ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

৯০ ভাগ উন্নয়নই হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

৯০ ভাগ উন্নয়নই হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে বলেন, কেউ যদি ব্যক্তি স্বার্থে দেশের সর্বনাশ করতে চায়, দেশের মানুষের স্বার্থ না দেখে- তাদের করুণা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। এটা ঠিক যে, কোন বিশেষ ব্যক্তির স্বার্থের কারণে আমাকে অনেক সময় অনেক থ্রেট (হুমকি) করা হয়েছিল। একজন বিশেষ ব্যক্তির একটা এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) পদ না থাকলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করা হবে। এটা সরাসরিও বলা হয়েছে। এই ধরনের কথা আমাকে শুনতে হয়েছে। সেগুলো আমি কিছু বলতে চাই না। আসলে মানুষের যদি দেশপ্রেম না থাকে, জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ না থাকে, কেউ যদি সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ থাকে- তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যাবে তা জনগণই বিচার করবে। আমি সেই বিচারের ভার জনগণের ওপরই ছেড়ে দিলাম। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এ্যামিলির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি মার্কিন জরিপ সংস্থা আইআরআইয়ের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম শত বাধা উপেক্ষা করে দেশের এমন অভূতপূর্ব উন্নয়নের শক্তি ও সাহস কোথায় থেকে পান? জানতে চাইলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সততাই আমার শক্তি, সততাই আমার সাহস। আমার জীবনের রাজনীতির একটাই লক্ষ্যে যে মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করেছে। এই মানুষের অর্থনীতি পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নেব। ছোটবেলা থেকে আমরা যা দেখেছি সন্তান হিসেবে তা আমাদের পালনীয়। আমি মনে করি, ক্ষমতা জনগণের জন্য কিছু করার সুযোগ। তিনি বলেন, নিজে কি পেলাম সেটা কখনও দেখি না। আমরা কখনও এটা চিন্তাও করি না, ভবিষ্যতেও করব না। তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের বলেছি উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হও, শিক্ষায় বড় সম্পদ। নিজের জন্য বা সন্তানদের জন্য কি রেখে গেলাম- সেটা কখনও দেখি না। দেশের মানুষের জন্য কী করতে পারলাম, তাদের কী দিয়ে যেতে পারলাম- সেটাই আমরা রাজনীতি। আর জনগণের চিন্তা করি বলেই জনগণই আমার শক্তি। এদেশের মানুষের শক্তিতেই আমার শক্তি। দেশের মানুষের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে বলেই দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। এ সময় বিরোধী দলের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদেও এখন পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান বিরোধী দল (জাতীয় পার্টি) শুধু সরকারের সমালোচনাও করছে না, সরকারের ভাল কাজেরও প্রশংসা করছে। আজ সংসদে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে এটিই হওয়া উচিত। দেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী ॥ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে দেশের উন্নয়নের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ। বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। বিগত মেয়াদ হতে বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন গৃহীত কর্মসূচীগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিগত ৭ অর্থবছরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় মোট দেশজ আয় প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সামাজিক খাতের দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নিরাপত্তায় অগ্রগতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে আমাদের সাফল্য অভূতপূর্ব। সঙ্কটের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতুর ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে, আবার বেঁচে যেতেও পারে ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু তৈরির বিষয়টি আমাদের কাছে একটা নতুন বিষয়। সেতুটির নিচ দিয়ে রেল যাবে, আর দোতলা দিয়ে গাড়ি চলবে। আর পদ্মা সেতু অত্যন্ত খোরস্র্রোতা নদী। ফলে এই নদীর ওপর দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ সত্যিই অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ কারণে সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। সে কারণে ব্যয় বৃদ্ধিও পেতে পারে, আবার কমেও যেতে পারে। তবে ২০১৮ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি নিয়ে আমরা ওপারে যেতে পারব, রেলও চলবে। গ্যাস সঙ্কট দূর করতে প্রচেষ্টা চলছে ॥ জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক নতুন কূপ খনন করেছি। বাপেক্সকে আমরা শক্তিশালী করেছি। গ্যাস অনুসন্ধানও চলছে। কিন্তু তার পরও গ্যাস সঙ্কট যে কিছু নেই তা বলব না। সঙ্কট আছে, এই সঙ্কট দূর করতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ওপর থেকে ট্যাক্স তুলে দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারী যাতে আসে তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। সঙ্কট কাটাবার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সাধারণত শীতকালে গ্যাস অনেকটা জমে যায়, প্রবাহটাও কমে যায়। সে জন্য শীতকালে গ্যাসের সমস্যাটা দেখা যায়। গ্যাস একটা প্রাকৃতিক সম্পদ, এর একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা কিন্তু সরকারে আসার পর গ্যাসের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করেছি। বৃদ্ধি করলেও যেহেতু উন্নয়ন হচ্ছে চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বিকল্প হিসেবে আমরা এলএমজি আমদানি করার ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে এলএমজির টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা নির্মাণ করার পর বাইরে থেকে যদি আমরা গ্যাস আনতে পারি, হয়তবা আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীতকালে গ্যাসের ব্যবহারটাও একটু বেড়ে যায়। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ব্লক চিহ্নিত করেছি। টেন্ডার দেয়া হয়েছে। আমরা কিন্তু বসে নেই। অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কিন্তু এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার পরও কিছু সমস্যা আছে। আশা করি, এলএমজি টার্মিনাল হয়ে গেলে এই সমস্যা অনেকটা দূর হবে। এক বছরে সাড়ে ৫ লাখ কর্মী বিদেশে ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সফলতায় ২০১৫ সালে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশী কর্মী গমন করেছে। বিগত জোট সরকারের অপনীতির কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সঙ্কুুচিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যেও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ফলে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত জোট সরকারের আমলে বিশ্বের মাত্র ৯৭টি দেশে কর্মী প্রেরণ করা হতো। বতর্মান সরকারের আমলে নতুন আরও ৬৩টি দেশে কর্মী প্রেরণসহ বর্তমানে এই সংখ্যা ১৬০টি দেশে উন্নীত করা হয়েছে।
×