ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পোস্টার নুরুল ইসলাম ॥ ইতিহাসের কল্যাণ হাত -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

পোস্টার নুরুল ইসলাম ॥ ইতিহাসের কল্যাণ হাত  -স্বদেশ রায়

শেষের দিকে তিনি একটি সেলফোন নিয়েছিলেন। আগে সেলফোন ব্যবহার করতে পারতেন না। মোবাইল সেটে তাঁর নাম লিখি, পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাই। মোবাইল সেটে তাঁর গ্রামীণ নাম্বারটি সোমবার থেকে বার বার দেখছি। যদিও এখন নিজেকে আর ঠিক আগের মতো ভাল মানুষ মনে হয় না। মনে হয় হৃদয়ের আবেগগুলো, ভালবাসাগুলো কেন যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করে প্রতিমুহূর্তে নিজেকে সব থেকে গুটিয়ে নিতে। চারপাশের সব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার একটা তাড়া কোথায় যেন মনের ভেতর ফেরে সব সময়ই। তারপরেও এই শুষ্ক, নষ্ট মন নিয়ে যতবার পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাইয়ের সেলফোন নাম্বারটি দেখছি ততই কেন যেন নিজেকে শান্ত রাখতে পারছি না। তাঁকে নিয়ে লেখার ঠিক যোগ্য মানুষ আমি নই। এম আর আখতার মুকুল ভাই বেঁচে থাকলে তিনিই সব থেকে ভাল লিখতে পারতেন। গাফ্ফার ভাই অবশ্য লিখবেন। শিল্পী হাশেম খানও তাঁকে নিয়ে লিখতে পারেন। কারণ, তিনিই ছয় দফা পুস্তিকার প্রচ্ছদ করানোর জন্য তখনকার তরুণ শিল্পী হাশেম খানের কাছে গিয়েছিলেন। যাহোক, তাঁর সঙ্গে কবে যে পরিচয় হয়েছিল তা ঠিক মনে নেই। তবে ছাত্রজীবনে নয়। সাংবাদিকতার জীবনের একটা ঘটনা মনে পড়ে। কোন একটা সাপ্তাহিক কাগজে তখনকার তরুণ মন নিয়ে সিরাজুল আলম খানের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ধারণার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম। উপসম্পাদকীয় হিসেবে লেখাটা প্রকাশিত হবে তাও ভাবিনি। কারণ তখন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ছাড়া প্রায় কারও লেখা উপসম্পাদকীয় হিসেবে ছাপা হতো না। কেন যেন মনে হয়েছিল তখন সিরাজুল আলম খান ও জিল্লুর রহমানের চিন্তা সঠিক নয় তাই লিখেছিলাম। লেখা প্রকাশ হয় তা জানতে পারি বাংলাবাজার রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ফজলুল হক বিএসসির কাছ থেকে। উনি ওনার প্রকাশনা সংস্থা থেকে বের হচ্ছেন, সম্ভবত তখন আমিও চলন্তিকা বইঘর থেকে বের হচ্ছি। আমাকে দেখেই উনি হাত ধরলেন। বললেন, চল আওয়ামী লীগ অফিসে যাই। রিক্সায় বসে তিনি লেখাটার কথা বললেন, সঙ্গে প্রশংসাও। কুণ্ঠিত হয়ে পড়ি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে নামতেই দেখি শাদা খদ্দরের পাঞ্জাবি পরা ছোটখাটো একজন মানুষ। তাঁর হাতেও একই সাপ্তাহিক। তিনি ফজলুল হক বিএসসি’র দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ভাই দেখেছেন, সিরাজুল আলম খানের এসব নষ্টামির কত কড়া জবাব এখানে দিয়েছে। আমাদেরই লোক, কিন্তু ঠিক চিনি না কে? বিএসসি চাচা বললেন, এই যে ধরে নিয়ে এসেছি। গরমের দিনে খাকি জ্যাকেট পরা, মুখে এলোমেলো দাড়ি- এমন একটা ছেলে দেখে তিনি এক মুহূর্ত একটু ভাল করে তাকিয়ে নিলেন। যাকে বলে সিংহাবলোকন। অর্থাৎ একেবারে পা থেকে মাথা পর্যন্ত। তারপরে জড়িয়ে ধরলেন। সেই থেকে গভীর সম্পর্ক। না আর কোনদিন নষ্ট হয়নি। মানুষকে আপন করে নেবার যে কী ক্ষমতা তার ছিল তা প্রকাশ করার কোন ভাষা আমার নেই। একই আদর্শে বিশ্বাসী মানুষকে যে এমন আপন করে পরিবারের মানুষের মতো ভাবতে পারেন কেউ তা হয়ত তাকে না দেখলে জীবনে বুঝতাম না। