ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিপীড়ক নয় সেবক

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

নিপীড়ক নয় সেবক

পেশাগত অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার আর যাই হোক দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে না। সে কারণেই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ দমন, সন্ত্রাস মোকাবেলা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পেশাদার, দক্ষ, জনবান্ধব এবং জবাবদিহিমূলক বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন- এ মূলমন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে জননিরাপত্তা বিধান এবং জনবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজন আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন। সেবা প্রত্যাশী মানুষকে স্বল্পতম সময়ে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান করে জনগণের আস্থা ও ভালবাসা অর্জন করা জরুরী। কিন্তু সবসময় তা হয়ে উঠছে, তা নয়। বরং মূলমন্ত্রকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি। জাতির প্রত্যাশা জনগণের সেবক পুলিশের প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম ও জনসেবার মহান আদর্শকে সমুন্নত রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেন। সত্য যে, একটি পেশাদার, দক্ষ ও জনবান্ধব পুলিশ গণতান্ত্রিক সমাজের দর্পণ। একটি দেশের উন্নয়ন কর্মসূচী সার্বিকভাবে বাস্তবায়নের অন্যতম শর্ত হলো স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আর এই পরিস্থিতি নির্ভর করে একটি সুশৃঙ্খল দক্ষ পুলিশ বাহিনীর ওপর। অবশ্য বাংলাদেশে পুলিশ পূর্বের যে কোন সময়ের থেকে অত্যন্ত শৃঙ্খলা আর দক্ষতার সঙ্গে সমাজে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে সদা সচেষ্ট রয়েছে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। পুলিশের ভূমিকা মূলত আইনের রক্ষক তথা জনগণের সেবকের। কিন্তু বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে এর বিপরীত। এর অন্যতম কারণ, এদেশের পুলিশ বাহিনী ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের উত্তরাধিকারই বহন করে চলেছে। ব্রিটিশ শাসকরা ওই নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করেছিল পরাধীন জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে দমিয়ে রেখে নির্বিঘেœ শাসন কাজ পরিচালনার উদ্দেশ্যে। আজকের যুগে এ আইন অচল। তাই আইনটির আমূল পরিবর্তন ছাড়া জনগণের সেবকে পরিণত হওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে বলেছেন, পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের সেবা করাই তার কাজ। হওয়া উচিত তাই-ই। আর তা হতে হলে পুলিশকে জনগণের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। পুলিশকে স্বাধীন পথে আইনের নিজস্ব গতিতে কাজ করতে দিতে হবে। তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা জরুরী। এমনকি মাঠপর্যায়ের পুলিশের নিয়োগ হওয়া উচিত কেন্দ্রীয়ভাবে। পুলিশের নিম্নপদে শিক্ষিত জনবল নিয়োগ না হলে অপরাধের মাত্রা বাড়তে থাকবেই। অসাধু পুলিশ সদস্যদের দাপট এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তারা অপরাধ দমনের পরিবর্তে নিজেরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পোশাক পরে এবং সাদা পোশাকে তারা চাঁদাবাজি এবং ছিনতাই করে, তল্লাশির নামে জনগণকে হয়রানি করে। পুলিশের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য, ছিনতাই চুরি ইত্যাদি মামলা দিয়ে এবং নির্যাতন করে অর্থ আদায় করা হয়। পুলিশের এমন অপকর্মের বহু অভিযোগ এখন তদন্তাধীন এবং বিচারাধীন। তবে বিভাগীয় এসব তদন্ত সম্পর্কে জনমনেও নানা প্রশ্ন রয়েছে। পুলিশের অপরাধ এবং অপরাধী পুলিশকে কঠোরভাবে দমন করা হয় না। ফলে পুলিশের ভাবমূর্তি অনুজ্জ্বল এবং জনমনে নেতিবাচক ধারণা প্রকট হয়ে ওঠে। পুলিশের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প না থাকলেও সে কাজটি যথাযথভাবে পরিচালিত যে হচ্ছে না, তা মাঠপর্যায়ের পুলিশী আচরণে প্রমাণিত। গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ এখনও পুলিশী নির্যাতনকে ভয় পায়। তাদের কাছে পুলিশ এক মূর্তিমান আতঙ্ক। পুলিশ সম্পর্কে এমনিতেই প্রবাদ রয়েছে যে ‘বাঘে ছুঁলে ছয় ঘা, পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা।’ এই অবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরী। এটা বাস্তব যে, পুলিশের রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা পর্যাপ্ত যানবাহন নেই, জনবল সঙ্কটও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মতো আমরাও চাই পুলিশ যথাযথই জনগণের বন্ধু হয়ে উঠুক এবং সেবকের হাত বাড়িয়ে দিক। মানবাধিকার ও মানবিক দিকগুলোও হোক গুরুত্ববহ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে পুলিশ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, স্বদেশেও যেন তাই করে- এই প্রত্যাশা চিরকালের।
×