ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কখনও দেবতা, কখনও-

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

কখনও দেবতা, কখনও-

আদীব মুমিন সারাদিন বিছানায় শুয়েছিল সিমা, শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে। সন্ধ্যায় ফিরছে আলো, প্রতিদিনের মতো আজ আর দরজা খুলতে যায়নি সিমা। ব্যাগটা রেখেই আলো সিমার পাশে গিয়ে বসল, মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল কেমন লাগছে? একটু ভাল, উত্তর দেয় সিমা। পরক্ষণেই সিমা প্রশ্ন করে আমার কিছু হবে না তো! আমি কি মা হতে পারব, আমার নারী জীবন কি সার্থক হবে? কিছু হবে না বলে অভয়বাণী দেয় আলো। কালই তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। পরের দিনই হাসপাতালে ভর্তি হয় সিমা। ডেলিভারি কেস। কিছুক্ষণ পরই ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে ঢোকেন। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আলো। দেড় ঘণ্টা পরে ডাক্তার বাইরে এসে আলোকে ডাকেন, বলেন অপারেশন সাকসেসফুল, আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। খুশিতে মন ভরে যায় আলোর, কিছু না ভেবে জড়িয়ে ধরে ডাক্তারকে বলে আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। ডাক্তারদের দেবতাতুল্য ভাবা হয়। কিন্তু যখন সেই ‘দেবতা’ অসহায় গরিব রোগীদের পেয়ে সামান্য কিছু অসুখের জন্য বেশি বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে বিরাট ওষুধের লিস্ট ধরিয়ে দেন, যেটাকে বলে প্রেসক্রিপশন। তখন সেই দেবতারাই আবার হয়ে যান কসাই বা ডাকাত। আমাদের মতো গরিব দেশে হাসপাতালের সংখ্যা কম। ডাক্তারদের সংখ্যা কম যেমন সত্য তার চেয়ে বড় সত্য হলো ডাক্তাদের সেবা দেয়ার মানসিকতা কম। সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৫ অনুযায়ী প্রতি শয্যার বিপরীতে ১৬৫২ রোগী এবং প্রতিজন ডাক্তারের বিপরীতে ২১৬৬ জন করে রোগী আছেন। আমরা জানি এ পরিসংখ্যান ভাল স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য খুবই নগণ্য। তারপরও আমরা এটা দিয়েই আরও সুন্দর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারি শুধু একটু মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে। একজন ডাক্তার যখন একটি রোগীর সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করেন, একটু হাসি দিয়ে অসুখের কথা জিজ্ঞেস করেন তখন রোগী অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু তা না করে যখন ডাক্তাররা ঘড়ির কাঁটার মিনিট হিসাব করে, ভিজিট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ঘণ্টায় ১৫ জন করে রোগী দেখেন তখন রোগী সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা বরং ডাক্তারদের কসাই বলে গালি দিতে দিতে আরও অসুস্থ হন। তাই এতসব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কিছু স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সরকার আরও সুন্দর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারেন। সেগুলো বর্ণনা করা হলো- স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার যেসব নীতিমালা গ্রহণ করতে পারেন। 0 যে সকল ডাক্তার চেম্বারে রোগী দেখেন তাদের রোগী দেখার সময় এবং ভিজিটের ওপর নীতিমালা প্রণয়ন করা। এতে করে অসাধু ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য কমবে। 0 যে সকল কোম্পানির ওষুধ গুণগত মানে উত্তীর্ণ নয় তা বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া এবং ওষুধের মূল্যের ওপর নজরদারি করা। 0 সরকারী হাসপাতালে ডাক্তারদের পূর্ণ সময় উপস্থিতি নিশ্চিত করা। 0 সরকারী ছুটির দিবসে রুটিন করে ডাক্তারি সেবা প্রদান করা। 0 অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারদের দিয়ে গরিব অসহায় রোগীদের জন্য অল্প খরচে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মেডিক্যাল টিম তৈরি করা। 0 বিভিন্ন স্কুল-কলেজে প্রাথমিক চিকিৎসার ওপর সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করা। 0 জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। 0 চিকিৎসা বিজ্ঞান বই মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্য তালিকাভুক্ত করা। 0 প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা। 0 প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। এসব নীতিমালা গ্রহণ করার পাশাপাশি আমাদের জনসাধারণের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবাকে উন্নত করতে পারবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×