ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইটিইউর সিদ্ধান্ত

আগামী এক দশক বিনামূল্যে সবার জন্য ইন্টারনেট

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

আগামী এক দশক বিনামূল্যে সবার জন্য ইন্টারনেট

ফিরোজ মান্না ॥ আগামী এক দশক সবার জন্য ইন্টারনেট বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়ন-আইটিইউ। আইটিইউ সদস্যভুক্ত ১৯০টি দেশ এতে সম্মতি দিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান আইটিইউ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে এটি এখনও আইনে পরিণত হয়নি। সিদ্ধান্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আগামী বৈঠকে আইনে পরিণত করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। জানা গেছে, ২০০৫ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯০ জাতির বিশ্ব তথ্য সমাজ সম্মেলনে (ডব্লিউএসআইএস) প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটসেবার নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। সেই সঙ্গে চাহিদা ও ব্যবহারকারীদের আচরণের ওপর ভিত্তি করে প্রতি দশ বছর পর পর নীতিমালাটি পুনর্নিরীক্ষণেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০০৫ সালের পর এক দশক পার হয়ে ২০১৫ সালে এসে ইন্টারনেটসেবার বিষয়ে নীতিমালার পুনর্নিরীক্ষণ করা হলো। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫ সালের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সফল হয়েছে। এখন যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটা আগামী এক দশকের জন্য নেয়া হয়েছে। ইন্টারনেটসেবা বেসরকারী খাতের তত্ত্বাবধানে সবার জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত রাখার বিষয়েও সুপারিশ করা হয়। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বের কয়েকটি দেশের সরকার ইন্টারনেটসেবা স্থানীয়করণের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা ইন্টারনেট সোসাইটির (আইএসওসি) কাছে ইন্টারনেটে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক নীতির দাবি জানিয়েছে। আইএসওসি একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যা ইন্টারনেটে কন্টেন্টের মান, এ বিষয়ক শিক্ষাব্যবস্থা ও নীতিনির্ধারণে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৯২ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশগুলোর এ দাবি মেনে নিলে বৈশ্বিক ইন্টারনেট চিত্রে অসঙ্গতি দেখা দিতে পারে। ইন্টারনেটসেবা স্থানীয়করণ করা হলে ইন্টারনেটের বৈশ্বিক উন্নয়নে বিঘœ ঘটবে। তখন আর সেবাটি বিশ্বব্যাপী থাকবে না। নিয়ন্ত্রণ হবে ইন্টারনেট। মানুষ স্বাধীনতা হারাবে। যেখানে বিশ্বের ১৯০টি দেশ ইন্টারনেট বিনামূল্যে দেয়ার জন্য একমতে পৌঁছেছে, সেখানে কয়েকটি দেশ এমন কাজ করলে তা আইটিইউ’র সিদ্ধান্তের পরিপন্থী হবে। আইএসওসি’র বৈশ্বিক ইন্টারনেট নীতির সিনিয়র ডিরেক্টর কনস্ট্যান্স বোমেলায়ের বলেন, যেহেতু আমাদের জীবনের সর্বস্তরেই ইন্টারনেটের প্রভাব রয়েছে, কাজেই তথ্যসমাজ গঠন ও এর নীতির বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সম্মেলনে ইতিবাচক সাড়া মেলায় আশা করা যায়, ইন্টারনেটের মাধ্যমেই যেহেতু এখন বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে, কাজেই এ সেবার বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে। এদিকে জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামী এক দশকে সবার জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেটসেবা উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্তে পৌঁছানো খুব একটা সহজ ছিল না। জাতিসংঘে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় আলাপ-আলোচনা হওয়ার পরই এমন একটি বড় সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে। ডব্লিউএসআইএস’র সদস্যরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে বিভিন্ন সরকারের প্রতিনিধি, আইএসওসিসহ বেসরকারী অংশীদারদের মতামত যাচাই করা হয়। এতে ইন্টারনেটে প্রবেশযোগ্যতা, মানবাধিকার ও মুক্তমত, ইন্টারনেট গবর্ন্যান্স ও ইন্টারনেট নিরাপত্তাÑ এই চারটি নীতি মেনে চলতে বলা হয়েছে। তবে প্রকাশিত প্রস্তাবটি এখনও আইনে পরিণত হয়নি। সম্মেলনের ‘ফল’ হিসাবেই একে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরবর্তী বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত আগামী এক দশকে ইন্টারনেটসেবা কেমন হবে, তা এতে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট গবর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে বহু-অংশীদারিত্ব ও তিউনিস এজেন্ডার ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে প্রস্তাবে। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তকেই ‘তিউনিস এজেন্ডা’ বলা হয়, যাতে লাইটওয়েট ইন্টারনেট গবর্ন্যান্স ও ইন্টারনেট গবর্ন্যান্স ফোরাম গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে অংশীদারদের বার্ষিক বৈঠকের কথাও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে প্যারিস হামলার পর বেশ কয়েকটি দেশের সরকার ইন্টারনেটসেবার বিভিন্ন সাইট নিজ নিজ দেশে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। নিষিদ্ধ করা দেশগুলোর মধ্যে চীন ও ফ্রান্স অন্যতম। চীনে উইকিপিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয় প্যারিস হামলার পর পরই। গত ১৩ নবেম্বর প্যারিস হামলার পর ফ্রান্সে টর ও ফ্রি ওয়াইফাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। টর হলো এমন একটি ফ্রি সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজের অবস্থান ও পরিচয় গোপন রেখেই ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট ব্রাউজ করতে পারেন। বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে ইন্টারনেটসেবার অনেক মাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ইন্টারনেটসেবার পুনর্নিরীক্ষণের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
×