ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থীদের দলে ভিড়িয়ে ঘাতক পাঠাচ্ছে জিহাদী নেতারা

ইউরোপে আইএস স্লিপার সেল

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

ইউরোপে আইএস স্লিপার সেল

ইউরোপ জুড়ে জিহাদী স্লিপার সেল (গুপ্ত ঘাতকচক্র) গড়ে তোলার জন্য সন্ত্রাসী দলগুলো অভিবাসীদের বিশাল দলকে ক্রমশ কাজে লাগাচ্ছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন। ইসলামিক স্টেট (আইএস) জিহাদীরা ভুয়া পাসপোর্টসহ সন্ত্রাসীদের ইউরোপে পাঠাতে অভিবাসী সঙ্কটকে কাজে লাগাচ্ছে। তারপর সন্ত্রাসীরা এসব পাসপোর্টের সাহায্যে যুক্তরাজ্যে অনুপ্রবেশ করতে পারে এ আশঙ্কা ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। যুক্তরাজ্য ও অন্যত্র আঘাত আনার লক্ষ্যে ইসলামিক স্টেট জিহাদী সেলগুলোকে অলক্ষ্যে ইউরোপে ঢোকাতে বিশাল অভিবাসী বহরকে কাজে লাগাচ্ছে। অভিবাসীরা প্রধানত ভুয়া সিরীয় ও ইরাকী পাসপোর্টে চলাচল করছে। এসব পাসপোর্ট এতই আধুনিক যে, সত্যিকারের শরণার্থী ও সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা প্রায় অসম্ভব। এ উদ্বেগ ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুড়ে ছড়িয়ে পড়া শরণার্থী সঙ্কটকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউরোপীয় নেতাদের ওপর চাপ বাড়াবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ জুড়ে সিøপার সেল গঠন করা হচ্ছে। আইএস কমান্ডারস তাদেরকে পূর্ণ প্রশিক্ষণ ও হামলার হুকুম দিয়ে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে ফেরত পাঠিয়েছে। সিরিয়ার আইএসের শক্তিশালী ঘাঁটি রাকা থেকে এ কৌশল ছড়ানো হচ্ছে। রাকাতেই সম্ভাব্য রিক্রুটদের কাজের কথা বুঝিয়ে দিয়ে নতুন পরিচয়পত্র দেয়া হয়। এর অর্থ এই যে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারিতে রয়েছে এমন সন্দেহভাজনরা হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। একই সময়ে ইইউর অন্যতম উর্ধতন কর্মকর্তা একথা জানান যে, ইউরোপে আসছে এমন প্রতি ১০ অভিবাসীর মধ্যে ৬ জনই অর্থনৈতিক অভিবাসী এবং তাদের আশ্রয় চাওয়ার কোন অধিকার নেই। ইউরোপিয়ান কমিশনের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্র্যানস টিমারম্যানস বলেন, ইইউতে আসছে এমন শরণার্থীদের বেশিরভাগই যুদ্ধ বা নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে পালাচ্ছে না এবং তাদের বহিষ্কার করা উচিত। যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করার সুযোগ পেতে সন্ত্রাসীরা শরণার্থী সঙ্কটকে কাজে লাগাচ্ছে এমন তথ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা বা না থাকা প্রশ্নে অনুষ্ঠেয় গণভোটের প্রাক্কালে সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে। ডাউনিং স্ট্রিট এখন ২৩ জুন এ গণভোট অনুষ্ঠানের কথা ভাবছে। ফরাসী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্দ কাজেনেইড সোমবার সতর্ক করে দেন যে, আইএস ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়াতে চুরি করা দলিলপত্র ব্যবহার করে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরির এক শিল্পই গড়ে তুলেছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার সরকারী দফতরগুলো দখল করার পর সন্ত্রাসী দলটি হাজার হাজার শূন্য সিরীয় পাসপোর্ট এবং অন্তত একটি পাসপোর্ট প্রিন্টিং মেশিন সংগ্রহ করেছে। কমন্স সভার হাউস এ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান কিথ ভ্যাজ বলেন, কমিটি গ্রীক রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে, ভুয়া সিরীয় পাসপোর্ট চিহ্নিত করার মতো প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি গ্রীসের নেই। ইইউর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন এমন ব্যক্তিরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সন্ত্রাসীদের ইউকেতে আসার পথ বন্ধ করার একমাত্র নিশ্চিত পথ হলো ইইউ থেকে ব্রিটেনের সরে আসা এবং সীমান্ত পার হওয়ার ওপর আরও কড়াকড়ি আরোপ করা। শরণার্থী সঙ্কট ধর্মান্ধদের গোয়েন্দা নজরদারি ফাঁকি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ দেবে এ নিয়ে নবেম্বরের প্যারিস হামলার পর থেকে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঐ ভয়াবহ বন্দুক ও আত্মঘাতী হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত দু’জন ভুয়া সিরীয় পাসপোর্টে ইউরোপ প্রবেশ করেছিল। এটিও আশঙ্কার বিষয় যে, ইউরোপের অন্যতম দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বেলজীয় নাগরিক আব্দুল হামিদ আবাওদ ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গ্রীসে আগত হাজার হাজার শরণার্থীর মধ্যে মিশে গিয়ে সিরিয়ায় ফিরে যেতে সমর্থ হয়। সোমবার ইউরোপোলের এক রিপোর্টে সতর্ক করে দেয়া হয় যে, যুক্তরাজ্য বা অন্যান্য দেশে ‘বিশেষ বাহিনী’ ধাঁচের হামলা চালানোর লক্ষ্যে যোদ্ধাদের প্রস্তুত করতে ইইউ ও বলকান অঞ্চলের চারদিকে সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলছে। -টেলিগ্রাফ অনলাইন
×