ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাবমূর্তি উদ্ধারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে পুলিশ সপ্তাহ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

ভাবমূর্তি উদ্ধারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে পুলিশ সপ্তাহ শুরু

শংকর কুমার দে ॥ এই সময়ে পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধার ও উজ্জ্বল করাই হচ্ছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলার করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে এবারের ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬ তে। কর্তব্যরত অবস্থায় প্রতিটি পুলিশ যে জনগণের বন্ধু বা সেবক সেই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে পুলিশ সদস্যদের ভাবমূর্তি উদ্ধারের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। অপরদিকে পুলিশ সদস্যদের জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, অপরাধ দমন করে নিরীহ, নির্দোষ সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে পুলিশ সদস্যদের প্রশংসায় উজ্জ্বল ভূমিকার দাবিদার বানানোর শপথে বলীয়ান করার যাত্রা নিয়ে শুরু হয়েছে এবারের পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্ব¡ল করতে এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রধান আকর্ষণ তৈরি করা হয় কোন নারীর নেতৃত্বে প্যারেডের কমান্ডের দায়িত্ব পালনের মতো সাহসী ভূমিকার পর্ব উপহার দেয়ার মধ্য দিয়ে, যেটা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাসে এটাই প্রথম ও নজিরবিহীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬ উদ্বোধনীর সময়ে মাঠে পৌঁছালে সম্মিলিত প্যারেড তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানোর মাধ্যমে স্বাগত জানানোর নেতৃত্ব দেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার। গত বছর পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে উপ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন একজন নারী। এবার অধিনায়ক হিসেবে কোন নারীকে দায়িত্ব দেয়াকে লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। অধিনায়ক হিসেবে এসপি শামসুন্নাহারের নেতৃত্বে এ প্যারেডের মধ্য দিয়েই শুরু হয় পুলিশ সপ্তাহের কার্যক্রম। এটা পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধার ও উজ্জ্ব¡ল করার ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সপ্তাহের আগে পুলিশের ভাবমূর্তির প্রশ্নে এ বছরের শুরুটা মোটেই শুভ নয়। চলতি মাসে পুলিশের ভাবর্মূতি মারাত্মক ক্ষুণœ হওয়ার অভিযোগ ওঠে বিপদগামী কিছু উশৃঙ্খল পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার রাস্তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী এবং এ ঘটনার ৫ দিন পর সায়েদাবাদে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভাগের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের হাতে নির্মম নির্যাতনসহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগের কারণে পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষণœ হয়। পুলিশ সপ্তাহের আগে পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সদস্যদের অসাদাচরণের প্রশ্নবানে জর্জরিত হন এবং কিছু সংখ্যক পুলিশের জন্য ভাবমূর্তি ক্ষণœ হওয়ার কথা স্বীকার করেন পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক। কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের কারণে গোটা পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করা সঙ্গত নয় বলে বিবৃতি প্রদান করে পুলিশ সদর দফতর। কোন ব্যক্তির (পুলিশ) সদস্যের দায় নিবে না পুলিশ বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম-কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম। পুলিশের ভাবমূর্তি যখন এ অবস্থায় পৌঁছেছে তখনই পদক্ষেপ নেয়া হয় পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্ব¡ল করার নেয়া হয় পুলিশ সদস্যদের জন্য কাউন্সিলিং কার্যক্রম। পুলিশ বাহিনীর দেড় লক্ষাধিক সদস্যদের মধ্যে কিছু সংখ্যক উশৃঙ্খল, দুর্নীতিবাজ, বিপদগামী পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন, নিপীড়ন, ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়। তারপরও এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিগত দিনে যারা জীবন দিয়ে মানুষের জানমাল রক্ষা করেছেন, বিশেষ করে সহিংস রাজনৈতিক মোকাবেলা করা পুলিশ সদস্যদের ভুয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায়’ ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জীবন দিয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৬ সদস্য। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ৯১ দিন আপনারা ধৈর্যের সঙ্গে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- মোকাবিলা করেছে পুলিশ সদস্যরা। শুধু তাই নয়, গত বছর রাজধানীর মিরপুরে ও সাভারের আশুলিয়ায় দুই পুলিশ সদস্যকে কর্তব্যরত অবস্থায় কুপিয়ে খুন ও কয়েকজনকে গুরুতর আহত করেছে জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যরা। যেসব পুলিশ সদস্য সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে জীবন দিয়েছেন এবং ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বীরত্ব দেখিয়েছেন তাদের মধ্যে এবারের পুলিশ সপ্তাহে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজারবাগে ১০২ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক, সাহসিকতা ও সেবা এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক-সাহসিকতা ও সেবা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ছয়জনকে দেয়া হয় মরণোত্তর পুরস্কার। এ ধরনের পুরস্কার ও পদক পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রমের নতুন উদ্যোম, সাহস জুগিয়ে সেবার মানসিকতার পথকে সুগম করবে। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে সারাদেশের জেলা, মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ থেকে আগতে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলমান পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি দিনেই আলোচনা, সেমিনারসহ নানা ধরনের যেসব কর্মসূচী রয়েছে তাতে পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধার ও উজ্জ্বল করার বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, অপরাধ দমন ও পুলিশকে জনগণের বন্ধু বা সেবকের ভূমিকা পালনের বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, মাদকপাচার, চোরাচালান, নারী-শিশু পাচার প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীকে আরও সক্রিয় করার বিষয়ে আলোচনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মানুষের জানমাল রক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সদাচারণ ও মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশের প্রতিটি সদস্যের প্রতি ইতোমধ্যেই কাউন্সিলিং শুরু করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পুলিশ প্রশাসনে নতুন ইউনিট গঠন করাসহ নানামুখী কার্যক্রম হাতে নেয়ার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এজন্য পুলিশের জনবল বৃদ্ধি, বিশেষায়িত ইউনিট গঠন, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখে পুলিশ বাহিনীকে জনকল্যাণমুখী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে পুলিশ সপ্তাহ এগিয়ে নেয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে।
×