ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;আয়নাল হোসেনের সাক্ষ্য

রাজাকাররা আমার বাবাকে পঙ্গু করে দেয়, পরে তিনি মারা যান

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

রাজাকাররা আমার বাবাকে পঙ্গু করে দেয়, পরে তিনি মারা যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামালপুরের আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৭তম সাক্ষী মোঃ আয়নাল হোসেন ও ১৮তম সাক্ষী মোঃ আব্দুল আজিজ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে ১৭তম সাক্ষী রাজাকাররা আমার বাবা আইযুব আলী ফকিরকে নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেয়। ১৪-১৫ বছর পরে তিনি মারা যান। ১৮তম সাক্ষী একাত্তরে জামালপুরের পিটিআই ক্যাম্পে রাজাকার নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা সেই ঘাটে গিয়ে ভাসমান লাশটিকে তুলে আনি। এবং নুরুল আমিন মল্লিকের লাশটি দাফন করি। সাক্ষীদের জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় সাক্ষীকে সাক্ষ্যদানে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি পক্ষে ছিলেন আব্দুস সুবহান তরফদার। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারাধীন এমদাদুল হক ওরফে টাক্কাবালী (৮০) মারা গেছেন। প্রসিকিউশনের ১৭তম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, মোঃ আয়নাল হোসেন। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৯ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-বনপাড়া, থানা ও জেলা- জামালপুর। আমি বর্তমানে কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৪/১৫ বছর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবা আইয়ুব আলী ফকির আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রী হোস্টেলের নাইট গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন তিনি আলবদর বাহিনীর কার্যকলাপের খবরাখবর মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করতেন। একাত্তরের ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে আসামি মোঃ আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আমাদের বাসায় এসে বাবাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা আমার বাবাকে ওই কলেজের হোস্টেলের মাঠের দক্ষিণ পাশের একটি টিনের ঘরে আটকে রেখে তাকে নির্যাতন করে। আমার বাবাকে উদ্ধার করার জন্য আমি আশেক মাহমুদ কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল আজিজ সাহেব, আলবদর কমান্ডার মোঃ আশরাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারীর কাছে গিয়ে আমি তাদের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকািট করে বাবাকে ছেড়ে দিতে বলি। আমার বাবাকে উক্ত টিনের ঘরে আটক রেখে আলবদর বাহিনীর লোকেরা নির্যাতন করে হাত-পা ভেঙ্গে রক্তাক্ত জখম করে ৭-৮ দিন পর ছেড়ে দেয়। উক্ত নির্যাতনের কারণে আমার বাবা দীর্ঘদিন প্রায় পঙ্গু অবস্থায় থেকে আনুমানিক ১৪-১৫ বছর পূর্বে তিনি মারা যান। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামির মৃত্যু ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারাধীন এমদাদুল হক ওরফে টাক্কাবালী (৮০) মারা গেছেন। সোমবার রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, ৮০ বছর বয়সী এমদাদুল গত ৭ জানুয়ারি থেকে কারা তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার রাত সোয়া ১টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
×