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অটুট। তবে সত্য বলতে হয়, তিনি বড় হলেও সম্পর্কটা অনেকটা একপক্ষীয়ভাবে রক্ষা করতেন। বিশেষ করে তাঁর রায়েরবাজার বাসায় ল্যান্ড ফোন কানেকশান পাবার পরে প্রায় প্রতিদিনই তিনি ফোন করতেন। আর যখন যে কাগজে চাকরি করেছি, লেখা প্রকাশের দিন হলে তো অবশ্যই তাঁর একটা ফোন আসবেই। এক সময়ে সন্ধ্যার পরে এম আর আখতার মুকুল ভাইয়ের সাগর পাবলিশার্সে একটা ভালো আড্ডা হতো। পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাইও মাঝে মাঝে সেখানে আসতেন। অনেকদিন তিনি এলে এম আর আখতার মুকুল ভাই একটু রসিকতা করে বলতেন, কি নুরুল ইসলাম সাহেব, ঢাকা-ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন ফ্লাইটে এলেন নাকি? একটা মিষ্টি হাসিতে নুরুল ইসলাম ভাইয়ের মুখটা ভরে উঠত। আসলে সৎ মানুষের হাসিও যে ভিন্ন হয় তা পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাইকে না দেখলে ঠিক বোঝা যায় না। তখনও ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগে। এম আর আখতার মুকুল ভাইয়ের বুকশপের উল্টা পাশেই তাঁর বাড়ি। পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাই এদিকে এলেই ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করে যেতেন। ড. কামাল হোসেনও তাঁকে নেতার মতো সম্মান করতেন। কারণ, ড. কামাল হোসেনরা যখন আওয়ামী লীগে আসেন তখন তিনি অনেক বড় নেতা আওয়ামী লীগের। যাহোক, তারপরেও তিনি ড. কামাল হোসেনকে চিনতেন। অনেক দিন আমার অফিসে বসে বলেছেন, এত বড় শিক্ষিত মানুষ। বঙ্গবন্ধু তাকে কত সুযোগ দিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বানিয়েছিলেন। নেত্রী (শেখ হাসিনা) তাকে প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট করলেন। কিন্তু কখনই লোকটাকে চেনা গেল না। এই ‘চেনা গেল না’- এর থেকে বেশি কিন্তু কখনই পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাই বলতেন না। অথচ তিনি ’৭১, তার আগের ও পরবর্তী সময়ের এই সব আওয়ামী লীগ নেতার অনেক ঘটনা বলতেন। কিন্তু সমালোচনার ভাষাটি ছিল তাঁর এমনই মার্জিত। সমালোচনার ভাষাটি যেমন তাঁর এমন মার্জিত ছিল তেমনি নিজেকে তিনি সব সময়ে আড়াল করে রাখতেন। খুব একান্তে তাঁর সঙ্গে যখন দীর্ঘ সময় কথা বলেছি, তখনই কেবল কিছুটা বোঝা যেত মানুষটির হৃদয়। তবে একটি বিষয় কখনই বুঝতে পারেনি, কে তাঁর হৃদয়ের গভীরে সব থেকে বেশি ছিল, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু না বেগম মুজিব। বেগম মুজিব তিনি কখনও বলতেন না। বলতেন ভাবী। এই দেশ সৃষ্টির ইতিহাসের কথা বলতে গেলেও দেখেছি তাঁর চোখ দিয়ে দর দর করে জল গড়িয়ে পড়ত। তাঁর প্রিয় মুজিবভাই সম্পর্কে তিনি চোখের পানি ছাড়া কখনই কোন কথা বলতে পারেননি। তবে একদিন দুপুরে ৩২ নম্বরে তাঁকে একাকী পেয়েছিলাম। ওইদিন তাকে সব থেকে বেশি কাঁদতে দেখেছি তাঁর ভাবীর (বেগম মুজিব) কথা বলে। কথা উঠেছিল ৩২ নম্বরের কাঁঠালগাছগুলো নিয়ে। তিনি বললেন, এই কাঁঠালগাছগুলো সব তাঁর এবং ভাবীর হাতে লাগানো। সেই নির্জন গ্রীষ্মের দুপুরে হঠাৎ তিনি আমার হাতটি তাঁর দু’ হাতের ভেতর