন মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ২৫ জন। গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে প্রায় চার শতাধিক ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। রোপা আমন ধানের বীজতলা হলুদে হয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া থেকে জানান, ঠা-াজনিত কারণে তনাশ্রী নামে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৬১ রোগী সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে এ সংখ্যা দু’ শতাধিক।
×