ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুল্কনীতি সংস্কারে অর্থমন্ত্রী পরামর্শ চাইলেন ব্যবসায়ীদের কাছে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

শুল্কনীতি সংস্কারে অর্থমন্ত্রী পরামর্শ চাইলেন ব্যবসায়ীদের কাছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জনবান্ধব করতে কাস্টমসকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিজিটাল কাস্টমসের পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে স্বচ্ছতা, সমতা ও গুণগত সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে। শুধু তাই নয় এর মাধ্যমে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মনে করেন, যেগুলো সমাজের জন্য ভাল নয়, দুশ্চরিত্রের সূচনা করতে পারে কিংবা ইন্ধন যোগাতে পারে তা প্রতিরোধ করতে পারে কাস্টমস বা শুল্কবিভাগ। এজন্য কাস্টমসকে আরও বেশি শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। তাই আগামী মে মাসে নতুন শুল্কনীতি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস-২০১৬ পালন উপলক্ষে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া এনবিআরের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেনÑ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ও এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী বলেন, শুল্কনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মতামত নেয়া প্রয়োজন। তবে এখনও অনেক সময় আছে, আপনারা মতামত দেন। তিনি বলেন, আগামী মাস থেকে নতুন বাজেটের কাজ শুরু হবে। তাই আপনারা (ব্যবসায়ী) এখন থেকেই আপনাদের পরামর্শগুলো দিতে থাকেন। এ পরামর্শগুলো অর্থমন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। মুহিত বলেন, বিশ্ব যখন মুক্তবাজার অর্থনীতির স্বপ্ন দেখছে, তখন ভাবতে হবে, শুল্ক বিভাগের কি কাজ রয়েছে। যতই আমরা মুক্তবাজারের দিকে যাব, ততই শুল্ক বিভাগের কাজ কমে যাবে। কিন্তু শুল্কের নির্দিষ্ট যে ক’টি ক্ষেত্র রয়েছে, তাতে আরও বেশি নজরদারি ও শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আদায় সহজ ও বিরোধ মীমাংসা করতে এডিআর সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সুযোগটি কেন গ্রহণ করা হয়নি ব্যবসায়ী ও করদাতাদের প্রশ্ন করে মন্ত্রী বলেন, সুযোগটি গ্রহণে কি অসুবিধা, কেন সুযোগটি নিচ্ছেন না? তবে প্রক্রিয়াটিকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে এনবিআরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সুযোগটি গ্রহণ ও প্রচার করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন অর্থমন্ত্রী। এর মাধ্যমে কাস্টমসের প্রোগ্রেসিভ এনগেজমেন্টের যথেষ্ট প্রসার ও রাজস্ব আদায় বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশীয় শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে শুল্কনীতি করতে হবে। রাজস্ব আহরণের নামে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী নিজে ব্যবসা করেন না, কিন্তু ব্যবসাকে গুরুত্ব দেন। ড. মসিউর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ যাতে বিনিয়োগে আসে, সেদিকে খেয়াল রেখে শুল্কনীতি করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিমানবন্দর থেকে আজও (গতকাল) ৫০ থেকে ৬০ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। এটা কিছুই না। এর আড়ালে বড় ধরনের স্বর্ণের চালান চলে যাচ্ছে। জাতীয়ভাবে আমাদের এটি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশকে চোরাচালানের দেশ হতে দেয়া যাবে না। এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, বর্তমানে ব্যবসায়ীদের দুটি বিষয় ক্যানসার হয়ে আছে। এর একটি ৬০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যাংক এ টাকা পায়। আর একটি হলো ব্যবসায়ীদের কাছে ৩১ হাজার কোটি টাকা পাবে এনবিআর। তিনি বলেন, কন্টেইনারের মধ্যে দেখা যায় হামার গাড়ি। অথচ ডিক্লেয়ার দেয়া হয় অন্য পণ্যের। ব্যবসায়ীদের এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে পণ্য আনা খুবই লজ্জাজনক। মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কাস্টমসকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজস্ব আহরণ, চোরাচালান নিরোধ, মাদকপাচার রোধ, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের কাস্টমস কার্যক্রম সম্পাদন, বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরিসহ বহুবিধ কাজে কাস্টমসের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। শুল্কায়নে এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্বিক কর্মকা- সুশাসন নিশ্চিত করতে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআরের সেøাগান হলো- জনকল্যাণে রাজস্ব। এদিকে, কাস্টমস দিবসের উদ্বোধন শেষে মঙ্গলবার এনবিআর থেকে সকাল ৮টায় একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি মৎস্য ভবন হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৭৯টি দেশে ‘ডিজিটাল কাস্টমস ঃ প্রোগ্রেসিভ এনগেজমেন্ট’ সেøাগানে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এছাড়া সেমিনারে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে পাঁচজন স্টেক হোল্ডারকে সার্টিফিকেট অব মেরিট প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি কাস্টমসের ১৫ জন কর্মকর্তাকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
×