নিয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলেন। আর বার বার বলতে লাগলেন, এই দেশ সৃষ্টির জন্য ভাবীর ত্যাগের কথা কেউ কোনদিন জানবে না, কেউ কোনদিন জানবে না। কী কষ্ট যে তিনি ছেলেমেয়ে নিয়ে করেছেন? আবার মুজিব ভাইকে যে কত সাহস ও পরামর্শ দিয়েছেন- তার যতটুকু সাক্ষী তাই মনে পড়লেই নিজেকে সামলাতে পারি না। বলে তিনি আর বলতে পারলেন না। শুধু কয়েক বার ‘ভাবী’, ‘ভাবী’ শব্দটি উচ্চারণ করলেন। আর শিশুর মতো কাঁদতে থাকলেন। তাঁর শিশুর মতো কান্না দেখে উঠে গিয়ে তাঁর মাথাটা বুকের ভেতর নেই। মনে হতে লাগল ভাবীর নয়, মায়ের জন্য একটি শিশু যেন কাঁদছে। এর পরেও জীবনে বহুবার তিনি টেলিফোনেও কেঁদেছেন বেগম মুজিবের কথা বলতে গিয়ে। এমনকি কয়েক বছর আগে আমার এই বর্তমান অফিস কক্ষে বসেও তিনি চোখের পানি ফেলেছেন। তাঁর প্রিয় ভাবীর অবদানের কথা বলার সময়ে। বাহাউদ্দিন চৌধুরী ভাইয়ের মৃত্যুর কয়েক বছর আগ থেকে রাজি করিয়েছিলাম জনকণ্ঠে লেখার জন্য। কারণ, তাঁর লেখায় আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস থাকত। যা এই নতুন প্রজন্মের জন্যে শুধু নয়, ভবিষ্যতে ত্যাগী মানুষ জন্মানোর জন্য খুবই দরকার। কারণ, একটি জাতি ও সমাজকে এগিয়ে যেতে হলে কিছু কিছু ত্যাগী মানুষের প্রয়োজন পড়ে। তাদের ত্যাগের ওপর নির্ভর করেই কিন্তু একটি সমাজ ও জাতি এগিয়ে যায়। এই চিন্তা থেকেই অনেকটা জোর করেই বাহাউদ্দিন ভাইকে রাজি করিয়েছিলাম লেখার জন্য। এমনকি ৫৪ মোগলটুলির ইতিহাসও কিছুটা তাঁকে দিয়ে লিখিয়েছিলাম। কারণ, এগুলো কেন যে এ জাতি সংরক্ষণ করল না তা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু এটুকু বুঝি ইতিহাসের মূল উপাদান বাদ দিয়ে যে ইতিহাস রচিত হয় ওই ইতিহাস জাতিকে ভবিষ্যত জেগে উঠতে বা এগিয়ে যেতে খুব সাহায্য করে না। যাহোক, বাহাউদ্দিন চৌধুরী ভাইয়ের স্মৃতিভ্রমের কারণে হোক বা দৃষ্টিভঙ্গির কারণে হোক, মাঝে মাঝে কোন তথ্য নিয়ে বাহাউদ্দিন চৌধুরী ও পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব হতো। পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাই কোনদিন এ বিষয়ে বাহাউদ্দিন ভাইকে ফোন করতেন না। তিনি ফোন করতেন আমাকে। কারণ, বাহাউদ্দিন ভাই আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে ছয় দফার উপস্থাপক হলেও পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাই কখনও তাকে কুলীন আওয়ামী লীগ নেতা মনে করতেন না। কারণ, বাহাউদ্দিন ভাই কমিউনিস্ট পার্টিতে গিয়েছিলেন। তাই পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাই তাকে কখনও ওই অর্থে প্রকৃত আওয়ামী লীগার মনে করতেন না। তাছাড়া এখানে আরেকটি বিষয় কাজ করত। প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা সব সময়ই সোহ্্রাওয়ার্দীকে অনেক বড় বা সঠিক হিসেবে দেখে। কিন্তু বামপন্থীরা দেখে আনন্দবাজারের চোখ দিয়ে। বাহাউদ্দিন ভাইও সোহ্্রাওয়ার্দীকে ভুল বুঝতেন। যা পোস্টার নুরুল ইসলাম ভাইয়ের একটা বড় কষ্টের কারণ ছিল। যে কারণে আমি তাঁকে যতই অনুরোধ করতাম না কেন সরাসরি কথা বলার জন্য- তিনি বলতেন, আমি যেন বাহাউদ্দিন চৌধুরীকে বিষয়টি বলি। তবে এ বড় বিষয় নয়, সব থেকে বড় দিক হলো আওয়ামী লীগের ইতিহাস নিয়ে যে কোন ভুল তথ্য কোথাও ছাপা না হয়- এ নিয়ে তিনি অনেকটা অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করতেন। ৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তিনি। মোনায়েম খাঁ হত্যা চেষ্টার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ১ নাম্বার আসামি, দুই নাম্বার আসামি শেখ মুজিবুর রহমান। তাই গোটা আওয়ামী লীগ যে তাঁর নখদর্পণে ছিল এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। নিজেকে খুব লো প্রোফাইলে রাখতেন যোগ্যতার তুলনায়। তাছাড়া তখন আওয়ামী লীগ কত দরিদ্র একটি রাজনৈতিক দল ছিল তা আজকের আওয়ামী লীগার ও আগত আওয়ামী লীগাররা বুঝতে পারেন না। কোন দুর্গম গিরি, কান্তার মরু পেরিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর এই নুরুল ইসলামের মতো সঙ্গীদের নিয়ে হিমালয় জয় করেন। সেদিন আওয়ামী লীগের পোস্টার ছাপানোর পয়সা ছিল না। প্রচার সম্পাদক নিজ হাতে সারা রাত জেগে পোস্টার লিখতেন। লাগাতেন নিজ হাতে। এই পোস্টার লিখতে ও লাগাতে লাগাতে- তাই তাঁর নাম হয়ে যায় পোস্টার নুরুল ইসলাম। আর এই পোস্টার লিখতে লিখতেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার সর্বশ্রেষ্ঠ পোস্টার, ’৭০-এর নির্বাচনের সব থেকে সাড়া জাগানো পোস্টারটিরও স্রষ্টা তিনি। যে বিখ্যাত পোস্টার ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’- এ পোস্টারের স্রষ্টা পোস্টার নুরুল ইসলাম। তাঁর মৃত্যুর পর নিজেকে সব থেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে এই ভেবে যে, একটি কাজ বার বার করব বলেও করিনি বা সময় করতে পারিনি। তাঁকে সব সময়ই বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে লিখতে বলতাম। তিনি বলতেন, তিনি নিজে লেখার থেকে ভাল হয় যদি আমি তাঁর কাছ থেকে শুনে লিখি। তাঁর সঙ্গে দেখা হলে বলতাম- একটা নির্দিষ্ট সময় করব- হয় তিনি আমার অফিসে আসবেন না হয় আমি তাঁর রায়েরবাজার বাসায় যাবো। তাঁর কাছ থেকে নোট নেব। কিন্তু আমিও তো সেই বাঙালি। রবীন্দ্রনাথ যাদের জন্য বাঙালির সংজ্ঞা তৈরি করে গেছেন- আমি তো তার বাইরে নই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আমরা ভূরি পরিমাণ বাক্য রচনা করিতে পারি কিন্তু তিল পরিমাণ কাজ করিতে পারি না।’ তাই সেই নোট নেয়া আর হয়নি। তিল পরিমাণ কাজটি আর করিনি। জানিনা সে নোট তিনি নিজে তৈরি করে গেছেন কিনা? তাঁর জীবনের শেষের এই ছয় মাসেরও বেশি হবে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল বলে মনে পড়ে না। তাই জানি না তাঁর স্মৃতিগুলো কারও কাছে সংরক্ষিত আছে কিনা? দেশের জন্য, তাঁর মুজিব ভাইয়ের জন্য সংসার, বিয়ে এসব কোনদিন ভাবারও সময় পাননি। এমনকি দেশের জন্য তিনি কী দিয়ে গেলেন তাও জানবে না কোনদিন এ জাতি। আসলে ঈশ্বর তাঁর নিজের চরিত্র দিয়ে তৈরি করে এমন কিছু কিছু মানুষ মনে হয় পৃথিবীতে পাঠান। যাদের কল্যাণের হাতগুলো কেউ দেখতে পায় না। তাই মৃত্যুর পরেও তাঁর মুজিব ভাই ও তাঁর প্রিয় ভাবীর মেয়ে ছাড়া কেউ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাননি। নিজেকে এমনভাবে ইতিহাসের পাতা থেকে দূরে রেখে ইতিহাসের জন্য ক’জন কাজ করে যেতে পারেন! তাঁকে স্যালুট জানানোর যোগ্যতাও কি আমরা রাখি? তবে নতুন প্রজন্মকে বলব ইতিহাসের মাটি খুঁড়ে তোমরা স্মরণ করো এইসব মানুষকে। এরাই তোমাদের হৃদয়ে ও ত্যাগে ধনী হতে সাহায্য করবে। [email protected]
×